২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
কারোনার এই মহাপ্রার্দুভাবেও ক্যান্সার নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা জরুরী । কেননা ক্যান্সার নিয়ে সচেতন থাকা , ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা ও শুরুতেই ক্যান্সার ধরা পড়লে ও যথাযথ চিকিৎসা নিলে আপনি এই মহা দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়। মূলত ক্যান্সার সম্পর্কে বিশ্ববাসিকে সচেতন করার লক্ষ্যেই বিশ্ব ব্যাপি নানা সচেতনতা মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। বর্তমানে একটি জরিপে দেশে বছরে ক্যানসারে মারা যায় প্রায় সোয় লাখ মানুষ। জরিপকারি সংস্থার মতে দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়; যার মধ্যে মারা যায় ৯১ হাজার ৩০০ জন। ক্যানসার সম্পর্কিত অনলাইন ডাটাবেজ গোবোক্যানের এ তথ্যের ব্যাপারে দেশের চিকিৎসকেরা বলছেন, চিকিৎসার স্বল্পতাই এই অবস্থার জন্য দায়ী। এ সমস্যা দূর করতে তাদের পরামর্শ, ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরকারি বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
২০০৮ সালে প্রথম এ দিবস পালন শুরু করে ইন্টার-ন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনেস্ট ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আই অ্যাম অ্যান্ড আই উইল’। এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করবে ইউআইসিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ৯ কোটি ৬ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুরণ করেছে। অথচ মোট আক্রান্তদের ৩০-৫০ ভাগের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এদিকে, ২০১০ সালে ১ দশমিক এক ছয় ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার ক্যান্সারের পেছনে খরচ হয়েছে।
গোবোক্যানের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে এক কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৯শ’ ৫৭ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৯৫ লাখ ৫৫ হাজার ২৭ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে মারা গেছে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭ জন, যা মোট মৃত্যু সংখ্যার ১৮ দশমিক চার ভাগ, কোলোরেক্টাম ক্যানসারে মারা গেছে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭শ’ ৯২ জন, যা মোট মৃত্যুর ৯ দশমিক ২ ভাগ, স্টোমাকের ক্যানসারে মারা গেছে ৭ লাখ ৮২ হাজার ৬শ’ ৮৫ জন, যা মোট মৃত্যুর আট দশমিক দুই ভাগ, লিভার ক্যানসারে মারা গেছে ৭ লাখ ৮১ হাজার ৬শ’ ৩১ জন, যা মোট মৃত্যুর আট দশমিক দুই ভাগ, ব্রেস্ট ক্যান্সারে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬শ’ ৭৯ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৬ দশমিক ছয় ভাগ, ইসোফেগাস (খাদ্যনালী) ক্যানসারে মারা গেছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ ৮৫ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫ দশমিক তিন ভাগ, প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২শ’ ৪২ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৪ দশমিক ৫ ভাগ এবং অন্য ক্যান্সারে ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৪শ ১৭ জন মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৩৫ দশমিক আট ভাগ।
বর্তমানে দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের নিজস্ব কোনও ডাটা নেই। দরিদ্র বা আমাদের দেশে দারিদ্রতার হার বেশি হওয়ায় ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ খুবই কম। এছাড়া সচেতনতার আভাবে এদেশে চিকিৎসকের কাছে যায় অনেক দেরিতে। যা রোগিকে জটিল করে তোলে ।
বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্যানসারের চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি ফলো করা হয়, আমাদের দেশেও এখন সেগুলো ফলো করা হয়। কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুবই কম। আমরা যারা ক্যানসার চিকিৎসা করি তারা দেখি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগিরা চরম মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাদের দেখার যেন কেউ নেই। আর যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সচেতন তারা বেশির ভাগই ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করে সুস্থ জীবন-যাপন করছেন ।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস একটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিপালিত দিবস। প্রতি বৎসর ৪ ফেব্রয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনা দিবস পালন করা হয়। এই দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ক্যান্সার রোগীদের জীবন ধারার মান উন্নয়নে ইন্টারন্যাশানাল ইউনিনে এগেনষ্ট ক্যান্সার-কে সহায়তা করে থাকে।
নতুন সহস্রাব্দে ক্যান্সার প্রতিরোধের অঙ্গীকার হিসেবে ২০০০ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব সম্মেলনে প্যারিস চার্টার দ্বারা প্রথম বিশ্ব ক্যান্সার দিবস প্রতিষ্ঠিত ও শুরু হয়।
কিছু তথ্য-
বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর ৯.৬ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারের কারণে মারা যায় এবং এর সঠিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি দ্বিগুণে পরিণত হবে।
পৃথিবীতে যত সংখ্যক মানুষের ক্যান্সার হয়, তাঁর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সক্ষম।
সারা বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর কারণ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার।
১ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে দায়ী থাকে তামাক, এমনকি ২২ শতাংশ অন্য ক্যান্সারেও আক্রান্তের সঙ্গেও যুক্ত থাকে তামাক।
পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি ফুসফুস, প্রস্টেট, কোলরেকটাল, পাকস্থলী, যকৃৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত স্তন, কোলরেকটাল, ফুসফুস, সারভিকাল এবং থাইরয়েড ক্যান্সার।
ভারতে সবচেয়ে বেশী যেসব ক্যান্সারগুলি হয়, সেগুলি হল স্তন, সারভিকাল, মুখগহ্বরের, ফুসফুস এবং কোলরেকটাল ক্যান্সার।
মূল বিষয়বস্তু ২০১৯-২০২১
৩ বছরের জন্য ‘আই অ্যাম অ্যান্ড অ্যাই উইল’ (আমি আছি এবং আমি থাকব) প্রচারাভিযানের শুরু ২০১৯ সালে। ‘আমি আছি এবং আমি থাকব’ এই অভিযানের মূল লক্ষ্যই হল সরকারি স্তরেরে সচেতনতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্যান্সার সম্পর্কে ধারনা গড়ে তোলা।
আই এম এন্ড আই উইল অর্থাৎ আমি আছি এবং আমি থাকব।
আমরা যেই হই না কেন, প্রত্যেককেই ক্যান্সার রোধে উদ্যোগী হতে হবে, শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, আমরা যাঁদের ভালবাসি, তাঁদের জন্য, সকল বিশ্ববাসীর জন্য। এটা নিজের কাছে নিজেকে প্রতিশ্রতি দেওয়ার সময়।
তিন বছরের প্রচার অভিযান-
যখন কোনও প্রচারাভিযান বেশ কয়েক বছর ধরে চলে তখন জনসাধারণের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার বা প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ বাড়ে। যা বিশ্বব্যাপী সচেতনতার সুযোগ করে দেয়। আপনিও এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন। কারণ একসঙ্গে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।
ক্যান্সার কি ?
ক্যান্সার হল এক সমষ্টিগত রোগের একটি সাধারণ নাম, যেখানে শরীরের কিছু কোষ বিভিন্ন কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অপরিশোধিত ক্যান্সার পার্শ্ববর্তী স্বাভাবিক কলার মধ্যে কিংবা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরফলে সাংঘাতিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি মত্যুু পর্যন্ত হতে পারে।
কারণ:বহু কারণে ক্যান্সার হতে পারে(-শুধুমাত্র একটি কারণেই কোনও মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন না।
শারীরিক কার্সিনোজেনস (ক্যান্সার উৎপাদক), যেমন অতিবেগুনি এবং আয়নাইজিং বিকিরণ
রাসায়নিক কার্সিনোজেনস, যেমন অ্যাসবেস্টস, তামাক, এফ্লাটক্সিন (খাদ্য দূষণকারী), এবং আর্সেনিক (একটি পানীয় জল দূষক)
জৈবিক কার্সিনোজেনস, যেমন নির্দিষ্ট ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী যেমন হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস(এইচপিভি) থেকে সংক্রমণ।
ক্যান্সারের জন্য এজিং বা পক্কতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়াতা ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
সতর্ক সংকেত:
স্তনের আকার ও আয়তনের পরিবর্তন
মূত্র বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন
সারছে না এমন ক্ষত
অস্বাভাবিক রক্তপাত বা শরীরের কোনও খোলা স্থান থেকে রক্ত-ক্ষরণ
ক্রমাগত ওজন হ্রাস ও ক্ষুধা-মন্দা
গিলতে অসুবিধে
আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন
বিরক্তিকর কাশি অথবা একটানা কর্কশ কন্ঠ
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে আপনার কী করা উচিত ঃ
বিভিন্ন ধরণের শাক-সব্জি ও ফল, শিম জাতীয় সব্জি, বাদাম এবং গোটা-শস্য খান।
নিয়মিত শরীর-চর্চা করুন।
অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুন।
নিরাপদ যৌন জীবনযাপন।
সিগারেট, বিড়ি, ধুমহীন তামাক সেবন এড়িয়ে চলুন।
মদ্যপান কমিয়ে দিন।
এইচপিভি ও হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধের টিকা নিন।
পরিচিত পরিবেশজনিত কার্সিনজেনস এড়িয়ে চলুন।
লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
নিয়মিত ক্যান্সারের ও অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করান।
ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য ২০১০ সালে জাতীয় কর্মসূচী, ডায়াাবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং স্ট্রোক (এনপিসিডিএসএস) চালু হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) অন্তর্গত করে মধুমেহ(ডায়াবিটিস), উচ্চ রক্তচাপ ও সাধারণ ক্যান্সারের মত অসংক্রমক রোগের জনসংখ্যা ভিত্তিক স্ক্রিনিং শুরু করা হচ্ছে।
বার্তা-
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দসই ক্যান্সারবিরোধী জীবন যাপন করতে পারেন।
শুরুতেই ক্যান্সার নির্ধারণ করা গেলে জীবন বেঁচে যেতে পারে।
ক্যান্সারের সাথে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের তত্ত্বাবধান করা ক্যান্সার মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারেন।
সঠিক সহায়তা পেলে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষরা আবার কর্ম-জগতে ফিরে আসতে পারেন।
সবাই ক্যান্সার থেকে সুস্থ থাকুন ।
ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার
ক্যান্সার চিকিৎসক,
সরদার হোমিও হল,৬১/সি আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর,ঢাকা।
সেল-০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।