গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সালেহা মনিরের ইচ্ছা, ছেলের কবরের মাটি ছোঁয়ার। কিন্তু বেলা যে শেষের পথে। তার যে বয়স তাতে তিনি আশঙ্কা করছেন, হয়তো জীবিত অবস্থায় সেই আশা পূরণ নাও হতে পারে। তিনি যে নিজের সাথে নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছেন, বিচার শেষ না হওয়ার আগে ছেলের কবর দেখতে যাবেন না। সংখ্যার হিসেবে ৯ বছর পার হলেও এখনো মামলাটির তদন্তই শেষ হয়নি। বুকে পাথর বেঁধে পড়ে আছেন, চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তবুও বিচারের আশা ছাড়ছেন না। কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো এই প্রতিবেদকের সঙ্গে বলেছেন সাগরের মা সালেহা মনির। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যায়। ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ এই মায়ের আর্তনাদ ছেলের হত্যা বিচার কি পাবো না।
২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির। ওইদিন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সালেহা মনির বলেন, ৯ বছর হয়ে গেলো এখনো সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কেন তাদের খুন করা হলো সেটাও জানতে পারলাম না। আদৌ মামলার তদন্ত কি শেষ হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অদৃশ্য কোন কারণে না রাজনৈতিক কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ হচ্ছে না। মামলার তারিখ আসে আর যায়। কোনো কাজ হয় না। উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে র্যাবকে একটা সময় বেঁধে দিক যে, এত দিনের মধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষ করতে হবে। হয় এসপার না হয় ওসপার। র্যাব যদি রহস্য উদঘাটন করতে না পারে তাহলে ব্যর্থতা স্বীকার করে মামলা ছেড়ে দিক। অন্য কোনো সংস্থা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।
তিনি বলেন, অনেক আলোচিত মামলার বিচার শেষ হচ্ছে। শুধু সাগর-রুনী হত্যারই বিচার হচ্ছে না। কেন মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না? সাংবাদিক হত্যার বিচার হলো না। এটা কেমন কথা।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সালেহা মনির বলেন, মুজিববর্ষে অনেক কিছু হচ্ছে। মুজিববর্ষে সাগর-রুনী হত্যার সুরাহা করতে পারলে এটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ, তিনি যেন এ মামলাটির তদন্ত শেষ করে বিচার করুন। সাংবাদিক সমাজকে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সালেহা মনির বলেন, প্রত্যেক মায়ের সন্তানই সুসস্তান। আমার সাগরও আমার কাছে সুসন্তান। এই নবাবপুরের লোহা-লক্করের মধ্যে আমি সোনা বের করে এনেছিলাম। আমার সেই সোনাকে কি অপরাধে নৃশংসভাবে খুন করা হলো?
এখনো ছেলের কবর দেখতে যাননি সালেহা মনির। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কবরের পাশে গিয়ে কি বলবো, বিচার হচ্ছে না। তবে বিচার একদিন হবেই। আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, আমার শেষ নি:শ্বাস থাকা পর্যন্ত আমি সাগর-রুনী হত্যার বিচার চেয়ে যাবো। দুনিয়ার বিচার না হলেও উপরে যিনি আছেন তিনি অবশ্যই বিচার করবেন।
মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, এরা হতে পারে অন্য কোন ক্ষেত্রে অপরাধী। তবে এ ঘটনায় না। কোন চোর, ডাকাত তাদের খুন করেনি। এটা মিথ্যা অপবাদ। এখানে অনেক রহস্য আছে। ৭/৮ জন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা দোষী না।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনী দম্পতি। ঘটনার পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তাধীন। দীর্ঘ নয় বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।