২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ডায়াবেটিস একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতার একটি প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস। নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবারই ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত না হলে নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এ রোগটি মানুষের কর্মক্ষমতা হরণের পাশাপাশি চোখ, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনি ও ত্বকসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। এসব সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীরা ভোগেন আরো কিছু জটিলতায়। এ বিষয়ে সার্বিক পরামর্শ দিয়েছেন ইউনাইটেড হসপিটালের বিশিষ্ট স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হাসিনা আফরোজÑ
নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়া অনেক কঠিন হয় কেননা এই রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী ও তার গর্ভস্থ সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে শরীরে (রক্তে) অতিরিক্ত ও উচ্চমাত্রার শর্করার উপস্থিতি শরীরে ফাংগাস বা ছত্রাকের বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক হিসাবে কাজ করে বিধায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের বারেবারে ফাংগাস বা ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের মেনোপজ তুলনামূলক সময়ের আগেও হতে পারে ফলে তৎপরবর্তী হৃদরোগের ঝুঁকি তরান্বিত হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের জনন অঙ্গে কিছু কিছু উপসর্গ বেশি থাকে ফলে কিছু কিছু রোগও বেশি হতে পারে। যেমন জনন অঙ্গে ছত্রাক জাতীয় ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন, মূত্র নালী বা মূত্র থলিতে প্রদাহ ইত্যাদি। তাই সঠিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও নিয়মিতভাবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীর শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত, এটা বুঝার জন্য যে ডায়াবেটিসের কারণে তার জনন অঙ্গে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কিনা। ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের যোনীপথে অস্বস্তি ও ব্যথা এবং যোনীপথ শুকনো ও অপিচ্ছিল থাকার কারণে শারীরিক সম্পর্কে অনীহা হতে পারে।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের জন্ম নিরোধক বড়ি ব্যবহারে ঝুঁকি আছে। জন্মনিরোধক বড়ি ব্যবহারে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। এক বা দুই বছর বা ততোধিক সময় ধরে জন্মনিরোধক বড়ি খেতে থাকলে ঝুুঁকি আরো বাড়ে। তাই সঠিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে স্বল্প মাত্রার জন্ম নিরোধক বড়ি খাওয়া উচিত।
অধিকাংশ চিকিৎসকের মতেই যে সকল নারী গর্ভধারণের আগে থেকেই টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগে থাকে, তাদের গর্ভধারণের সব ঔষধ বা ইনসুলিন-এর মাত্রা নির্ণয় করার জন্য প্রথম দিকে দিনে ৬-৮ বার রক্তে গ্লুকোজ- এর মাত্রা দেখা দরকার। যেমন প্রতিবার খাওয়ার আগে, প্রতিবার খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা পরে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় এবং মাঝে মাঝে রাত ২টা-৩টায়। এরপর ডায়াবেটিস কন্ট্রোল হওয়ার পর নিয়মিত চেকআপ করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় ডায়েবেটিস আক্রান্ত মায়েদের অনেক ধরনের ঝুঁকি থাকতে পারে। যেমনÑ গর্ভধারণের প্রথম দিকে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি (এবরশন বা মিসক্যারেজ) সন্তান পরিপূর্ণতার পূর্বেই জন্ম হওয়া, (প্রিটার্ম লেবার) অত্যধিক ওজন বেড়ে যাওয়া এমন কি সন্তান মায়ের পেটে মরেও যেতে পারে। জন্মের পরে সন্তানের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন সন্তানের শরীরে গ্লুকোজ কমে যাওয়া (হাইপো গ্লাইসিমিয়া) বা রক্তে ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে সন্তান দুর্বল হয়ে যাওয়া (হাইপো ক্যালসিমিয়া), সন্তানের শ্বাসকষ্ট হওয়া, মায়ের বুকের দুধ ঠিকভাবে টেনে খেতে না পারা (ল্যাকটেশন ফেইলিওর), ইত্যাদি আরো নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এজন্য ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। হিমোগ্লোবিন এ ওয়ান সি হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ৮-১০ সপ্তাহ সময়ের একটি গড় মাত্রা। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের শতকরা ৬-এর নিচে থাকে যদিও গর্ভাবস্থায় তা শতকরা ৫-এরও নিচে নেমে আসে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের রক্তে এই মাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকা উচিত।
শতকরা ৯০ ভাগ নারীর ক্ষেত্রে শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পরে, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভুগা নারীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসে। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখা উচিত; যদি তা স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসে তবে সন্তান জন্ম হওয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পরে আবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। অন্য কোনো কারণে নিষেধ না থাকলে, পূর্বে থেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত বা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারী, সকলেই সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ নারী পরবর্তী ১০-২০ বৎসরের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
বাবা-মার মধ্যে যে কোনো একজন ৫০ বছরের পূর্বে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, তাদের সন্তানের শতকরা ১৪ ভাগ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া মা-বাবা দুজনেরই টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে, সন্তানের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৪৫ ভাগ।
এব্যাপারে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ষ ডা. হাসিনা আফরোজ
বিশিষ্ট স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ
ইউনাইটেড হসপিটাল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।