পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে চলমান মেগাপ্রকল্পসহ ছোটবড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই সময়মত শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। ঠিকাদারি চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না করার ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই তেমন কোনো জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়না। অহেতুক সময়ক্ষেপণের ফলে একদিকে প্রকল্প এলাকার মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে ভোগান্তি পোহাতে হয়, অন্যদিকে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্পের খরচ ক্ষেত্র বিশেষে শতভাগ বা তার বেশি বৃদ্ধির নজির রয়েছে। এর ফলে প্রথমত: সময়মত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে না পারায় প্রকল্পের সুফল থেকে জনগণ বঞ্চিত হয়, দ্বিতীয়ত; বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়া ও জনভোগান্তি বৃদ্ধি পায়, তৃতীয়ত: প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়মসীমা বার বার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এর ব্যয়ভার বাড়িয়ে দিয়ে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। অনেক বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক নির্মান করা হলেও কাজের মান হয় অতি নিম্ন। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি ও নকশায় বড় ধরনের ভুল ভ্রান্তি ধরা পড়ারও নজির আছে। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মাসেতুর রেলব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রেও এমন অভিযোগ দেখা গেছে।
গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তায়ন নিয়ে এখনো নানা ধরনের অস্বচ্ছতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। মাতারবাড়ি, পায়রা, সোনাদিয়া ইত্যাদি স্থানগুলোতে সমুদ্র বন্দর বাস্তবায়নের সমীক্ষা চালানো হলেও সবচেয়ে ব্যয়বহুল পায়রা সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের উদ্যোগটি এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। দীর্ঘমেয়াদে এই বন্দর নির্মান ও ড্রেজিংয়ে যে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে পায়রা বন্দরের পলিমাটি অপসারণের খরচ দিয়ে মাতারবাড়ি বে টার্মিনালে দু’টি বন্দর নির্মান করা সম্ভব। তবে স্বল্প মেয়াদি উন্নয়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য ২০১৮ সালে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং চুক্তি অনুসারে ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলে ও ইতিমধ্যে ২ বছর পেরিয়ে এসে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় আরো প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অনুসারে ২ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পটির এক-দশমাংশও বাস্তবায়িত হয়নি। আগামী ২ বছরে বাকি কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ এবং বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের টাকার অপচয় বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালক ও বন্দর অথরিটিকে পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছেন। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় বন্দরের কাজ সমাপ্ত করার সময়সীমা ২ বছর বাড়ানোর পাশাপাশি বাজেট ৩, ৯৮২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪,৫১৬ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এভাবেই বেড়ে যায় প্রায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের সময় ও বাজেট। দেশের প্রতিটি মহাসড়কের লেনবৃদ্ধির প্রকল্প, সেতু, ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে নদী সংস্কারের প্রকল্পগুলো এমন দীর্ঘসূত্রিতা, খরচ বৃদ্ধি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধীরগতি বহুলাংশে দায়ী। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকার গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক সংস্কার ও উন্নয়নে প্রকল্পের প্রাথমিক প্রাক্কলিত ব্যয় ৪১০ কোটি টাকা থেকে কয়েক দফায় ১২গুণ বাড়িয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার পাশাপাশি ২ বছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পটি ১০ বছরেও শেষ করা যায়নি। এটি কোনো সমুদ্রবন্দর বা পদ্মাসেতুর মত জটিল প্রকল্প নয়। শহরের একটি লেক উন্নয়নে রাজউকের এমন খামখেয়ালি এবং বাজেট ও সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থের অপচয় এবং উন্নয়নের সুফল থেকে দশক ধরে মানুষকে বঞ্চিত রাখার কোনো জবাবদিহিতা নেই। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার দায়ভার বহনের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা প্রয়োজন। সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার রেকর্ড থাকা কোনো ব্যক্তিতে অন্যকোনো প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ এবং একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ রহিত করা প্রয়োজন। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত রাজস্বের টাকায় গৃহীত প্রকল্পের সঠিক মান, সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার ও সময়মত বাস্তবায়নের সুফল নিশ্চিত করতে হবে। সময়ক্ষেপণ, জনদুর্ভোগ এবং জনগণের অর্থের অপচয়-দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।