পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও কানেক্টিভিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথা বাদ দিলেও আসিয়ানের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত আমাদের উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় হতে পারতো। সম্ভবত সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই আশির দশকে বাংলাদেশের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠিত হয়েছিল। বলাবাহুল্য, সার্কের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। মূলত ভারতের অসহযোগিতা এবং ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার কারণেই তা সম্ভব হয়নি। সার্কের প্রটোকল ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং সমস্যা নিরসনের প্রয়াসগুলো গত চারদশকেও সম্পূর্ণ সফল হয়নি। গঙ্গা ও তিস্তার পানিবণ্টন, বাণিজ্য বৈষম্য, স্থলবেষ্টিত দেশ নেপাল ও ভুটানের সাথে বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্য, আঞ্চলিক সহযোগিতার উদ্যোগগুলো ভারতের অনীহার কারণে দশকের পর দশক ধরে ঝুলে আছে। অথচ, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত ট্রানজিটের নামে করিডোর সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশের নৌ, স্থল ও সমুদ্র বন্দর এবং অবকাঠামো ব্যবহার করে কার্যত বিনা শুল্কের ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করলেও বাংলাদেশের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে ভারতের অনীহা এবং ধারাবাহিক প্রবঞ্চনার পরও বাংলাদেশ মূলত একপাক্ষিকভাবে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশের ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে ভারত ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করলেও ভারতের ভূমি ব্যবহার করে সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানের সাথে একই ধরনের ট্রানজিট সুবিধার দাবি দীর্ঘদিনের। সব পক্ষ এ ব্যাপারে একমত হলেও ভারতের অনীহা ও অসহযোগিতার কারণে দেশগুলো এ ধরনের আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের একপেশে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এখন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। এ কারণে ভারত তার প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আস্থা হারাচ্ছে। গত বছর ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের সময়ে ভারতের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের সমর্থনের পাল্লা ছিল চীনের দিকে। বিতর্কিত ও অমিমাংসিত কালাপানি-লেপুলেখ অঞ্চলকে নেপাল তার মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে ভারতের প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলো। অন্যদিকে ভুটানের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোরও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে দেখা গেছে। তবে কাশ্মির বিরোধসহ পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভারতের সম্ভাব্য সংঘাতপূর্ণ অবস্থায়ও বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল। এ কথা বললেও অত্যুক্তি হবে না যে, প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্ধুহীন ভারতের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট ছিল একমাত্র বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সদিচ্ছার মূল্য দিতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে।
ল্যান্ডলক্ড কান্ট্রি হিসেবে নেপাল ও ভুটান প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরের সুবিধা চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এ লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ট্রানজিটচুক্তি হয়েছিল। করিডোর দিতে ভারতের অনুমোদন না পাওয়ায় দীর্ঘ সাড়ে ৪ দশকেও বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যকার বাণিজ্যিক ভূমি ব্যবহারের সুবিধা ব্যবহার করা যায়নি। ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিলেও বাংলাদেশ ও নেপাল-ভুটানের দাবি স্থল ট্রানজিটের ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কিছুটা পরিবর্তিত ট্রানজিট চুক্তির আওতায় নেপালে ২৭ হাজার টন সার পরিবহনের জন্য ভারতের ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। চাওয়ামাত্র ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দেয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ বিনিময় বা দর কষাকষির সুযোগ কাজে লাগায়নি। এ ব্যর্থতা বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের। আন্তর্জাতিক নদী আইন এবং সম্পাদিত পানিচুক্তি অনুসারে গঙ্গার পানি প্রাপ্তি, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের একতরফা টালবাহানার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে সর্বাত্মক ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে নেপাল ও ভুটানের সাথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশও ভারতের কাছে অনুরূপ সুবিধা প্রাপ্তির হকদার। ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এই অপ্রাপ্তি বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে ভারতীয়দের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। সীমান্তে বিএসএফ’র হত্যাকান্ড বন্ধে ভারতীয়রা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও তা রক্ষিত হয়নি। এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে বিএসএফ’র সীমান্ত হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে যতই ভারতের সাথে একপাক্ষিক বন্ধুত্বের দাবি করা হোক না কেন, বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে বঞ্চনার ইতিহাস বাংলাদেশের জনগণকে যেমন বিক্ষুব্ধ করছে, একইভাবে আন্তজার্তিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এসব বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ন্যায্য অভিমত দিতে কসুর করছে না। স্বার্থপরতা ও একপেশে নীতির মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোকে সফল করা যাবে না। যৌথ নদীর পানি বণ্টন এবং নেপাল-ভুটানের সাথে স্থল বাণিজ্য ও ট্রানজিটের প্রশ্নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির অবসান ঘটাতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতকেই তার নীতি ও অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।