২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এবার শীতের তেজ কয়েকদিন সবাই কমবেশি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর এর মধ্যেই চলছে করোনা মহামারী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই সময়টায় ঠান্ডা লাগা বা ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর কারণ হিসাবে শীতকালে আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, ভিটামিন ডি এর অভাব এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ অন্যান্য ভাইরাস ও ফ্লু জাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগের লক্ষণ দেখা দেয় বলে এসময় মানুষের জীবন করোনাভাইরাস নিয়ে আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। এ সময় সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা নাকের প্রদাহ, কনজাংকটিভাটিস বা চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, খুশকি, খোস-পাঁচড়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ মৃত্যুর কারণ পরিবেশগত। বর্তমান সময়ে পরিবেশদূষণের ফলে মানুষ নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা, পরিবেশগত স্বাস্থ্য এবং এর সুরক্ষা যেহেতু একটি সর্বজনীন ব্যাপার, সব মানুষের এখানে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তাই আমাদের পরিবেশ স্বাস্থ্য ও তার নিরাপত্তা খুবই জরুরি,স্বাস্থ্য হলো শরীরিক ও মানসিক সুস্থতা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সচেতনতা দরকার। স্বাস্থ্য সচেতনতার নানা দিক গুলো নিয়ে এভাবে ভাগ করা যায়। দৈনন্দিন কাজ কর্মে স্বাস্থ্য সচেতনতা। খাদ্যাভাসে স্বাস্থ্য সচেতনতা। অসুখ নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা। আচার আচরনে স্বাস্থ্য সচেতনতা। দৈনন্দিন কাজ কর্মে স্বাস্থ্য সচেতনতায় থাকবে পরির্সুত পানীয় জল পান করা, শৌচের পরে ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। স্বাস্থ্যবিধিসম্মত শৌচাগার ব্যবহার করা। ইত্যাদি। খাদ্যাভাসে স্বাস্থ্য সচেতনতায় থাকবে ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় ব্যবহার না করা। মাদক সেবন থেকে দুরে থাকা। ভেজাল খাদ্য নিয়ে সচেতন থাকা।
অসুখ নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতায় উল্লেখ করা যায় অসুখের কারণ জানা। অসুখের সময় পথ্যের ব্যবহার ভুল ধারনা আছে, সেখান থেকে মুক্ত থাকা। অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। যুক্তিযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন দরকার। আচার আচরনে স্বাস্থ্য সচেতনতায় বলা যায় পরিবেশকে নির্মল ও পরিচ্ছন্ন রাখা। যত্র তত্র আবর্জনা না ফেলা। সামাজিক জীবনযাপন করা। পরিবেশকে নির্মল রাখার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ১) বাতাসের মান বজায় রাখা। বাতাসে কার্বনের পরিমান কমানো। ২) ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ জলকে দূষণমুক্ত রাখা। ৩) বিষাক্ত বস্তু ও বিপজ্জনক বর্জ্য সংস্পর্শ এয়ানো।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর সময়ে বিভিন্ন শীতকালীন অসুখ আমাদের শরীরে আক্রমণের সুযোগ নেয়। কারো কারো অ্যালার্জি সমস্যা এ সময়ে বাড়ে। তাই হঠাৎ এই তাপমাত্রা বা আবহাওয়ার পরিবর্তন মানুষকে নানা অসুখে ভোগানোর জন্য দায়ী।
★ প্রয়োজনীয় টিপসগুলো-
১. শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রতিদিন উষ্ণ গরম পানি বা যে কোনো গরম পানীয় যেমন- চা, কফি, স্যুপ, দুধ খাওয়া ভালো। তাতে শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ও বাইরের ঠান্ডা বাতাস কম ক্ষতি করে।
২. বেশি শীতে শুধু একটা ভারী কাপড় না পরে, একাধিক পোশাক পরিধান করুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হলো হালকা কোনো কাপড় যা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে এমন কিছু নিচে পরা, তার উপরে কয়েক লেয়ারে ফুল অন্যান্য জামা-কাপড় পরা। এটা বেশি ঠান্ডায় সবচেয়ে কার্যকরী।
৩. প্রতিদিন কিছু পরিমাণ কালিজিরা রান্না করে বা রান্না ছাড়া খেতে পারেন। কালিজিরা প্রায় ৩০০ রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৪. শীতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি ঠান্ডা লাগার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৫. প্রতিদিন খাবারে রসুন ব্যবহার করুন। কারণ কাঁচা রসুন ঠান্ডা লাগা কমায়।
৬. ঠান্ডা লাগলে বা কাশি হলে আদা ও লবঙ্গ অত্যন্ত কার্যকরী। আদা ও লবঙ্গের রস ঠান্ডা কাশি কমাতে সহায়ক। আদা ও লবঙ্গ দিয়ে চা খুবই কার্যকর।
৭. শীতের সকালে-বিকালে নাক বন্ধ মনে হলে নাকে গরম পানির ভাপ নিলে ভালো বোধ হয়। উপকার বেশি পেতে হলে গরম পানিতে কিছু ফিটকিরির টুকরা দিয়ে গরম ভাপ নিলে নাক বন্ধ হওয়া কমে যায়।
৮. সরিষার তেল শরীর গরম রাখে যা ঠান্ডা লাগার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
৯. শীতে পানি খাওয়া কম হয়। যে কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সেই জন্য পানি জাতীয় গরম খাবার বেশি খেতে হয়।
১০. শীতকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা বেশি প্রয়োজন। শীতে ধুলাবালি বেশি থাকায় তাতে রোগ-জীবাণু বেশি থাকে এবং সে কারণে অসুখে আক্রান্ড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
★ শীতকালীন যেই সব রোগে রোগীরা বেশি আক্রান্ত হয় সেই সব রোগের জন্য হোমিওপ্যাথি:-
* সর্দি-জ্বর বা কমন কোল্ড শীতের সময়কার একটি সাধারণ রোগ। সর্দি-জ্বর দেহের শ্বাসনালীর ভাইরাসজনিত এক ধরনের সংক্রমণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেশি দেখা যায়। কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের এ রোগ বেশি হয়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়। সর্দি-জ্বর হলে প্রথমে নাকে ও গলায় অস্বস্তি লাগে, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধও থাকতে পারে। মাথাব্যথা, মাথা ভারী বোধ হওয়া, শরীরে ব্যথা, হালকা জ্বর, গলাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গও দেখা যায়। কখনো কখনো চোখ লাল হতে পারে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে। সর্দি-জ্বরের সময় বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো। সাধারণ খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পানি, লেবুর রস, আনারস, পেয়ারা বা আমলকী জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
* মাম্পস: ঠান্ডার সময়ে যখন কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে তখন প্যারামিক্সোভাইরাস দ্বারা প্যারোটিড লালা গ্রন্থি আক্রান্ড হয়। তখন নীচের চোয়াল সহ গাল ফুলে উঠে। রোগী বড় করে মুখ খুলে হা করতে পারে না। সে সাথে জ্বরও থাকে। গালের ফোলা সপ্তাহ খানেক হতে দশদিন পর্যন্ত থাকে। সাধারণত একদিকেই লালা গ্রন্থি আক্রান্ড হয়। মাম্পস হতে কখনো কখনো অন্য অঙ্গও আক্রান্ড হয়। সাধারণত তিন বছরের পর হতে টিনঅ্যাজ পর্যন্ড দেখা যায়। বড়দের খুব কম হয়। লক্ষণের উপর যেই সব ঔষধ আসতে পারে, বেলাডোনা, রাস টক্স, মার্ক সল, মার্ক বিন আয়োড, মার্ক বিন রুব্রাম, পালসাটিলা।
* টনসিলাইটিস: মুখের ভিতরে গলার দুপাশে লিম্ফয়েড টিস্যুর যে গ্রন্থি থাকে তাকে টনসিল বলা হয়। এটিও সাধারণত বাচ্চাদের বেশী হয়ে থাকে। শীতকালে ঠন্ডা লাগার ফলে এগুলি ফুলে যায়, জ্বর হয়, শরীরে ব্যথাও থাকে। রোগী ঢোক গিলতে পারেনা। গন্টান্ডগুলি ফুলার কারণে আকারে বড় হয় এবং অনেক সময় এগুলি পেকে যায়। টনসিল কারো কারো ক্ষেত্রে শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ও দেখা যায়। অনেকেই সার্জারির মাধ্যমে এগুলি কেটে ফেলেন। এখানেও লক্ষণের উপর কয়েকটি ওষুধ আসতে পারে।
*এডিনাইটিস: মুখের ভিতরে তালুর পেছনে এ গ্রন্থির অবস্থান। টনসিলের মতই এ গ্রন্থিও রোগজীবাণুকে দেহে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এডিনাইটিস হওয়ার কারণে শিশু ঘুমের সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারেনা তাই মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। এখানেও লক্ষণের উপর ওষুধ দিতে হয়।
*বাতব্যথা: শীতকালে সাধারণত গাউট ও আরথ্রাইটিস উভয় ধরনের বাতের বৃদ্ধি দেখা যায়। এ রোগটি বয়স্কদের হয়ে থাকে।
ঔষধ: আরনিকা, বেঞ্জোইক এসিড, ব্রাইয়োনিয়া, কেল্কেরিয়া কার্ব, কষ্টিকাম, কলচিকাম, রাস টক্স, লক্ষণের উপর যেই সব ঔষধ আসতে পারে।
*আর্টিকেরিয়া: শীতকালে আজকাল প্রায় তরুণ-তরুণীদের মাঝে এবং যুবক-যুবতীদের মাঝে এটা দেখা যায়। এতে ত্বকের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে উঠে। তবে শীতে হজমের গন্ডগোলের কারণে, বিশেষ করে লিভারের দুর্বলতার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে তাই এটাকে অনেকে শীতপিত্ত রোগও বলে থাকেন। যেই সব ঔষধ আসতে পারে- এপিস, ডাল্কামারা, রাস টক্স, আর্টিকা ইউরেন্স।
* ব্রংকাইটিস: ঠান্ডায়ে যখন শ্বাসনালী সহ ফুসফুসে বাতাস যাতায়াতকারী সরু নালীর প্রদাহ হয় তখন এ রোগ হয়। এটি সাধারণত শিশুদের বেশী হয়ে থাকে। এ রোগেও জ্বর, কাশ, শ্বাসকষ্ট থাকে। এখানেও লক্ষণের উপর কয়েকটি ওষুধ আসতে পারে।
* নিউমোনিয়া : এতে শ্বাসনালীর পরিবর্তে ফুসফুসের প্রদাহ হয়। এখানেও জ্বর, কাশ ও তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকে। যে সব মেডিসিন আসতে পারে, অ্যান্টিম টার্ট, আর্সেনিক, ব্রাইয়োনিয়া, নেট্রাম সালফ, ফসফরাস, টিউবারকুলিনাম।
* অ্যাজমা : বুকে সাঁ সাঁ শব্দ সহ নি:শ্বাসে কষ্ট, রোগী নি:শ্বাসে বাতাস নেয়ার জন্য তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে, হাঁপাতে থাকে। বিছানায় শুতে পারেনা, কিছু খেতে পারেনা। শ্বাসকষ্ট সাধারণত রাতেই বেশী থাকে, রাত বাড়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট বাড়ে, সকালের দিকে রোগী কিছুটা স্বস্তি বোধ করে। আজকাল ঘরে ঘরে ছোট শিশুদের মাঝে এবং বয়স্কদের মাঝেও এ রোগ দেখা দিচ্ছে। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এসব রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে এ রোগ দেখা দেয়। এছাড়া কনভেন্সনাল চিকিৎসায় অ্যালার্জির জন্য অতিরিক্ত সিনথেটিক ড্রাগ নেয়ার সাইড ইফেক্ট হিসেবে এবং আরো কিছু ড্রাগের সাইড ইফেক্ট হিসেবে এ যন্ত্রণা দায়ক অসুখের সৃষ্টি হয়। যেসব ঔষধ আসতে পারে, অ্যান্টিম টার্ট, আর্সেনিক, এরেলিয়া, ব্রাইয়োনিয়া, ক্যালি কার্ব, নেট্রাম সালফ, পালসাটিলা, টিউবারকুলিনাম।
* মাস্ল ক্রাম্প: সাধারণত শীতে মধ্যবয়স রোগে ভোগা দুর্বল লোকদের মাঝেই এটি দেখা দেয়। দিন বা রাত যেকোন সময় দেখা দেয়। পেশীর খিঁচুনির সাথে তীব্র ব্যথা হয়। তাই লক্ষণের উপর কয়েকটি ওষুধ আসতে পারে।
বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি কোন রোগের নামে চিকিৎসা করা হয় না, তাই কোন ওষুধ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। কারণ একজন চিকিৎসক রোগীর রোগের লক্ষণ অনুসারে অনেক ঔষধ নির্বাচন করতে পারে, এথেকে একটি মাত্র মেডিসিন নির্বাচন করে থাকে।
তাই সঠিক চিকিৎসা পেতে হলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন। আর শীত ও করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
ইমেইল:[email protected].
ফোন: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।