Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভিসির বিরুদ্ধে কর্মস্থল পালানো আর্থিক অনিয়মে মামলা

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

মুক্তিযাদ্ধা সনদ যাচাইয়ে দুদকে অভিযোগ
প্রশাসনিক কোন নির্দেশ ছাড়াই কর্মস্থল পালিয়ে ছিলেন সিকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আর্থিক অনিয়মের। এক পর্যায়ে বিভাগীয় মামলা রুজুর সুপারিশ করেন তৎকালীন কর্মস্থল বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বিএলআরাআই), মহাপরিচালক ড. কাজী এম ইমদাদুল হক। এছাড়া সিকৃবিতে ভিসি হিসেবে নিয়োগ ও তার দুই পুত্রের চাকরি লাভে মুক্তিযোদ্ধা খেতাবের সুবিধা নিয়েছেন প্রফেসর ড. মতিয়ার। কিন্তু ভিসি নিয়োগে জমা দেননি মুক্তিযোদ্ধার সনদ। এরপরই ক্যাম্পাসে শুরু হয় গুঞ্জন। তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) অভিযোগ দায়ের করেন রাষ্ট্রীয় ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হাওলাদার।

এদিকে, সহকর্মী ও অধীনস্থদের সাথে অশালীন আচরণের ফলে একাধিকবার আন্দোলনের মুখে পড়েন ভিসি । তার বিশ্রী ভাষা ও গালমন্দ ও দুর্ব্যবহারের কারণে সহকর্মীরা এড়িয়ে চলেন তাকে, এমন তথ্য সিকৃবিতে। ভিসি প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার ছিলেন তৎকালীণ বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বিএলআরাআই), সাভার ঢাকার আঞ্চলিক কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
২০০০ সালের ৯ অক্টোবর প্রশাসনিক কোন নির্দেশ ছাড়াই নিয়ম বহিভর্‚তভাবে নিজ দায়িত্ব মৎস্য গবেষণার এক কনিষ্ঠ বিজ্ঞানীর হাতে অপর্ণ করে উধাও হয়ে যান ভিসি। এর প্রেক্ষিতে ইনিস্টিটিউটের তৎকালীন মহাপরিচালক ড. কাজী এম ইমদাদুল হক নির্দেশে ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এনামুল হককে আহবায়ক করে ৩ সদস্য’র তদন্ত টিম গঠন করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন তদন্তের টিমে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পশু উৎপাদন) ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু ইউছুফ। ওই কমিটির দায়িত্ব ছিল ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার কর্তৃক ১৯৯৯-২০০০ আর্থিক বৎসরে ক্রয়কৃত মালামালের সত্যতা যাচাই। তদন্তের দেখা মিলে ইনস্টিটিটের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. মো. জাহাংগীর আলম কর্তৃক ড. মতিয়ারর রহমান হাওলদারকে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন। কিন্তু ড. মতিয়ার বাঘাবাড়িস্থ সোনালী ব্যংকের শাখায় ২ লাখ ৪৬ টাকা জমা করেন অবশিষ্ট ৩ লাখ ৬ হাজার ৯০০ টাকা জমা করেনি।

এ ব্যাপারে কমিটি মতামত প্রদান করেন, এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বে-আইনী ও গুরুতর আর্থিক অনিয়ম করেছেন ড. মতিয়ার। এভাবে ১১টি অভিযোগ খতিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি মতামত প্রদান করেন, দায়িত্বকালে তিনি তার ইচ্ছেমত কেনাকাটা করেছেন এবং সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই সরকারি অর্থের ব্যয় দেখিয়ে ভাউচার জমা দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মস্থলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, বাঘবাড়ি কেন্দ্র ত্যাগের সময় কিছুই বলে আসেননি তিনি। তদন্ত কমিটি প্রধান কার্যালয়ে বিভাগীয় প্রধানের বক্তব্যে জানতে পারেন কর্মস্থল ত্যাগে প্রশাসনিক কোন নির্দেশ ছাড়াই নিজ দায়িত্ব সর্ম্পূণ বেআইনী ভাবে মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিয়োজিত এক কনিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার নিকট অর্পণ করেন তিনি। তদন্তকালীন সময়ে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত তার নিকট অব্যয়িত সরকারি ৭৫ হাজার ৪২৭ টাকা প্রতিষ্ঠানের ফেরত দেননি এমনকি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি।

এদিকে, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে সিকৃবির ভিসি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা সনদকে পুঁজি করেন প্রফেসর ড. মো মতিয়ার রহমান। কিন্তু নিয়োগকালে জমা দেননি মুক্তিযোদ্ধা সনদ। সে কারণে সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় বিভিন্ন মহলে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা প্রাপ্তির আবেদনও করেননি তিনি। অথচ এই মুক্তিযোদ্ধা সনদের সুযোগ কেবল তিনিই গ্রহণ করেননি, তার দুই পুত্রের চাকুরির প্রাপ্তিতেও রশদ যুগিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়।

সনদের বদৌলতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুত্র ইমরান হাওলাদার ও ইনতেহা হাওলারকে ভর্তি করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে (বুয়েট)। পরবর্তীতে দুই পুত্রকে সরকারি চাকরি লাভে মুক্তিযোদ্ধা সনদ টনিক হিসেবে ব্যবহার করেন।

২০১৯ সালের ১৮ জুন জাতীয় এক দৈনিক প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, ভিসি ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মুক্তিযোদ্ধা সনদের বৈধতা ভ‚য়া উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দাখিল করেন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হাওলাদার। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত কোন কিছু উল্লেখ নেই।
এছাড়া ১৯৫৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার অন্তর্গত মল্লিকেরবেড় গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন তিনি। সেই সাথে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিচিতি অংশে খুলনা সুন্দরবন আদর্শ গভঃ কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাসের কথা উল্লেখ থাকলেও এসএসসি কোন স্কুল বা কত সালে পাস করেছেন তার কোন তথ্য নেই।

মুক্তিযোদ্ধাকালীন সময়ে স্থানীয় একটি মাদরাসায় ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। এছাড়া ওয়েবসাইটে জন্মস্থানের তথ্যে উল্লেখ করেননি গ্রাম বা উপজেলার নাম। শুধু মাত্র লিখেছেন বাগেরহাট জেলার মল্লিকেরবেড়। লালবার্তাসহ অতীতের কোন তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার তথ্য না থাকলেও ২০০৫ সালে অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ক্রয় করেন। মুক্তিযোদ্ধাকালীন সময়ে একজন নাবালককে মুক্তিযোদ্ধা বনে যেয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে আসীনের ঘটনায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খুবই দুঃখজনক। সে কারণে দুদকে কাছে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে অভিযোগ দাখিল করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জালাল হাওলাদার।

সিকৃবির নৈতিকতা কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. মুহাম্মদ নুর হোসেন মিয়া জানান, আমি নৈতিকতা কমিটির সদস্য। প্রকৃত পক্ষে ভিসি এ কমিটির চেয়ারম্যান। সে কারণে অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে প্রয়োজনীতা থাকলেও সুযোগ হয় না কথা বলার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ