Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাতের লেখার সমস্যা এবং অকুপেশনাল থেরাপী

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাতের লেখার সমস্যা কি? এবং সাধারণত কোন কোন ক্ষেত্রে হাতের লেখার সমস্যা হয়?
বর্তমান যুগে মনের ভাব প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম লেখালেখি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু যেমন : অটিজম, এডিএইচডি, লার্নিং ডিসাবিলিটি আক্রান্ত শিশুদের মাঝে হাতের লেখার সমস্যা বেশি বিদ্যমান। এছাড়া স্বাভাবিক শিশুদের হাতের লেখার সমস্যা থাকতে পারে। সাধারণত যে সমস্যাগুলি দেখা যায় সেগুলি হল :
ক. ঠিকমত পেন্সিল বা কলম ধরতে না পারা
খ. অত্যাধিক প্রেশার দেয়ার ফলে পেন্সিলের শিষ ভেঙ্গে যাওয়া বা খাতা ছিড়ে যাওয়া।
গ. হাতের লেখা অত্যাধিক হালকা
ঘ. লেখা লাইনের বাইরে চলে যাওয়া
ঙ. পরিমাণমত বা পর্যাপ্ত ফাঁকা না রাখা
চ. অক্ষর ছোট-বড় হওয়া
ইত্যাদি নানা কারণে হাতের লেখার সমস্যা হতে পারে। হাতের লেখার এই সমস্যাগুলি নানাবিধ কারণে হতে পারে। তারমধ্য নি¤েœাক্ত কারণগুলি অন্যতম-
ক. জন্মের পরে সঠিক সময়ে যদি শিশু ধরতে না পারে তবে পরবর্তীতে হাতের লেখার সমস্যা হয়
খ. শিশু যদি সঠিক সময়ে আঁকিবুকি করতে না শেখে
গ. জন্মের সময় যদি কোন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন শিশুর সঠিক বিকাশ না হওয়ার কারণে
ঘ. মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার কারণে যেমন : সেরেব্রাল পালসি, খিঁচুনি ইত্যাদি
ঙ. হাতের আঙ্গুলের মাংসপি-ে বা জয়েন্টে কোন সমস্যা থাকলে
এগুলা ছাড়াও আরও নানা কারণে হাতের লেখার সমস্যা হতে পারে।
শিশুর হাতের লেখার বিভিন্ন পর্যায় এবং হাতের লেখার আদর্শ সময় কখন?

হাতের লেখা শেখার পদ্ধতি বয়স
আঁকিবুকি শেখা- ১০-১২ মাস
লম্বা লাইন আঁকতে পারা এবং বৃত্ত আঁকতে শুরু করতে পারা - ২৪ মাস
উলম্ব লাইন, অনুভূমিক লাইন আঁকতে পারা এবং বৃত্ত আঁকা শেষ করতে পারে- ৩৬ মাস
চতুর্ভূজ, গুণচিহ্ন, এবং নিজের নাম লেখার চেষ্টা শুরু- ৪৮-৬০ মাস
চতুর্ভূজ পুরোপুরি আঁকতে পারা, নিজের নাম লিখে পারা এবং বাক্য ঘটন করতে পারা- ৭২ মাস
উপরোক্ত পর্যায়গুলো শেষে একটি শিশু লিখে শিখে। কিন্তু মস্তিষ্কের নানাবিধ ত্রুটির কারণে শিশু এই পর্যায়গুলো ক্রমান্বয়ে শেষ করতে পারে না। একটি শিশুর হাঁতের লেখা শুরুর আদর্শ সময় ৪-৬ বছর। কিন্তু আমাদের দেশে বাবা মা আরো আগে থেকেই হাতের লেখা শুরু করার জন্য চাপাচাপি শুরু করে। তাই দেখা যায় যে, শিশু লেখা শিখলেও পরবর্তীতে হাতের লেখার অনেক খারাপ হওয়ার দরুন পড়া যায় না। হাতের লেখা শুরু করার বিভিন্ন পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় শিশুর হাতের লেখার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে না।
অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট যা করে থাকেনঃ
একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট প্রটকোল ব্যাবহার করে থাকেন হাতের লেখার উন্নতিকল্পে। যেগুলা হল-
নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল
সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন
বায়োমেকানিকাল
একুইজেশনাল
বিহেভেরাল

ক. নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল
এই এপ্রোচ ব্যবহার করা হয় শিশুর পোশ্চার, মুভমেন্ট, মাসল টোন, ইকুইলিব্রিয়াম রেস্পন্স, প্রক্সিমাল স্ট্যাবিলিটি, পোশ্চারাল এবং লিম্ব প্রিপারেশন ইত্যাদি ডেভেলপ করার জন্য। এছাড়াও শিশুর প্রি-রাইটিং স্কিল, ম্যানিপুলেশন স্কিল, পজিশনিং, পজিশনিং পরিবর্তন এসব কাজের উন্নতির জন্য এই এপ্রোচ ব্যবহার করা হয়।

খ. সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন
সেন্সরি বিভিন্ন ডিফিকাল্টির সমাধানের জন্য এই এপ্রোচ ব্যবহার করা হয়।

গ. বায়োমেকানিকাল এপ্রোচ
আর্গোনোমেক সিটিং প্যাটার্ন, পোশ্চার, পেপারের পজিশন, কলম বা পেন্সিলের গ্রিপ, ইত্যাদি ঠিক করার জন্য এই এপ্রোচ ব্যাবহার করা হয়। একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট শিশুর এই সমস্যাগুলি নিয়েই কাজ করেন। একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট শিশুর যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখেন-
একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট যাচাই করেন শিশুর বসার চেয়ার এবং টেবিলের উচ্চতা শিশুর মানানসই হয়েছে কিনা, শিশুর পা ফ্লোরে ভালভাবে স্পর্শ করে আছে কিনা, টেবিলের উচ্চতা শিশুর কনুই পর্যন্ত হতে হবে।
হাতলওয়ালা চেয়ার ব্যবহার করতে বলা
টেবিলের সার্ফের উচ্চতা কনুই থেকে ২ সে.মি. উচ্চতায় হতে হবে চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে।

ঘ. একুইজেশনাল এপ্রোচ
এই এপ্রোচে শিশুকে স্ট্রাকচারালভাবে অক্ষররের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং লেখা শিখানো হয়। একইরকম দেখতে বিভিন্ন অক্ষরগুলোকে একিপরিবারের অন্তর্ভুক্ত এইভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, যেমন : ছোট হাতের অক্ষরগুলো ও,ব,ঃ,ষ ইত্যাদি। শিশু এই অক্ষরগুলো লিখতে শিখলে বধঃ, ঃরষব, ষরঃঃষব লিখতে শিখতে পারবে। এইভাবে নতুন অক্ষর এবং শব্দ শিখার মাধ্যমে শিশু একটি বাক্য লিখতে শিখবে।

ঙ. বিহেভেরাল এপ্রোচ
শিশুর মনযোগ বাড়ানোর জন্য, রি-ইনফোর্স করার জন্য, এই এপ্রোচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কিছু ব্যবহারিক থেরাপিউটিক উদাহরণ
শিশুর পোশ্চারেল এবং শোল্ডার স্ট্যাবিলিটির জন্য বারে ঝুলা, বা হুইল বরয়িং ওয়াক করা যায়
কব্জির মুভমেন্ট বাড়ানোর জন্য হাতের মধ্যে ওয়েট বিয়ারিং স্যান্ড ব্যাগের মাধ্যমে, থেরপিাটি ব্যাবহার করে ম্যানিপুলেশন করা, থেরাপাটি টেবিলের কোণায় লাগিয়ে তার নিচে হাত দিয়ে চাপ দিয়ে নামানোর মাধ্যমে কব্জির মুভমেন্ট বাড়ানো যায়।
থাম্ব এবং ইন্ডেক্সের ওয়েব স্পেসের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যা করা যায় নিচে চিত্রে দেখানো হল-
লেখার স্কিল বাড়ানোর জন্য অকুপেশনাল থেরাপিষ্টদের করা বিভিন্ন এডাপ্টেশন(অভিযোজন)
ষ তারিকুল ইসলাম সজীব
ক্লিনিকাল অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট
ইনচার্জ ডিপার্টমেন্ট অফ অকুপেশনাল থেরাপী
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল
এবং মেডিকেল কলেজ
ইমেইল : ংধলরননড়ঃ@মসধরষ.পড়স,
ফোন : ০১৭১১৯৪৯৪০০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাতের লেখার সমস্যা এবং অকুপেশনাল থেরাপী
আরও পড়ুন