Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালাক পাওয়ার খুশিতে ৩ মণ দুধ দিয়ে গোসল করলেন স্বামী!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৪৬ এএম

ঘটনাটি সম্প্রতি নারায়ণঞ্জের মধুপুর উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামে ঘটে। স্ত্রীর কাছ থেকে তালাকের নোটিশ পেয়ে খুশিতে দুধ দিয়ে গোসল করলেন স্বামী আলম (১৮)। আনন্দে দুই শতাধিক প্রতিবেশীকে দাওয়াত দিয়ে ভুরিভোজ করিয়েছেন তিনি। উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের মৃত নয়ন মিয়ার ছেলে আলমকে একই গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রিনা আক্তার (১৬) তালাকের নোটিশ পাঠালে এ কাণ্ড ঘটান।
এদিকে তালাকের নোটিশ পেয়ে আলমের দুধ দিয়ে গোসলের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দুধ দিয়ে গোসল করার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পারিবারিক শিক্ষা একেবারেই তলানিতে। এখানে বসবাসরত অর্ধেক বাসিন্দা গারো আর বাঙালি। উপজেলার চারদিকে শালবন। দুই দশক আগেও গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা ছিল বনের গাছ চুরি। বর্তমান সরকারের সময়ে উপজেলায় কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায় সড়ক হয়েছে পাকা, বিদ্যুৎ পেয়েছে অনেক পরিবার। তবে নারী শিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষার অবস্থা করুণ। অধিকাংশ পরিবারে হয় বাল্যবিয়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের মৃত নয়ন মিয়ার ছেলে আলমের সঙ্গে একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রিনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে তিন মাস আগে আলমের সঙ্গে রিনার বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের এক মাস পার হতে না হতেই নেশা করা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। এ মনোমালিন্যের একপর্যায়ে স্বামী আলমকে
তালাক দেয় স্ত্রী রিনা। ওই গ্রামের মুরুব্বি ছামাদ বলেন, যৌতুক থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি আলমের পরিবার। ফলে বিয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নিমন্ত্রণ থেকে বঞ্চিত হয় গ্রামবাসী। বিয়ের পর উভয় পরিবারে দেখা দেয় অশান্তি। অশান্তি নিরসনে বেশ কয়েকবার সালিশ ডাকা হয়।
তবে কোনো সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তালাকনামা পাঠায় স্ত্রী রিনা। এতে স্বামী আলমসহ তার পরিবারের লোকজন খুশি হয়। দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ বিষয়টি তালাকে নিষ্পত্তি হওয়ায় বাজার থেকে তিন মণ মহিষের দুধ কিনে আনে আলম।
সেই দুধ দিয়ে আলমকে গোসল করানো হয়। সেই সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আনন্দে সোমবার দুপুরে গ্রামের দুই শতাধিক মানুষকে আলমের বাড়িতে ভুরিভোজ করানো হয়। এ বিষয়ে আলম বলেন, এর আগে গোপনে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল রিনার। ওই বিয়ের বিষয়টি তার পরিবার গোপন রেখেছিল।
তালাকের মাধ্যমে গ্রামে শান্তি ফিরে আসার আনন্দে দুধ দিয়ে গোসল করেছি আমি। সেই সঙ্গে গ্রামের দুই শতাধিক মানুষকে আমাদের বাড়িতে ভুরিভোজ করানো হয়েছে। তবে রিনার দাদা মুক্তার হোসেন বলেন, আলম একজন মাদকাসক্ত যুবক। প্রায়ই রিনাকে নির্যাতন করতো। এজন্য বৈধ নিয়মে আলমকে তালাক দিয়েছে রিনা।
রিনার বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আলম কামাই-রোজগার করে না। উল্টো নেশা করে মাতলামি করে। মেয়ে তার সংসার করবে না বলে তালাক দিয়েছে। এতে আমরা খুশি। স্থানীয়রা জানান, একসময় কোনো শুভ খবরে দুধ ঢেলে আপনজনকে আশীর্বাদ করা ছিল পাহাড়ি গারো সমাজের প্রচলিত নিয়ম।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচরা নতুন বধূকে বরণে দুধে স্নান করায়। বিচ্ছেদ হওয়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনরায় একত্রীকরণ হলে দুধ ঢেলে আশীর্বাদের রেওয়াজ এখনো রয়েছে। যাতে সারাজীবন টিকে থাকে সেই সম্পর্ক। কিন্তু তালাকের নোটিশ পেয়ে খুশিতে দুধ দিয়ে গোসলের ঘটনা বিরল।



 

Show all comments
  • Anwar+Hossain ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:১৫ পিএম says : 0
    বে - আককল হলে যা হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বামী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ