Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অল্প জমিতেই বেশি উৎপাদনের কৌশল

দেশে অনাবাদী জমি প্রায় ৫ লাখ হেক্টর

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

করোনাভাইরাসের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে কৃষিতে। চোখ খুলে দিয়েছে কৃষি সংশ্লিষ্টদের। ধাক্কা সামলে এখন নিত্য নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে। আসছে বিস্ময়কর উন্নয়ন ও অগ্রগতিসহ বিরাট সাফল্য। অল্প জমিতে বেশি শস্য উৎপাদনের গবেষণা ও অভিযোজন কৌশল প্রয়োগ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়া। যখন যেমন পদ্ধতি, সমস্যাদি সমাধান, লাগসই ও টেকসই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। এই তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ জানান, কৃষির অভিযোজন কৌশল প্রয়োগ জোরদার করা হয়েছে। এতে আসছে সাফল্য। তাছাড়া বহুমুখী কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করায় এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার ধাক্কা সামলাতে পেরেছি। সবক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলা হচ্ছে কৃষিকে। এতে বাংলাদেশ আরো রেকর্ড সৃষ্টি করবে কৃষি উৎপাদনে।

তিনি বলেন, দেশে এক লাখ ৪০ হাজার পারিবারিক বাগান তৈরি করায় সবজির উৎপাদন এতটা বেড়ে গেছে যে, এখন কম মূল্যে সবজি পাচ্ছেন ভোক্তারা। ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সাফল্য আসছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বাস্তবভিত্তিক স্থায়ী পরিকল্পনা করে নিত্যনতুন শস্যজাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যা আবহাওয়া ও জলবায়ু উপযোগী।
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন কিঞ্চিৎ লবণাক্ত আবাদী জমি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসলের আবাদ ও কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকারের এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আবহাওয়ার খামখেয়ালীর কারণে এলাকাভিত্তিক উপযোগী ‘ক্রপ জোন’ করা হচ্ছে। এখন সারাদেশে একই জমিতে ৩ এর অধিক ফসল উৎপাদনে স্বল্পজীবনকালের জাত উদ্ভাবন এবং মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় ‘লিগুমিনাস’ বা ডালসহ সিম্ব জাতীয় ফসল বছরে অন্তত একবার চাষ করার উপর জোর দিতে হবে। তাতে মাটির ক্ষয়রোধসহ নাইট্রোজেন সংযোজন হয়ে মাটি সমৃদ্ধ হবে।

কৃষিখাতের উন্নয়ন ও সাফল্য কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুত হচ্ছে। শুধু কৃষক নন, শ্রমিকসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার খেটে খাওয়া মানুষের হাতে এখন দু’টো পয়সা আসছে। দিনে দিনে তারা সাবলম্বী হচ্ছেন। ঘোর অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখছেন তারা। সৃষ্টি হয়েছে কৃষিকে আরো এগিয়ে নেওয়ার আস্থা ও বিশ্বাস।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আজমত আলী, যশোরের শার্শার বাবুল আকতারসহ কয়েকজন কৃষক জানালেন, আমরা রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না। কৃষকদের কোন পেনশন নেই, নেই অবসর কিংবা ছুটি। দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন কৃষাণ ও কিষাণীরা। আমরা করোনার মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছি। আমরা চাই কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট আবদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর। এর অনেক জমিতে এখনো তিন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। বাস্তবে জোরদার চেষ্টা চলছে। এটি সম্ভব হলে আরো বদলে যাবে কৃষির চেহারা।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে অনাবাদী জমি রয়েছে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর। ওই জমি আবাদের আওতায় আনার জোরদার ভূমিকা নেয়া দরকার। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পতিত, সাময়িক পতিত, অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনলে আরো সাফল্য আসবে কৃষিখাতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ