বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ যশোর শহরের ফুসফুস। বহুকাল পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পে নদ খনন শুরু হলেও মাঝপথে থেমে আছে। একটি প্যাকেজের কাজ কোনরকমে চললেও তিনটি প্যাকেজের শহরাংশে খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভৈরব নদের কাজ আটকে আছে ঠিকাদার ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার কারণে। কয়েকদফা চিঠি দিয়েও ঠিকাদারের কোন সাড়া না পাওয়ায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
নদ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেছেন, এ পর্যন্ত যা খনন হয়েছে তা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম অস্বচ্ছতা রয়েছে। অনেক প্রশ্ন রয়েছে নদ অববাহিকার জনগণের। কোথাও ডিজাইন ও মাপ অনুযায়ী খনন হয়নি। মানা হয়নি নদী রক্ষা আইন। অবৈধ উচ্ছেদে প্রশাসনের গড়িমসি মারাত্মক।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) নেতা জিল্লুর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন ভৈরব নদের সীমানা চুরি হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ নদের প্লাবন অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ না করে কোনরকমে খনন করা হয়েছে। তাতে অবৈধ স্থাপনা রয়েই গেছে। তিনি খননে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভৈরব সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মঙ্গলবার জানান, খননের অসচ্ছতা, দুর্নীতি, উচ্ছেদে গড়িমসিসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিনিধি সভা করে কর্মসূচী দেওয়া হবে।
বহু লেখালেখির পর অবশেষে ২৭২ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়। কিন্তু শহরাংশে খনন পুরাপুরি হয়নি। কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে স্বীকার না করলেও এখন বলছেন শহরাংশে খনন আটকে আছে। নদের প্লাবন অনুযায়ী উচ্ছেদ হলে দড়াটানা ব্রিজের দুইপাশে বহু অবৈধস্থাপনা ভাঙা পড়বে। ভৈরবের দুইপাড়ে ব্রিজের দুইদিকে অন্তত ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল বিশাল বিল্ডিং, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট পড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র গরীবশাহ সড়কে কালেক্টরেটের বিপরীতে বেশকিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় ইতিপূর্বে। তাছাড়া কোন বিল্ডিংএ হাত পড়েনি লম্বাহাতওয়ালা প্রভাবশালীদের কারণে।
ভৈরব নদ খননে অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্ত ও বিচারসহ নদী আইনে তটরেখা সীমানা আইন অনুযায়ি অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের কথা, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালের যে বড় ড্রেনটি ভৈরব নদে মিশেছে আর তার উপর গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও মার্কেট ভৈরবের সীমানার মধ্যে রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসন বরাবরের মতো এখনো গড়িমসি করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, প্রকল্পের খনন কাজ স্বচ্ছতার সাথেই হচ্ছে। যদিও তিনি স্বীকার করলেন, শহরাংশের খনন বিলম্ব হচ্ছে। উচ্ছেদের ব্যাপারে তিনি বললেন, একথা ঠিক প্লাবন অনুযায়ী হয়নি তবে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী উচ্ছেদ হয়েছে। নদী কমিশনের একটি কমিটি গঠণ করা হয়েছিল। সেটির কার্যকারিতা নেই।
উল্লেখ্য, ঐহিত্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব নদ আর মাথাভাঙ্গা নদী অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়।
ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুরনদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও হয় সম্প্রসারিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।