পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত মাস ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধ চলছে। একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের স্মরণে রমনায় মাসব্যাপী বইমেলা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম উৎসবে পরিনত হলেও করোনা মহামারির কারণে এবার তার ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে ভাষার মাসে ভাষার উন্নয়ন-ঔৎকর্ষ ও জাতির মননশীলতার প্রশ্নে ফিরে দেখার চিরায়ত চিন্তার কোনো ব্যত্যয় নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই জাতীয় সংস্কৃতি ও চেতনার ভিত্তিমূলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা একটি গ্রন্থের মূদ্রণ বিপর্যয়ের তথ্য উঠে এসেছে। নজরুল গবেষক, জাতীয় অধ্যাপক, একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভ’ষিত ড.রফিকুল ইসলামের লেখা ‘কাজী নজরুল ইসলাম- জীবন ও সৃজন’ নি:সন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত ৪৮ ফর্মার এই বিশাল গ্রন্থের পেছনে নিঢ়:সন্দেহে অনেক অর্থ খরচ করা হয়েছে। কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় জাতীয় কবির জীবনীগ্রন্থ প্রকাশের নামে এসব কি করা হচ্ছে! গ্রন্থটি প্রথম ২০১২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গত বছর এর চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হলেও সেই প্রথম সংস্করণ থেকেই এর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ছত্রে ছত্রে যে অসংখ্য বানান ভুল ও মূদ্রণ প্রমাদ ছিল তা শেষ সংস্করণেও রয়ে গেছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে একজন বরেণ্য লেখক ও জাতীয় অধ্যাপকের লেখা জাতীয় কবির জীবনী গ্রন্থের প্রকাশনার ক্ষেত্রে এমন অবহেলা, অবজ্ঞার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে! একি সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা নাকি নজরুলের বিরুদ্ধে কোনো সুদুরপ্রসারি ষড়যন্ত্র ? এই প্রশ্ন এখন উঠে আসছে।
ইনকিলাব প্রতিবেদক ভুলে ভরা নজরুলকে নিয়ে গবেষণাধর্মী জীবনী গ্রন্থটি হাতে পেয়ে বইয়ের লেখককে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, বই প্রকাশের আগে তাকে জানানো হয়নি, দেখানোও হয়নি। দেশের অন্যতম খ্যাতিমান নজরুল গবেষকের লেখা নিয়ে জাতীয় কবির বিশালাকৃতির গবেষণা গ্রন্থের কোনো কোনো পৃষ্ঠায় অর্ধশতাধিক বানান ভুল থাকার বিষয়টি অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। নজরুল ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাই বলুন, যতই সাফাই গান বা ধানাই-পানাই করুন এ বিষয়ে তারা দায় এড়াতে পারবেন না। জাতীয় কবির নামে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থের প্রকাশনা নিয়ে তাদের এই ব্যর্থতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে বইটির নির্ভুল প্রকাশনা এবং বহুল প্রচার ও বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
কবি নজরুল ইসলাম তৎকালীন বাঙালী হিন্দু-মুসলমান সমাজের জাতপাত ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শাণিত কলম হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। কাব্যে যেমন তিনি ছিলেন বিদ্রোহী, গদ্যেও তিনি একজন মহান সংস্কারকের ভ‚মিকা পালন করেছেন। নজরুলের লেখা ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ এখন আমাদের শিক্ষাক্রমে পাঠ্য নিবন্ধ। তিনি উপেক্ষিত শক্তিকে জাতির মুক্তির লক্ষে সামনের কাতারে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তিনি নিজেই ছিলেন উপেক্ষিত। একটি প্রতিকুল বাস্তবতার মধ্য দিয়েই তিনি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন।স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই কবিকে আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভুষিত করেছিলেন। তিনি আমাদের জাতীয় কবি, জাতির মননশীলতা ও ঐক্যের প্রতীক। তাঁকে চেতনায় ধারণ করেই আমাদের সাংস্কৃতিক দৈন্য ঘুচাতে হবে। তাঁকে অবহেলা-অবজ্ঞা করার প্রবণতা ও পরিনাম অশুভ। আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নজরুল এখনো চরমভাবে উপেক্ষিত রয়েছেন। আমাদের গণমাধ্যম তথা সম্প্রচার মাধ্যমেও নজরুলকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। ভারত যেমন রবীন্দ্রনাথকে, পাকিস্তান যেমন ইকবালকে, ইরান যেমন ফেরদৌসী- খৈয়ামকে, জার্মানী যেমন গ্যেটেকে নিয়ে গর্ব করে, তাদের রচনা ও লেখাকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। একইভাবে নজরুলকেও আমাদের চর্চায় ও আত্মপরিচয়ের অন্যতম প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার বাস্তব ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রেডিও-টিভিতে নজরুলের গান ও কবিতার সম্প্রচার বাড়াতে হবে। আর নজরুলকে নিয়ে লেখা যে কোনো প্রকাশনার ভ্রান্তি ও বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষার দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে অজশ্র ভুল বানানের বই প্রকাশের সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।