Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফজলুল হক-সোহরাওয়ার্দী-নাজিমুদ্দিনের প্রধানমন্ত্রিত্বই বাংলা ভাগের কারণ হলো

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মাঝে মাঝেই মহল বিশেষের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, ভারত বিভাগের জন্য দায়ী কে বা কারা? এই মহল ভারত বিভক্তির জন্য অঙ্গুলী নির্দেশ করে দ্বিজাতিতত্ত্বের দিকে। ভাবখানা এই যে দ্বিজাতিত্ত্ব না হলে তো ভারতভাগের কোনো প্রয়োজন হতো না। আমি বুঝতে পারি না যে, এসব প্রশ্ন কেন তোলা হয়? কোনো কোনো মহল পত্রিকায় Partition নাম দিয়ে বিশেষ সংখ্যাও বের করে। আমার ফের প্রশ্ন, এসব প্রশ্ন কেন তোলা হয়? এসব প্রশ্ন তুলে লাভ কি? বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে গর্বোন্নত শিরে মানুষ বলে, আমরা স্বাধীন জাতি। যদি ৪৭ সালে ভারত বিভক্ত না হতো তাহলে কি বাংলাদেশ স্বাধীন জাতি হিসাবে গর্ব করতে পারতো? তর্কের ছলে যদি বলা হয়, ৪৭ সালে ভারত ভাগ না হতো, তাহলে আমাদের অবস্থা কি হতো? তার আগে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে ভারত ভাগ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, উত্তর-দক্ষিণে বা পূর্ব-পশ্চিমে ভারতকে কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক ভাগ পাকিস্তান। আরেক ভাগ ভারত। প্রকৃতপক্ষে ভারত বিভক্তি বলতে ভারতবর্ষের দুইটি প্রদেশকে বোঝায়। একটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পাঞ্জাব। অপরটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলা। পাঞ্জাব দুই ভাগে ভাগ হয়। একটি পশ্চিম পাঞ্জাব। অপরটি পূর্ব পাঞ্জাব। পশ্চিম পাঞ্জাব পাকিস্তানের ভাগে, আর পূর্ব পাঞ্জাব ভারতের ভাগে পড়ে। অনুরূপভাবে বাংলাও দুই ভাগে ভাগ হয়। একটি পশ্চিমবঙ্গ। আরেকটি পূর্ববাংলা। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের ভাগে, আর পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের ভাগে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পূর্ব বাংলা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বের হয়ে আসে এবং বাংলাদেশ নামে স্বাধীন দেশ হিসাবে আবিভর্‚ত হয়। সুতরাং ভারত ভাগ বলতে পাঞ্জাব এবং বাংলার ভাগকেই প্রধানত বোঝায়। আমরা, বাংলাদেশের মানুষ কি কখনও পাঞ্জাবের বিভক্তি নিয়ে ভাবি? ভাবিনা। কারণ ঐ প্রদেশটি বাংলা থেকে দেড় হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। তাই আমরা ভারত ভাগের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক বলতে বাংলা ভাগের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক নিয়েই মূলত কথা বলি। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা আপাতত পাঞ্জাব বিভক্তির কথা ভুলে যাই। আসুন, আমরা বাংলা ভাগের কথা বলি।

আলোচনার জন্য ধরুন, ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হয়নি। তাহলে কি অবস্থা হতো? আলোচনাটিকে সহজবোধ্য করার জন্য আমি বেশি রেফারেন্স এবং পরিসংখ্যানে যাবো না। যদি ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ না হতো তাহলে আজও আমরা ভারতের একটি প্রদেশ হিসাবে থাকতাম। আর সেই প্রদেশটি হতো অখন্ড বাংলা। এই পয়েন্টটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে। কারণ কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ যে আন্দোলনই করুক না কেন, সেটা ছিল ভারতবর্ষ থেকে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান। ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান পর্যন্ত কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। সেখানে বাংলা বা পূর্ববঙ্গ নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা ছিল না।

মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। অর্থাৎ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর। মুসলিম লীগও জন্মের পর ৩৩ বছর পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন বা সংগ্রাম করে। কংগ্রেস ভারত স্বাধীন করতে চায়, মুসলিম লীগও। কিন্তু মুসলিম লীগ চেয়েছিল স্বাধীন অখন্ড ভারতে সংখ্যালঘু হিসাবে মুসলমানদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ করতে। কিন্তু ভারতের মুসলমানদের জন্য কংগ্রেসের আলাদা কোনো সহানুভ‚তি বা বিবেচনা ছিল না। ঠিক এই স্থানেই এসে যায় দ্বিজাতিতত্ত্ব। কংগ্রেসের অবস্থান ছিল সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ ভারতে রয়েছে একটি মাত্র জাতি। আর সেটি হলো ভারতীয় জাতি। কিন্তু ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে ভারতে রয়েছে দুইটি জাতি। একটি হিন্দু জাতি, আরেকটি মুসলিম জাতি। এই মুসলিম জাতির জন্যই চাই আলাদা রাষ্ট্র।

দুই
সেই আলাদা রাষ্ট্রই বাংময় হয়ে ওঠে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ, লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে। লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে সকলেই জানেন। তাই এ ব্যাপারে আমি বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না। অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সমর্থন করেন যুক্ত প্রদেশ থেকে চৌধুরী খালিকুজ্জামান এবং পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং সিন্ধু থেকে যথাক্রমে জাফর আলী খান, সরদার আওরঙ্গজেব খান এবং স্যার আব্দুল্লাহ হারুন। পরবর্তীতে বেলুচিস্তান থেকে সমর্থন দেন কাজী মোহাম্মদ ইসা। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবেই সর্ব প্রথম ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের আওয়াজ ওঠে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল বলতে তৎকালীন পূর্ব বাংলা, পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান এবং সব শেষে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশকেই বোঝায়। এটি দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে, দ্বিজাতিতত্ত¡ অর্থাৎ হিন্দু ও মুসলমান দুই জাতি- এই ভিত্তিতেই ভারত ভাগ হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লাহোর প্রস্তাবে কিন্তু ‘পাকিস্তান’ বলে কোনো শব্দ ছিল না। লাহোর প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর কংগ্রেসের টনক নড়ে। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ যতগুলি প্রস্তাব গ্রহণ করে বা যতগুলি দাবি দাওয়া উত্থাপন করে তার কোনোটিই কংগ্রেস গ্রহণ করেনি। সবগুলিই তারা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের পর তারা নড়ে চড়ে বসে। ভারতের পত্রপত্রিকা সমূহেই লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে আখ্যায়িত করা হয়।

১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে ইংল্যান্ড থেকে ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসে। ক্যাবিনেট মিশনে উত্থাপনের জন্য মুসলিম লীগ দিল্লী কনভেনশনে এপ্রিল মাসে একটি প্রস্তাব পাশ করে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সমর্থন করেন চৌধুরী খালিকুজ্জামান। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলে ‘রাষ্ট্রসমূহ’ গঠন করার উল্লেখ ছিল। কিন্তু ১৯৪৬ সালের দিল্লী কনভেনশনে সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল সমন্বয়ে ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র’ গঠনের উল্লেখ ছিল। সুতরাং লাহোর প্রস্তাব বা দিল্লী কনভেনশনের যে প্রস্তাবই বিবেচনা করা হোক না কেন, তার ভিত্তি ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব। অর্থাৎ ভারতের মুসলমানরা একটি মাত্র রাষ্ট্র কাঠামো, অর্থাৎ ভারতে হিন্দুদের সাথে বাস করতে পারবে না। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র এবং সেটি হলো পাকিস্তান, যার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাস করে পূর্বাঞ্চলে বা পূর্ব বাংলায় বা পূর্ব পাকিস্তানে। আর এই পূর্ব পাকিস্তানই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

তিন
ভারত বিভাগ তথা বাংলা বিভাগের উৎস খুঁজতে হলে আমাদেরকে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গে যেতে হবে। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। অনেক বইপত্রও আছে। তাই এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। সংক্ষেপে বলা যায় যে, ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের পর থেকেই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠি হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। ফলে যতই দিন যায় ততই মুসলমানরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে থাকে। এভাবে ১৩৩ বছর কেটে যায়। এই ১৩৩ বছরে সাধারণভাবে ভারতে এবং বিশেষভাবে বাংলায় মুসলমানরা দরিদ্র থেকে হতদরিদ্রের দিকে ধাবিত হয়। এই পটভূমিতে ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বঙ্গ প্রদেশকে দুইভাগে ভাগ করেন। আসামের সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগকে যুক্ত করে একটি প্রদেশ এবং বাংলার অবশিষ্টাংশ, বিহার ও উড়িষ্যাকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ গঠন করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও আসামসহ যে প্রদেশ গঠিত হয়, সেটিকে কেউ বলেন পূর্ববঙ্গ, আবার কেউ বলেন বঙ্গাসাম। পূর্ববঙ্গের রাজধানী হয় ঢাকা এবং পশ্চিবঙ্গের রাজধানী হয় কলকাতা।

বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলার দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দুই রকম প্রতিক্রিয়া হয়। মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করেন। পক্ষান্তরে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের তীব্র বিরোধিতা করেন। বঙ্গভঙ্গ রদের দাবিতে পরিচালিত রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় ঢাকা ও ময়মনসিংহ অনুশীলন সমিতির মত সশস্ত্র দল। ঢাকার বিপিনচন্দ্র এবং ময়মনসিংহের ত্রৈলোক্য নাথ চক্রবর্তীসহ শতাধিক কর্মী সশস্ত্র তৎপরতা চালান। রাজনৈতিক ও সশস্ত্র, এই দ্বিমুখী আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে বৃটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।

চার
এখানে একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে। সেটি হলো, যে হিন্দু সম্প্রদায় ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বঙ্গভঙ্গ বাতিল করিয়ে ছাড়ে, সেই একই হিন্দু সম্প্রদায় ১৯৪৭ সালে বাংলাকে ভাগ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কেন? এতই মরিয়া যে, শেষ পর্যন্ত বাংলাকে ভাগ করে ছাড়ে। কেন এত দ্বৈত আচরণ? অনেকের কাছে এটি একটি হেঁয়ালি বলে মনে হলেও একটু ভেতরে গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। দেখা যাবে এই হেঁয়ালির পেছনেও রয়েছে সেই একই বিষয়। আর সেটি হলো, সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব। ১৯০৫ সালে সমগ্র বাংলায় ইংরেজ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু সম্প্রদায় অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গ বা ‘বঙ্গাসামের’ রাজধানী হয় ঢাকা। বিপুলভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় স্বভাবতই প্রশাসনে থাকতো মুসলিম আধিপত্য বা প্রভাব। এই কারণে হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন করে।
কিন্তু ১৯৪৭ সালে সেই একই হিন্দু সম্প্রদায় এবং কংগ্রেস বাংলা ভাগের জন্য অনঢ় ছিলেন কেন? উত্তর, এখানেও সেই দ্বিজাতিতত্ত্ব। কারণটি নিম্নরূপ:
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ইংরেজ শাসকগোষ্ঠি বৃটিশ ভারত এবং দেশীয় রাজ্যসমূহ নিয়ে ভারতকে একটি ফেডারেল রাষ্ট করার উদ্যোগ দেয়। কিন্তু এই উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হয় নাই। তাই ভারত ১৯১৯ সালের আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার আংশিক কেন্দ্রীয়করণ হয়। তবে ১৯৩৫ সালের আইনে প্রদেশ সমূহকে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়। বোম্বাই থেকে সিন্ধু এবং বিহার থেকে উড়িষ্যাকে আলাদা প্রদেশ করা হয়। প্রাদেশিক পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রিসভা গঠন করবে এবং সরকার প্রধান মূখ্যমন্ত্রী হবেন- সেই ব্যবস্থা করা হয়। তবে অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রীকে বলা হতো প্রধানমন্ত্রী। ১৯৩৭ থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে মুসলমানরা ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত বাংলার ছিলেন তিনজন প্রধানমন্ত্রী। এরা হলেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক (১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩), খাজা নাজিমুদ্দিন (১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫) এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭)। হিন্দু সম্প্রদায় দেখেন যে, যদি বাংলা অখন্ড থাকে এবং স্বাধীন হয় তাহলে হিন্দুরা কোনো দিনই বাংলা বা বঙ্গে সরকার গঠন করতে পারবে না। যারা বৃটিশদের সাথে দহরম মহরম করে সারা ভারতে আধিপত্য করছেন তারা অবিভক্ত বাংলায় ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, নাজিমুদ্দিনের শাসন মানবেন কেন? তাই দেখা যায় যে সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু মিলে বাংলাকে অখন্ড এবং বৃহত্তর বাংলা রাখতে চাইলেও গান্ধী, নেহ্রু এবং সর্দার প্যাটেলের নির্দেশে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বেঙ্গল পরিষদের তিনটি সভার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এমএলএরা বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নেন। সভাগুলি হলো:

(১) হিন্দু ও মুসলিম এমএলেদের যৌথ সভায় ১২০-৯০ ভোটে বাংলাকে অখন্ড রাখার প্রস্তাব পাশ হয়।
(২) পূর্ববঙ্গের এমএলেদের আলাদা সভায় ১০৬-২১ ভোটে বাংলাকে অখন্ড রাখার প্রস্তাব পাশ হয়।
(৩) পশ্চিমবঙ্গের আলাদা সভায় ৫৮-২১ ভোটে বাংলাকে ভাগ করা এবং ভারতে যোগদানের প্রস্তাব পাশ হয়।
সুতরাং এখানেও দেখা যাচ্ছে যে বাংলা ভাগের মূলে ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব। এর পরেও কি সেক্যুলার বন্ধুরা অস্বীকার করবেন যে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলা তথা ভারত ভাগ করার কোনো বিকল্প ছিল না?
[email protected]



 

Show all comments
  • মাজহারুল ইসলাম ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
    ইতিহাসভিত্তিক এই লেখাটির জন্য মোবায়েদুর রহমান সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৩ এএম says : 0
    লেখাটি খুব ভালো লেগেছে
    Total Reply(0) Reply
  • পায়েল ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৩ এএম says : 0
    এ জাতীয় লেখা আরও বেশি বেশি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • আরাফাত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২৪ এএম says : 0
    হিন্দুরা কখনই মুসলমানদের উন্নতি সহ্য করতে পারতো না
    Total Reply(0) Reply
  • মমতাজ আহমেদ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২৫ এএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত প্রকৃত ইতিহাস জানা
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Jalal Shamim ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২৮ এএম says : 0
    অসাধারণ! সত্যিই অসাধারণ! এ লেখাটি পড়ে আমার ধারণা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেল।
    Total Reply(0) Reply
  • iqbal ahmed ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১২ পিএম says : 0
    সুসংগঠিত ও তথ্যপূর্ণ লেখাটি পড়ে একই সাথে বিমোহিত এবং অভিভূত হলাম।ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে অনেক কিছুই জানা হলো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় মহোদয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন