পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের বেশিরভাগ কলেজে বেলা ১১টার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত মঙ্গলবার রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের উপর এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন। প্রাসঙ্গিক অলোচনায় তিনি শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নিয়ে বলেছেন, শিক্ষকরা মনে করেন ক্লাসে পড়ালে কোচিং প্রাইভেটে শিক্ষার্থীরা আসবে না। তিনি আরো বলেছেন, শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টায় বাড়ী থেকে আসে। তারা আসে কোচিং করতে। সকালে যে শিক্ষার্থী আসে সে কোচিং করে ক্ষুধার্ত হয়ে বাড়ী চলে যায়। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান তদারকের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান জানেন, ১০ বছরেও তার প্রতিষ্ঠানে কেউ পরিদর্শনে আসবে না। শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার উপর শিক্ষা কর্মকর্তাদের জোর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নোটবই থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন না করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কেউ নোটবই থেকে প্রশ্ন করলে তা বাতিল হবে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। তার ভাষায়, শিক্ষার্থীদের নোটবই পড়তে উদ্ভুদ্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত উপস্থিত প্রভৃতি অভিযোগও কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব শিক্ষক নামধারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে উদ্যোগী হবার জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ এ কারণে যে তিনি শিক্ষার একটি ক্ষেত্রের গুরুতর অনিয়মের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। বেশিরভাগ কলেজে সকাল ১১টার পর শিক্ষক না থাকা একটি গুরুতর অনিয়ম। এ অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এক শ্রেণীর শিক্ষকের মানসিকতা যদি এই হয়, তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে কিভাবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার মানের সাথে শিক্ষকের মান ও শিক্ষা দানের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সেই সাথে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষাদানের বিষয়টি গভীরভাবে সম্পৃক্ত। যে গুরুতর অভিযোগ মন্ত্রী তুলেছেন তা অত্যন্ত উদ্বেগের। কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও অনুরূপ অভিযোগ করেছেন। এধরনের অভিযোগ ঢালাও না হলেও এর ভিত্তি রয়েছে। সেইসাথে এসবের সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। একথা বলতেই হবে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল-কলেজগুলোতে যে ধরনের পরিচালনা কমিটি রয়েছে তাদের ব্যস্থাপনায় বড়ধরনের গলদ রয়েছে। যারা এগুলো পরিচালনা করেন তারা শিক্ষামান রক্ষার চেয়ে নিজেদের নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনেকটা তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করেন। সরকারের থেকে বেতন দেয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের বিবেচনায় নিয়োগের বিপরীতে অবৈধ অর্থের লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়স্বার্থ বিবেচনায় বিষয়টি যাদের দেখভাল করতে বলেছেন তারা কতটা সচেতন তা আমলে নেয়া প্রয়োজন। এসব শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজেরা ঠিকমত অফিস করেন কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। মন্ত্রী সঙ্গতভাবেই বলেছেন, পাবলিক পরীক্ষায় এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হতাশাব্যঞ্জক ফলাফলে সেসব শিক্ষাতিষ্ঠানের পিছনে সরকারী অর্থে ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সে কারণেই সরকারী অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কেবলমাত্র স্কুল-কলেজ নয় বরং প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সুষ্ঠু তদারকি প্রয়োজন। একটি ভাল মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে কি বোঝায় তার নতুন করে ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন নেই। এ দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম মানুষের মুখে মুখে এখনো ছড়িয়ে আছে। এমনকি অনেক শিক্ষক, অধ্যক্ষের নামও জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। সেই প্রেক্ষিতে মন্ত্রীর আহ্বানকে অবশ্যই গভীর বিবেচনা বোধে দেখার দাবি রাখে।
মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার বিকল্প নেই। সরকার বর্তমানে শিক্ষকদের মাসিক বেতন ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। গ্রেডের মাধ্যমে তাদের বেতনও নির্ধারিত হচ্ছে। সে বিবেচনায় তাদের দাবী-দাওয়া অনেকটাই পূরণের পথে। সমস্যা থাকলেও তা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে এমন প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃত শিক্ষানুরাগী, দক্ষ এবং নির্লোভ ব্যক্তিদের দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা গেলে শিক্ষামন্ত্রী যে সমস্যার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেছেন তার সমাধান করা সম্ভব। বলাবাহুল্য, মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যাহত হলে তা জাতির অগ্রযাত্রা থমকে দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।