পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
৭১১ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ভারতে প্রথম মুসলিম বিজয় অর্জিত হয়। বিজিত রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি শিক্ষা বিস্তারের দিকে বিশেষ নজর দেন। মক্তব ও মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শিশু শিক্ষার প্রবর্তন করেন। এ মক্তব ও মসজিদে মুসলিম শিশুর পাশাপাশি হিন্দু শিশুরাও শিক্ষাগ্রহণ করতো। এ সময় থেকেই এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ধারা সৃষ্টি হয়। আর এ শিক্ষাব্যবস্থা সুগঠিত রূপ পায় সুলতানি আমলে (১২১০-১২৭৬)। fateh24.com সূত্রমতে, এ আমলে প্রতিটি ধনী বাড়ির সামনে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব মক্তবে আরবি ও ফার্সি পাঠ দান করার পাশাপাশি হস্তলিপিও শেখানো হতো। হিন্দু শিশুরাও এসব মক্তবে পড়াশোনা করতো। বাংলার শাসকগণ প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয়েও অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এ উপলক্ষে শাসকগণ প্রচুর লাখেরাজ জমি দান করে দিতেন। নওগাঁর মহিসন্তোষ তকিউদ্দিন আরাবী প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার জন্য বরাদ্দকৃত জমিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ প্রতিষ্ঠানের জন্য দানকৃত জমির পরিমাণ ছিল ২৭০০ একর। রাজশাহী জেলার বাঘাতে মাদরাসার জন্য দান করা জমির পরিমাণ ছিল ৪২ টি গ্রাম। এসব মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে লেখাপড়া করতো। ১২৭৮ সালে শারফুদ্দীন আবু তাওয়ামা কর্তৃক সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটি ছিল বাংলার সবচেয়ে বড় মাদরাসা। এসময় মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল আরবি, নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতিক, কালাম, তাসাউফ, সাহিত্য ফিকাহ, দর্শন ইত্যাদি। মোগল আমলে (১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সালে) বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এ পাঠ্যসূচির সাথে সংযুক্তি ঘটে। জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, কৃষি, লোকপ্রশাসন, চারুকলা ইত্যাদি জ্ঞানের এ শাখাগুলো মাদরাসাশিক্ষার সাথে সংযুক্ত হয়। এভাবেই প্রাচীনকালে মাদরাসাশিক্ষার মাধ্যমে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার সোনালী অধ্যয়েরর যাত্রা শুরু হয়।
কিন্তু ইংরেজ আমলে (১৭৫৭-১৯৪৭) পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাদরাসাশিক্ষার পথ সংকুচিত হতে থাকে। শুরু হয় ইংরেজ শাসন। এসময় ইংরেজরা মাদরাসার নামে বরাদ্দকৃত জমি বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে ৮০,০০০ মাদরাসার ভিতরে ৭৮,০০০ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ নিজেদের বাড়িতে, পাড়ায় ও মহল্লায় মক্তব, মসজিদ ও খানকা নির্মাণপূর্বক মাদরাসাশিক্ষার ধারা সচল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে ইংরেজ শাসকদের ষড়যন্ত্র শতভাগ সফল হয়নি। ইংরেজগণ অবশ্য মুসলিম কিছু আইন অফিসার তৈরীর জন্য ১৭৮০ সালে উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতা আলিয়া মাদরাসা। আর আলেম সমাজের উদ্যোগে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেওবন্দের সুবিখ্যাত কওমি মাদরাসা। এ দুই ধারার মাদরাসা উপমহাদেশে সফলভাবে চলতে থাকে সমান্তরালভাবে। এ দুই ধারার বাইরে আরেকটি শিক্ষা ব্যবস্থার ধারণা জন্ম নেয় ১৯১৪ সালে। এ সালে মোহামেডান এডুকেশন এ্যাডভাইজারী কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশে নিউ স্কিম ও ওল্ড স্কিম নামে দু›ধরনের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার ধারণার জন্মে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল ও কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এসব স্কুল ও কলেজে আরবি শিক্ষা, ইসলামী শিক্ষা ও ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। বাংলাদেশের বিশিষ্ট মুসলিম নেতাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনটি অনুষদ আর বারোটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বারোটি বিভাগের মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ এবং আরবী বিভাগ ছিল স্বতন্ত্র দুটি বিভাগ। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলায় শিক্ষাব্যবস্থার মাত্রা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক (তৎকালীন খন্ডকালীন) শিক্ষামন্ত্রী মুসলমান শিক্ষার্থীদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার স্বার্থে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ও বরিশালের চাখার কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। আর এসব প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শিক্ষা পড়া ছিল বাধ্যতামূলক। মূলত মুসলিম নেতারা মুসলমানদের অতীত ধর্মীয় শিক্ষার স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও জ্ঞানপিপাসার তৃপ্তি মেটাতে মসজিদ-মাদরাসার বাইরে ইসলামী শিক্ষার শুভ সূচনা ঘটান। এতে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে ইসলাম শিক্ষিত আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। ১৯৪৭ সালে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা ঢাকায় স্থানান্তর হয়। ১৯৫৮ সালে ১১ মার্চ তদানীন্তন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান এ মাদরাসার জন্য ঢাকার বকশীবাজারে চারতলাবিশিষ্ট ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পাকিস্তান আমলে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে এ মাদরাসার ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। এ মাদরাসার বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হলেন নওয়াব আব্দুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী। ১৯৬৩ সালেIslamic Arabic University commettee এবং ১৯৭৩ সালে মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার ও উন্নয়নে সুপারিশ গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে তার সুযোগ্য নির্দেশনায় মাদরাসাসমূহে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও বহুমুখী পাঠ্যসূচি প্রবর্র্তিত হয়। তাঁর নির্দেশনায় কোরআন-হাদিসের উন্নত গবেষণা লিখন, পঠন ও অধ্যয়নের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। মাদরাসা ও স্কুল কলেজের শিক্ষার ব্যবধান দূর করতে ১৯৮৫ সাল থেকে দাখিলকে এসএসসি এবং ১৯৮৭ থেকে আলিমকে উচ্চমাধ্যমিক সমমানের স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনতার দাবির মুখে মাদরাসা শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নে ২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার ফাজিলকে ডিগ্রী এবং কামিলকে মাস্টার্স মান প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার অধীনে ফাজিলকে ডিগ্রী এবং কামিলকে মাস্টার্সের মান ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আয়োজিত কওমি মাদরাসার আলেম ওলামাদের সঙ্গে এক বৈঠকে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান ঘোষণা করেন।
আলোচনার দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ ইসলামী শিক্ষার ইতিহাস অতি প্রাচীন।এ শিক্ষার ইতিহাস একটি সোনালী আবরণে রচিত। এটি ধর্মপ্রাণ বাঙালি জাতির আত্মা ও অস্তিত্ব উন্নয়নের শিক্ষা। এ শিক্ষার রয়েছে গৌরবগাঁথা তেজোদীপ্ত একটি অধ্যয়। মুসলিমদের জাতীয় চেতনা এবং স্বাধীন পরিচিতির অপরিহার্যতা বিবেচনায় ইসলামী শিক্ষা তাই হাজার বছরব্যাপী তার গৌরব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল গোটা বাংলায়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিল এ শিক্ষা। প্রচন্ড ইসলামবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশরা এ শিক্ষা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেনি। তখন স্কুল-কলেজে এ শিক্ষা ছিল বাধ্যতামূলক । পাকিস্তান আমলেও ইসলামী শিক্ষা ছিল ধারাবাহিক বাধ্যতামূলক বিষয়ের একটি। বাংলাদেশ আমলেও এ শিক্ষা স্বগতিতে এগিয়ে চলে। ইসলামী শিক্ষার স¤প্রসারণে, কোরআন-হাদিসের উন্নত গবেষণা ও বাংলার মুসলিম মানসে ধর্মীয় চেতনা প্রোথিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। (পূর্বে স্বায়ত্তশাসিত মাদরাসা বোর্ড ছিল না)। জাতীয় পর্যায়ে তিনি ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যবস্থা করেন। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে সরকারি জায়গা বরাদ্দ দেন। কাকরাইল মারকাজ মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য সরকারিভাবে জমি বরাদ্দ দেন। হজ পালনের জন্য তিনি সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে কদর ইত্যাদি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। ঐদিন সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করেন। মদ-জুয়া এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ এবং তার জন্য শাস্তির বিধান নিশ্চিত করেন। রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ অবলম্বন ও সাহায্য প্রেরণ করেন এবং ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। মূলত বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন প্রায় বিধ্বস্ত একটি দেশ গঠনের পাশাপাশি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য যে ভূমিকা রেখেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসাযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এযাবৎ ইসলামী শিক্ষা এবং মাদরাসার জন্য যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তা সত্যিই ইসলামপ্রিয় বাঙালির কাছে প্রশংসিত এবং নন্দিত হয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্র একটি আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে সারাদেশের কলেজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে; অনুরূপভাবে সারা বাংলাদেশের ফাজিল এবং কামিল মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দীর্ঘদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য লাগাতার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এই পটভূািমতে প্রধাানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দিয়ে বাংলাদেশে একটি অসম্ভর সাহসী ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তার এ কাজগুলো ধর্মপ্রাণ বাঙালি তৌহিদী জনতার কাছে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হয়েছে। কিন্তু যত সমস্যা হয়েছে স্কুল-কলেজের ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষা নিয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে যে, ২০২২ সালের শিক্ষা কারিকুলামে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতে দশটি বিষয় পড়ানো হবে। সেগুলো হলো: ১. ভাষা ও যোগাযোগ, ২. গণিত ও যুক্তি, ৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৪. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৫. সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, ৬. জীবন ও জীবিকা, ৭. পরিবেশ ও জলবায়ু, ৮. মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, ৯. শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং ১০. শিল্প ও সংস্কৃতি। আর দশম শ্রেণীতে বোর্ড পরীক্ষা হবে মাত্র পাঁচটি বিষয়ে । সেগুলো হলো: ১. বাংলা, ২. ইংরেজি, ৩. গণিত, ৪. বিজ্ঞান ও ৫. সামাজিক বিজ্ঞান। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা থাকবেনা। এটা অত্যন্ত দুঃসংবাদ। অনেকের মতে, ইসলাম বিদ্বেষী মহলের হাত রয়েছে এর পেছনে। উল্লেখ্য, ইসলামী শিক্ষার প্রতি এই মহলের কুদৃষ্টি সৃষ্টি হয় ২০০১ সাল থেকে। এসময়ের তত্ত¡াবধায়ক সরকার ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষাকে ৫০ নম্বরে সংকুচিত করার হীন প্রয়াস শুরু করেন। তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় থাকা সরকারের এ বিষয়টি চিন্তা করার কথাই ছিল না। অথচ তাদের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা চরম ইসলাম বিদ্বেষী কিছু ব্যক্তির ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষার প্রতি গাত্রদাহ শুরু হয়। পরবর্তীতে ধর্মীয় বাঙালি জাতির প্রতিবাদের মুখে তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এরপর ২০১৩ সালে শুরু হয় স্কুলের ইসলামী শিক্ষা নিয়ে নতুন কারসাজি। এসময় ‹ইসলাম শিক্ষা› বইয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম দেয়া হয় ‹ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা›। অথচ হিন্দুধর্ম শিক্ষা ও খ্রিষ্টান ধর্ম শিক্ষা বইতে এরকম নাম দেয়া হলো না। এখানে প্রচ্ছন্নভাবে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষাগ্ধ দুটো নামের মাঝখানে ‘ও’ অব্যয় দ্বারা দুটো ভিন্ন জিনিস বুঝানো হয়েছে। আর উভয়ের মাঝে বিরোধ আছে মর্মে সূক্ষ্ণ একটি কারসাজিরও বীজ বপন করা হয়েছে। কারসাজির এ সূত্র ধরে দুষ্টুচক্রটির পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এ শিক্ষাটিকে পাঠ্যসূচী থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া। একই সূত্রের ফলস্বরুপ কলেজে এ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী শিক্ষা বিষয়টি একটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রূপ পেয়েছে। এতে কলেজের ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকগণ ঐচ্ছিক বিষয়ের একজন গুরুত্বহীন শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রসংখ্যাও এ বিষয়ে আস্তে আস্তে লোপ পেতে পেতে তলানীতে যেয়ে থেমেছে। অথচ ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষেও কলেজগুলোতে মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-সকল শাখার শিক্ষার্থীগণ ইসলামী শিক্ষাকে আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করতো। এমতাবস্থায় মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষায় যদি ইসলামী শিক্ষা না থাকে তাহলে এটা পাঠ্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে বাদ হয়ে যাওয়ার সকল বাঁধা দূর হয়ে গেল বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।
আবহমানকালের বাংলার ইতিহাস এই সাক্ষী দেয় যে, বাংলায় সুফি, দরবেশ ও পীর-মাশায়েখ কর্তৃক প্রচারিত ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই এদেশে ইসলামের প্রসার ঘটেছে। এ শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের মাঝে নীতিবোধ, রুচিবোধ ও নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি হয়েছে। তারা কখনোই জঙ্গিবাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেন নি। তারা ধর্মান্ধ ছিলেন না। তারা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। তাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দলে দলে লোক সেই শিক্ষা গ্রহণ করেছে। সুতরাং আমরা চাই সেই শিক্ষা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়–ক! ধর্মপ্রাণ বাঙালির প্রাণের দাবী হল, স্কুল এবং কলেজে আগের মত ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকুক। বাংলাদেশের শুধু মাত্র পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী বিভাগ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ আছে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও এই দুটি বিভাগ খোলা হোক। দাওরা মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করে দাওরা মাস্টার্সধারী পোস্ট গ্রাজুয়েটদের মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হোক। দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রাণ বাঙালি মনে করেন যে, বাংলাদেশ সবেমাত্র মধ্যম আয়ের দেশে পা রেখেছে। সরকারের এখন টার্গেট ধাপে ধাপে সেটাকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করা। আর এই টার্গেটে পৌঁছাতে মাদরাসায় পড়–য়া লক্ষ লক্ষ তরুণকে বেকার রেখে সে লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। সুতরাং ইসলামী শিক্ষা বন্ধ নয় বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে তার আরো ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া হোক।
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।