পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর এটি অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি)। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও ১০ বছরেও তা শেষ হয়নি। বরং বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সে কারণে ব্যয়ও বেড়েছে। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন করা হয়। এতে দেখা যায়, ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ হিসাবে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ৭৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই দফা মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে তিন হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ১৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এ প্রকল্পের মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। ভারতীয় ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে শুরু থেকেই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকি যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছিল তারা নিজেরা কাজ না করে অন্য একটি নামসর্বস্ব নিম্নমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সাব-কন্ট্রাক দিয়েছে। এবার ধরা পড়েছে আরেক জালিয়াতি। প্রকল্পটির দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় প্রায় ১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার কাজ পরিচালনা করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলটি) লিমিটেড। ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে বিভিন্ন মান ও পরিমাণে স্লিপার সরবরাহ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সরবরাহকৃত সেই পণ্য বুয়েটের টেস্টে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বাতিল করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সব পণ্য। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (প্রথম সংশোধনী) প্রকল্পটির ওপর স¤প্রতি নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা করেছে আইএমইডি। সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলটি) লিমিটেডের সরবরাহ করা পণ্য বুয়েটের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সেসব মালামাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তার মধ্যে রয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার বিজি প্রিপেইড মনো ব্লক কনক্রিট (পিএসসি) স্লিপার্স ফর ফিক্সিং ইউআইসি, ৬ সেট পিএসসি স্লিপার্স ফর ১ ইন ১২ টারমাউনটস উইথ ইউআইসি ৬০ কেজি রেলস, সিএমএস ক্রসিং অ্যান্ড কার্ভ সুইচ, ৩৫ সেট বিজি ওয়ান ইন ১২ টারমাউনটস উইথ ইউআইসি ৬০ কেজি রেলস অন পিএসসি স্লিপার্স উইথ সিএমএস ক্রসিং, ২৩ সেট বিজি ওয়ান ইন ৮ দশমিক ৫ টারমাউনটস উইথ ইউআইসি ৬০ কেজি রেলস অন পিএসসি স্লিপার্স উইথ সিএমএস ক্রসিং।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কার্যক্রমে পাইলিংয়ে জটিলতা মেটাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। আটটি স্টেশনের মধ্যে দুটি স্টেশন বিল্ডিংয়ের (আরাংঘাট ও মোহাম্মদপুর নগর) ছাদ করা হয়েছে। অন্যান্য রেল স্টেশনের পাইলিংয়ের কাজ চলছে। তবে ট্র্যাক নির্মাণ ও সিগন্যালিংয়ের কাজ সরেজমিনে এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি অনভিজ্ঞ সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করায় দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। রেললাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ।
আইএমইডি একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পটি আইএমইডি স¤প্রতি নিবিড় পরিবীক্ষণ করেছে। সমীক্ষায় উঠে আসা বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। সমাধানের উপায়ও বের করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জনগণের টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষতার মাধ্যমে মানসম্পন্ন প্রকল্প সম্পন্ন করার।
প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়নে বেশকিছু সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পের রেললাইনের পিছিয়ে থাকা কাজ এগিয়ে নিতে যথাযথ জনবল নিয়োগ দেয়া ও টার্গেট অনুযায়ী ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে জনবল নিয়োগে বরাদ্দ ও কাজে ব্যয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বক্ষণিক মনিটর করতে হবে। কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে কাজের গতি বাড়িয়ে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নেয়া ও চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদারের আইপিসি পরিশোধ ও পরামর্শকদের বিলও সময়মতো পরিশোধ করতে বলেছে আইএমইডি।
এছাড়া প্রকল্পের আগের পরিকল্পনা সংযুক্ত করে নতুন রেললাইন হিসেবে ট্রেন অপারেশন, স্টেশন মাস্টার, স্থাপন ও রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আইএমইডির তথ্যমতে, ২০১০ সালে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেয়া হয়। তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত বছরের জুলাই পর্যন্ত তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৭০ শতাংশ। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে অগ্রগতি ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। রেলপথ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এখন প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর সময়ে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও মানহীন মালামাল সরবরাহ ও ভূমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে আগামী বছরের জুনের আগে শেষ প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ করা প্রায় অসম্ভব হবে।
এ বিষয়ে সদ্য সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যথাযথ মান বজায় রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানহীন কোনো পণ্য দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে না। যথাযথভাবে মান পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে পণ্য নেয়া হচ্ছে। এদিকে, কিছুদিন আগে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। সে সময় তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। তাই সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সঠিক ও মানসম্পন্ন মালামাল ক্রয় করে প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। ভূমিসংক্রান্ত জটিলতাগুলো সমাধান করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।