Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তদন্তে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি

সাগর-রুনির দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে সহকর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশ তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে : আর্টিকেল নাইনটিন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যার এক দশক পেরিয়ে গেলেও এই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে ব্যর্থতায় হতাশা এবং ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন সহকর্মীরা। সহকর্মীরা বলছেন, এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে অদৃশ্য শক্তি ও বাধা কাজ করছে। হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ৮৫ বার পিছিয়েছে। এটি এখন ‘সেঞ্চুরি’ করার অপেক্ষায়। এখন তারা প্রধানমন্ত্রী এবং আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি তদন্তে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

সাগর-রুনির দশম মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে সহকর্মীরা এসব কথা বলেন। ডিআরইউ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যার ১০ বছর পরও হত্যাকাণ্ডের সূত্র তদন্তকারীরা বের করতে পারেননি। আমার জিজ্ঞাসা, তারা কীভাবে পুলিশে থাকেন। জনগণের করের টাকায় যারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, যারা বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করা উচিত।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারায় ক্ষোভ জানাতে হচ্ছে। এখন বিষয়টি এমন অবস্থায় এসেছে, দিবস এলেই কথা বলি। দিবস পার হলেই ভুলে যাই। যেকোনো মানুষের হত্যার বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অনেক সূত্রবিহীন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয় না। বাধাটা কোথায়? নিশ্চয়ই কোথাও বাধা আছে। আমি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আদালত যদি একটি নির্দেশনা দেন, তবে প্রশাসন উদ্যোগী হতে পারে। এখন আদালত এগিয়ে এলেই এই হত্যার বিচার সম্ভব।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম তপু বলেন, সাংবাদিকদের পেশার নিশ্চয়তা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। সাগর-রুনির হত্যার বিচার হয়নি দীর্ঘ সময়েও। প্রধানমন্ত্রীর কাছে, প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাই, এই হত্যার বিচার যেন দ্রুততম সময়ে হয়।
মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, কত কিছুরই রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। এর পেছনে কোনো কারণ নেই, এটা বিশ্বাস করা যায় না। সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে তো আমাদের রাস্তায় দাঁড়ানোর কথা ছিল না। কিন্তু বাধ্য হয়েই দাঁড়াতে হচ্ছে। এখন সর্বশেষ ভরসা হচ্ছে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট যদি একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেন, তবে হয়তো এটার বিচার সম্ভব।
হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারায় ডিআরইউর সাবেক সহসভাপতি আজমল হক হেলাল হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমি প্রস্তাব করতে চাই, সাগর-রুনির বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আর স্মারকলিপি দিতে চাই না। তাকে পচা ডিম উপহার দিতে চাই। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে, আমাদের আর লজ্জা পেয়ে লাভ নেই।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব শেখ মামুনুর রশীদ, ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমিন প্রমুখ।
এদিকে, সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির অমীমাংসিত হত্যা মামলার বিষয়ে সর্বোচ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন। সংগঠনটি বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়াটা সাংবাদিকদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গতকাল এক বিবৃতিতে এ হত্যাকাণ্ডের এক দশক উপলক্ষে এসব উদ্বেগের কথা জানায় সংগঠনটি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এই সাংবাদিক দম্পতি নিহত হন।
আর্টিকেল নাইনটিনের বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার, বিচার বিভাগ, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, সাংবাদিক সমিতিসহ সবাইকে সাগর-রুনি হত্যার বিচারসহ সাংবাদিকদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অতীব প্রয়োজন। আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ভূমিকা নিতে হবে।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, এই অমীমাংসিত মামলাটি দায়মুক্তির সংস্কৃতির শক্তিশালী অস্তিত্বের একটি লজ্জাজনক উদাহরণ। যেখানে হত্যাকারীরা মুক্ত থাকে, তা দেশের বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটি সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো অপরাধের বিচার করতে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়া স্পষ্টভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। রাষ্ট্রের সুরক্ষাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং নাগরিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রের অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এই হত্যা মামলাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে বিচার সম্পন্ন করার জন্য বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়। এর পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জন্য এ বিষয়ে সরকারের জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এ ঘটনার তদন্তের ব্যাপারে গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব যখন কোনো মামলার তদন্ত করে তখন তা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে করে থাকে। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই করছে র‌্যাব। এখন পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে র‌্যাব। সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে যেসব তথ্য উপাত্ত ও আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার তা করেছে র‌্যাব। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবো। র‌্যাব সবসময় চেষ্টা করে তদন্তে যেন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ দোষী সাব্যস্ত না হয়।
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে তদন্তে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন দোষী সাব্যস্ত না হয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ হত্যা মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। আপনারা জানেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তভার নিয়েছি দুই মাস পর। আমরা রিমান্ডে এনে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সরকার এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে এ মামলার তথ্য-উপাত্ত প্রমাণের জন্য আলামত পরীক্ষা করতে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে সময় লেগেছে। আমরা মাত্র কিছুদিন আগে পেয়েছি। তদন্ত চলমান।
সাগর-রুনি হত্যার ১০ বছর হয়েছে— আর কত দেরি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, র‌্যাব এ মামলা তদন্ত করছে আদালতের নির্দেশে। আমরা সবদিক বিবেচনায় তদন্ত করছি।
এমন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করার মতো সক্ষমতা কী তবে র‌্যাবের নেই? এ প্রশ্নে কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করেছে। র‌্যাব কখনো নিজ থেকে মামলার তদন্ত করে না। আদালত দিলেই কেবল তদন্ত করে। আমরা যে আজ একটি অভিযান পরিচালনা করেছি এটারও আলামত ও আসামি থানায় সোপর্দ করা হবে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। তদন্তের ক্ষেত্রে র‌্যাব সবসময় খেলায় রাখে যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হয়।
বাদীপক্ষ মামলার তদন্তে র‌্যাবের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন এমন বক্তব্যও আসছে- এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, আমরা এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সবসময় আদালতকে অবহিত করছি। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ বা বক্তব্য পাইনি। আদালতও আমাদের বলেননি। এখানে তদন্ত নিয়ে খারাপ লাগার কিছু নেই। বাংলাদেশের কয়টি মামলায় আলামত পরীক্ষা করে আসামিকে শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। আমরা কিন্তু সেটিই করছি। আমরা চাই এটি দ্রুত শেষ হোক এবং নিরপরাধ কেউ সাজা না পান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাগর-রুনি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ