পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চরম গরম। টানা খরা-অনাবৃষ্টি। হঠাৎ অল্প সময়েই অতিবৃষ্টি। তীব্র শীত। আকস্মিক ঢল-বন্যা। ঘন ঘন বজ্রপাত-বজ্রঝড়। সমুদ্রে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। উপকূলে অস্বাভাবিক প্রবল জোয়ার। এভাবে বছরজুড়ে চরম-ভাবাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে আবহাওয়া। শুধু তাই নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব চরম আগ্রাসী রূপে দেখা দিয়েছে। সারাবিশে^ আবহাওয়া-প্রকৃতি মানুষের বান্ধব নয়। বরং চরম আতঙ্ক। এখন শ্রাবণ মাস ঠিক মধ্যভাগে। অথচ ভরা বর্ষাকালে প্রায় সারা দেশে টানা এক মাস অনাবৃষ্টি ও খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ সময়ের স্বাভাবিক আবহাওয়ার ছকে মুষলধারে বর্ষণ, মেঘের সুশীতল ছায়া নেই। বরং ভ্যাপসা গরমে সর্বত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ। অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশেষ করে উষ্ণতা তথা অবিরাম তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষি-খামার অর্থনীতি। আগ্রাসী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে কৃষি-খামার ভিত্তিক দেশের অর্থনীতি। বন্যার বিরূপ প্রভাব না কাটতেই খরা-অনাবৃষ্টির বৈরী আবহাওয়ায় পড়েছে কৃষি অর্থনীতি।
অসময়ে তাপদাহ ছাড়াও নানান রূপে চরম বৈরী আবহাওয়ায় মানুষের গড় উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কবলে ঘরে ঘরে মানুষ বিভিন্ন মৌসুমী রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে এ যাবৎ বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরো তীব্র ও বিস্তৃত রূপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। গেল ২৪ ঘণ্টায় যশোরে তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৩৬.৬, ঢাকায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাস্তব তাপানুভূতি ৪০-৪২ ডিগ্রিরও ঊর্ধ্বে। যা মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ছিটেফোঁটাও বৃষ্টিপাত নেই। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে কম সক্রিয় এবং বঙ্গোপসাগরে দুর্বল। নদী-নালার শাখা, প্রশাখা খাল-বিলসহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। অনেক জেলা-উপজেলায় ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির।
অন্যদিকে, মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বুধবার থেকে হঠাৎ করেই অতিবৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় প্রাণ গেছে অন্তত ৭ জনের। গত মে-জুন মাস থেকেই এশিয়ায় জাপান, চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, গ্রিস, ইতালীসহ শীতপ্রধান ইউরোপ মহাদেশ পুড়ছে ভয়াবহ দাবানল, হিটডোম ও তাপদাহে। ইউরোপের অনেক দেশে রাতে তীব্র শীত ও দিনে অসহ্য গরম পড়ছে। খেয়ালী আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে হাজারো মানুষ। হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। দাবানল কবলিত এলাকাগুলো ছেড়ে অগণিত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তীব্র তাপদাহের অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রার পারদ ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। যেন জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে ইউরোপের ‘স্বপ্নের’ শহর-নগরগুলো।
এদিকে বাংলাদেশে ভরা বর্ষা ঋতুতেই টানা অনাবৃষ্টি ও খরা পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি-খামার, ফল-ফসল মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া যাচ্ছে না অনেক এলাকায়। অসময়ে খরার বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম গতকাল শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভরা বর্ষাকালেই খরা ও অনাবৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহতার আলামত। এতে করে কৃষি-খামার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অভাবে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমন মূলত বৃষ্টির পানি-নির্ভর ফসল। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমনে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে। পানির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সেচ দিতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। সেচের অনেক উৎস শুকিয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে খরা, অনাবৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ফুটে উঠেছে। ভবিষ্যতে আমন মওসুমে এ ধরনের খরা, অনাবৃষ্টির পরিস্থিতির জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি প্রয়োজন। অবশ্য তিনি বলেন, আরও ১৫-১৬ দিন রোপা আমন চাষের সময় আছে। ভাদ্র মাসের প্রথম দিকেও যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় তাহলে আমন রোপণ সম্ভব। অন্যথায় আরও ক্ষতি হবে।
চরম-ভাবাপন্নতা, সেই সাথে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যদিয়ে আবহাওয়া-জলবায়ুর চরম বৈরী আচরণ ফুটে উঠেছে। যা ভয়ঙ্কর আগামীর অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে। চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়ার সঠিক ও সময়মতো পূর্বাভাস দিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে একশ’রও বেশি নদ-নদীর ভাটি অববাহিকায় ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশে^ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। বাংলাদেশে ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেড়ে গেছে বৃষ্টিপাত। আবার বৃষ্টিপাতেও ব্যাপক অসঙ্গতি হচ্ছে।
অন্যদিকে, মরু অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে বরেন্দ্র জনপদসহ দেশের উত্তরাঞ্চল। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক তার গবেষণায় জানান, বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে বৃষ্টিপাতের পারিমাণ বেড়ে গেছে। যা বার্ষিক গড়ে অন্তত ২৫০ মিলিমিটার। সীমিত জায়গা বা এলাকায় হঠাৎ অতি বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে জনদুর্ভোগ। ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীতে অল্পসময়ের বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতার এটি প্রধান দিক।
দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এদেশের আবহাওয়া-প্রকৃতির আবহমানকালের চিরচেনা রূপ ও বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে। চিরায়ত ষড়ঋতুর আদি চরিত্র যাচ্ছে হারিয়ে। বর্ষার বাহক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর মতিগতি ও বৈশিষ্ট্যগুলো বদলে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ঘন ঘন প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার ও অতি বৃষ্টিতে ভাসছে। ছোট ছোট জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বাড়ছে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকায় গ্রীষ্মের খরতাপ যেন মরুর আগুনের হলকা। অসহনীয় ‘গরমকাল’ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ‘শীতকাল’ কমছে। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত পঞ্জিকার পাতায় থাকলেও আলাদা করে চেনা যায় না, জনজীবনে তেমন অনুভূতি জাগায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আবহাওয়া-জলবায়ুর বৈরিতায় মানবসম্পদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা বা এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার লক্ষ্যে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আরও চরম আবহাওয়ার কবলে পড়বে পৃথিবী। জাতিসংঘ অতিসম্প্রতি সতর্ক করেছে, বিশে^ বর্তমানে দৃশ্যমান, বিদ্যমান তীব্র ও অস্বাভাবিক তাপদাহ, দাবানল ও উষ্ণতা বৃদ্ধির এই ধারা ২০৬১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ পরিস্থিতি ধারণার চেয়েও আরো কঠিন হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।