পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারের দাম বৃদ্ধির রেশ কাটতে না কাটতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে এক লাফেই ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। আর সারের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৮ শতাংশ। কৃষি উৎপাদনের সবচেয়ে মৌলিক দুটি পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে এ খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদসহ এ খাত সংশ্লিষ্টরা। কৃষকদের মতে, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত অনেক কম। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে সেচ বেশি লাগছে। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ানোয় খরচ অনেক বেড়ে যাবে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া। সব মিলিয়ে শুধু ডিজেলের পিছনেই বাড়তি খরচ হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। আর সারের জন্য বাড়তি খরচ হবে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এতে চলতি আমন এবং আগামী বোরো মৌসুমে প্রতি কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এ অবস্থায় অনেক কৃষক জমির আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন অনেক কমে যাবে এবং খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হবে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ইউরিয়া সারের ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। এর বেশিরভাগ ব্যবহারই হচ্ছে কৃষি খাতে। সরকার ইউরিয়া সারের দাম কৃষক পর্যায়ে কেজি প্রতি চার টাকা বৃদ্ধি করেছে। সে হিসাবে চলতি আমন এবং আগামী বোরো মৌসুসে শুধু সারের জন্য কৃষকের বাড়তি খরচ হবে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) তথ্য মতে, দেশের ৭৫ শতাংশ সেচ কার্যক্রম এখনো ডিজেলনির্ভর। কৃষিকাজে বছরে ৯ লাখ ৭২ হাজার টন ডিজেল ব্যবহার হয়। এতে কৃষকের খরচ হয় ৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। নতুন করে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তাতে এখন ব্যয় হবে ১১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকের ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। তবে দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ সঙ্কটও চরম আকার ধারণ করেছে। সেক্ষেত্রে আগামী বোরো মৌসুমে বিদ্যুতের পরিবর্তে সেচ কাজে ডিজেলের উপরই বেশিনির্ভর করতে হবে। এতে ডিজেলের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে সেচে ডিজেলের জন্যই কৃষককে বাড়তি কমপক্ষে ৫০০০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. হাসনীন জাহান ইনকিলাবকে বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বোরো উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে অনেক কৃষক চাষ কমিয়ে দিতে পারেন। বিশেষ করে যারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে করেন তারা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। উৎপাদন খরচ বিবেচনা করে কৃষকরা বোরো চাষ ছেড়ে দিলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। আসলে সার এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কৃষি খাতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বোরো মৌসুমে কৃষকরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে ভরা বর্ষায়ও খরায় পুড়ছে দেশ। এতে চলতি আমন আবাদ করতে পারছে না কৃষক। বৃষ্টির অভাবে জমি শুকিয়ে গেছে। অনেক স্থানে কৃষক সেচ দিয়ে জমি চাষ করছেন। এতে তাদের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় জমি অনাবাদি ফেলে রেখেছে। বুষ্টির অপেক্ষায় তারা বসে আছে। কৃষি ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আমাদের সংবাদদাতারা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তাদের রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, অনাবৃষ্টি সারের মূল্যবৃদ্ধি লোডশেডিংয়ে সেচ পাম্প ঠিকমত না চালানো পর ফের ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি বরেন্দ্র অঞ্চলের (রাজশাহী নওগাঁ, নবাবগঞ্জ, নাটোর) চাষাবাদ নিয়ে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। বিশেষ করে চলতি আমন মওসুম নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের কাছে আমন আবাদ স্বপ্নের আবাদ। আষাঢ় শ্রাবনের বর্ষণ আমন আবাদকে বোনাস হিসাবে ধরা হয়। এসময় সেচ খরচ তেমন লাগে না। একটু যত্ন আত্তিতে আমনে গোলা ভরে যায় কৃষকের। এবার স্বপ্নের সেই আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। আষাঢ় ছিল বৃষ্টি শূন্য। ফলে তপ্ত মাটি সিক্ত না হয়ে বরং আরো তপ্ত হয়েছে। জমিতে জো আসেনি। বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরি করলেও তা জমিতে লাগানোর মতো বৃষ্টি হয়নি। সেচদিয়ে জমি তৈরি করতে হয়েছে। শ্রাবনে এসে শেষের দিকে সামান্য কিছু বৃষ্টি হওয়া আবাদ শুরু করেছে। অনেক জমি এখনো রয়ে গেছে আনাবাদী। এবার বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছেÑ ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৬৬ হেক্টর। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ১৮ হাজার মে: টন। শুরুতে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে আবাদ আর উৎপাদন কোনোটাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের হিসেবে গত নয়, আগস্ট পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৪০০ হাজার হেক্টর জমিতে। এখনো ৪০ ভাগ জমিতে আবাদ করা হয়নি।
পর্যাপ্ত বৃষিটপাত না হওয়ায় সেচ যন্ত্র চালু করা হলেও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমত সেচ যন্ত্র চালাতে না পারা। জ্বালানি০ তেলের দাম বাড়ানোর কারণে ফের সেচচার্জ বাড়ানো আর সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। খরা মোকাবিলা করে সেচ দিয়ে চারা রোপণের পর প্রয়োজন হয় এমওপি ও টিএসপি সারের। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ না থাকায় শুরুতে সার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সামনের ভর মওসুমে সারের ঘাটতি আর বাড়তি দাম বিপাকে ফেলেছে আবাদকারীদের। মাঠ পয্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মীরা জানান রাজশাহীতে শুরুতে ডিএপি সারের প্রয়োজন প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন অর্থাৎ ১ লাখ ৭৮ হাজার বস্তা। এমওপি ৬ হাজার মে: টন অর্থাৎ ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা। সব মিলিয়ে চাহিদার ২৫ শতাংশ সারও বরাদ্দ নেই। কৃষক চারা রোপণের পর সারের জন্য ডিলারদের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দিচ্ছেÑ সুযোগ সন্ধানী ডিলাররা ৭৫০ টাকার এক বস্তা পটাশ সার দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এর দাম আরো বেড়েছে। কৃষকদের অভিযোগ সার নিয়ে কারসাজির ব্যাপারে অভিযোগ করে কোনো সমাধান মেলেনি। বরং শঙ্কার কথা বলছে। বরেন্দ্রের চার জেলারই একই চিত্র।
গোদাগাড়ীর কৃষক মোহন বলেন, শ্যালোমেশিনে সেচ দিয়ে এক বিঘা জমিতে আবাদ করতে খরচ হতো সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ তো আছে। নাচোলের কৃষক সামাদ বলেন, প্যাটে খাব না আবাদ করব, কিছু বুঝতে পারছি না। খাবার জিনিষপত্রের যে দাম বেড়েছে সংসারের সামান্য প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জোতদার শিশির চৌধুরী বলেন, নানা সঙ্কটে পড়ে বর্গাচাষিরা আবাদ করতে অনীহা প্রকাশ করছে। এমনটি হলে এবার আমন আবাদের চাষ কম হবে। প্রচুর জমি আনবাদি হয়ে থাকবে।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, হঠাৎ করে ৫০ শতাংশ হারে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনের দাম বাড়ার কারণে বগুড়ার কৃষি ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন কৃষক সমাজ। তাদের হিসেবে চলমান আমন মৌশুমে শুধু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই সেচ খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। তার অর্থ যে জমিতে সেচ খরচ পড়ত ৮ শত টাকা সেটা বেড়ে দাঁড়াবে ১২০০ টাকায়। আবার যেখানে ১২০০ টাকা খরচ হতো সেটা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬০০ টাকা। এই বর্ধিত সেচ খরচ যোগাতে যারা অক্ষম তারা বাধ্য হয়ে চাষাবাদ কমিয়ে দেবে। ফলে চলতি আমন মৌশুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। জানতে চাইলে বগুড়ার শাখারিয়া ইউনিয়নের কদিমপাড়া গ্রামের প্রান্তিক আমন চাষি মামুন জানান, যেভাবে তেলের দাম বাড়ল, চাষবাস আর করা যাবে না। মামুন আরো জানাল, মনে হয় চালের দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে। এদিকে আবাদ না হলে খামু কি? মামুনের মতোই হতাশ পুরো বগুড়া জেলার সব শ্রেণির কৃষক। তেলের পাশাপাশি বস্তাপ্রতি ইউরিয়া সারের দামও বেড়েছে ৩ শত টাকা। বেড়েছে অন্যান্য সার ও কীটনাশকের দামও। সব মিলিয়ে কৃষক ও কৃষি পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে বেহাল দশা।
যশোর থেকে শাহেদ রহমান জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের বড় চাষি ছমির উদ্দীন বিশ্বাস দশ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করে এখন হতাশ। রোপা আমন ছাড়াও মাঠে তার ১৫ বিঘা জমিতে আউস ধান রয়েছে। ভরা আষাঢ় ও শ্রাবনে বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে টানা সেচ দিতে হচ্ছে। তারপর বেড়েছে সারের দাম। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অচল হয়ে পড়েছে পানির মটর। এতে তার লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মজনুর রহমান এবছর সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। প্রতিবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করতেন। কিন্তু এবছর তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। তার উপর নেই বৃষ্টি। খরায় পুড়ছে ঝিনাইদহসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। ফলে কৃষকরা ডিজেল চালিত যন্ত্রের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এতে বাড়ছে খরচ। ফলে ঝিনাইদহে কৃষিতে বিপর্যয় ও উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং অনাবৃষ্টির ফলে গোটা যশোর জেলায় চাষাবাদ এমন ব্যহত হচ্ছে। এতে উৎপাদন অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, সার ও জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা নেত্রকোনার কৃষকরা। কৃষিনির্ভর এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমন ধান চাষাবাদ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আকিকুর রেজা খোকন বলেন, আগে এক কাটা জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে যেখানে লাগত ২ শত টাকা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই জমি চাষ করতে লাগছে সাড়ে ৩ শত টাকা। এ অবস্থায় অনেকেই চাষ করতে চাচ্ছেন না।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। রোপা আমানের ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই জমিতে রোপা আমন লাগাতে পারছে না। তারই মধ্যে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি সার ও ডিজিলের দাম বাড়ায় ফসলেরর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সাথে কথা বললে এমন আশঙ্কার কথাই জানান কৃষকরা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, সার ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে চাষাবাদে খরচও বেড়েছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আর ধানের দাম না বাড়লে কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে দিবে। সদর উপজেলার গালা গ্রামের কৃষক আয়নাল বলেন, সার ও তেলের দাম বাড়ায় মানুষ এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ ফলন উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ থেকে মো: হাসান চৌধুরী জানান, হঠাৎ করে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করায় ডিজেল চালিত পাওয়ার টিলারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে কৃষকরা।
পাওয়ারটিলার মেশিনের মালিক আব্দুল কাইয়ুম জানান, হঠাৎ বাজারে ডিজিলের দাম দ্বিগুন হওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য না নিয়েও চলতে পারছি না। আশাউরা গ্রামের কৃষক সঞ্চব আলী জানান, সরকার আমাদের কৃষকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। তেলের দাম বাড়ায় প্রতি কেদার বাবদ ১ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। গেল বছর মাত্র ৭০০ টাকায় এক কেদার আমন জমি চাষ করা যেতো। হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে এবং কৃষকরা টাকার অভাবে তাদের আমন চাষ করতে পারবে না। ফলে আমন ধান উৎপাদনও কমে যাবে।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, সার এবং তেলের দাম অস্বাভাবাবিকভাবে বৃদ্ধি করায় কৃষিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। এমনিতেই এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি অনেক কম। এ কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে সেচ বেশি লাগছে। তার ওপর তেলও সারের দাম বাড়ানোয় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যার ব্যাপক প্রভাব কৃষি খাতে পড়বে। এতে চরম বিপর্যয় ঘটবে কৃষি উৎপাদনে।
কৃষকদের মতে, চলতি আমন মওসুমে এবার বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে জমি তৈরিসহ আমনের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। এমন সময় তেল এবং সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করায় খরচ অনেক বেশি পড়ছে। এতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই আমন ধান রোপণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ অনেকের পক্ষেই এত খরচ করে আমন ধান রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি কিংবা বর্গাচাষিদের পক্ষে একেবারেই এত খরচ করে আমনের চারা লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে এবার আমনের আবাদ প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে। নগরীর অদূরে মীরবাগ এলাকার কৃষক জহিরুল জানান, এবার আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কিনা-তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ আছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানো প্রচেষ্টায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধি। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় শুধু পরিবহন ব্যবস্থায় ধাক্কা লাগেনি, প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতেও। হঠাৎ করে তেল ও সারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমন চাষিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় আমন চাষে যেন আচমকা বজ্রপাত পড়েছে। কেননা, এবারে বৃষ্টি কম থাকায় অনেকটা সেচ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এদিকে সারের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৬ টাকা। এ অবস্থায় কৃষি খাতে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান আমন চাষিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।