পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইট-পাথরের শহরে ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও সবুজ প্রান্তর। এখন ছুটির দিনে নগরবাসিকে কিছুটা নিভৃতে সময় কাটাতে শহর থেকে দূরে কোথায় যেতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় গড়ে উঠা দৃষ্টি নন্দন উন্মুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে হাতিরঝিল লেক অন্যতম। এই করোনাকালে শহরের প্রায় সব পার্ক, শিশুপার্ক, যাদুঘর, ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও হাতিরঝিলে লোক সমাগম বন্ধ হয়নি। শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শত শত মানুষ প্রতিদিন পরিবার নিয়ে হাতিরঝিলে যায় খানিকটা বিনোদনের জন্য। সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে হাতিরঝিলের পুরনো চেহারা পাল্টে নতুন লুক দিতে সক্ষম হলেও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হাতিরঝিলের দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে সেখানে আড্ডা জমাচ্ছে পেশাদার অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদকাসক্ত, বখাটে ও প্রতারকচক্র। প্রায়ই সেখানে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে। বখাটেদের উৎপাতের ঘটনা সেখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। সেই সাথে ছিনতাইকারী-অপরাধী চক্রের হাতে টাকা-পয়সা, মোবাইলফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন অনেকেই। হাতিরঝিলের মত শহরের প্রাণকেন্দ্রের একটি উন্মুক্ত স্থানেই যদি জননিরাপত্তা এমন ঝুঁকির মধ্যে থাকে তাহলে শহরের পার্ক ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রে‘র অবস্থা কি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পানিতে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে নানা মানুষের লাশ। দু’সপ্তাহ আগে ১৫ জানুয়ারি হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি সেতুর পূর্বপাশ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত নভেম্বরে এবং অক্টোবরেও একাধিক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেশ কয়েক বছর ধরেই হাতিরঝিল থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ধারাবাহিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে হাতিরঝিলকে ঘিরে খুনী ও পেশাদার অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়ে চললেও এর বিরুদ্ধে পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। ছিঁচকে চোর, বখাটে যুবক ও মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে দুর্ধষ ডাকাত ও ভাড়াটিয়া খুনী সক্রিয় রয়েছে হাতিরঝিলকে ঘিরে। হাতিরঝিলের স্পটগুলোতে যেমন প্রতিদিন দর্শনার্থীরা নানাভাবে এদের দ্বারা নাজেহাল ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন, আবার শহরের অন্যপ্রান্তের অপরাধীরাও মানুষ খুন করে লাশ গুম করতে হাতিরঝিলকে নিরাপদ বলে মনে করছে। এভাবেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা একটি দৃষ্টিনন্দন স্পট দর্শনার্থীদের জন্য ক্রমেই ভীতিকর করে তোলা হচ্ছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ও ঠিকাদারিতে দ্রততম সময়ে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের দৃষ্টান্তকে একটি রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিশেষত শহরের অনুন্নত মধ্যভাগের একটি মজা খালকে ঘিরে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্যই ছিল শহরের লাখো মানুষের জন্য সান্ধ্য ভ্রমণ ও বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করা। সে লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি নয়নাভিরামভাবে সজ্জিত হয়ে সফল হলেও শুধুমাত্র নিরাপত্তার অভাবে বেড়ানোর জন্য চমৎকার এই স্পটটি এখন ভীতিকর জায়গা হয়ে উঠেছে।
শত শত একর জায়গা জুড়ে লেক, সবুজ চত্বর, বেশকিছু ঝুলন্ত ব্রীজ, ফোয়ারা, ডাইভার্সন রোড, ওয়াকওয়ে, বসার স্থান, রাতের বেলায় মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জায় সজ্জিত এমন স্থান এই মুহর্তে হাতিরঝিল ছাড়া ঢাকায় আর নেই। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকেই হাতিরঝিল নগরবাসির বেড়ানোর জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিনত হয়। দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ার সাথে সাথে টাউট-বাটপার বখাটে, ছিনতাইকারী ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের তৎপরতা বাড়লেও বাড়েনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও নজরদারির ব্যবস্থা। প্রতিদিন সাধারণ মানুষের নাজেহাল হওয়া এবং প্রায়শ ঝিলের পানিতে লাশ ভেসে ওঠার চিত্র থেকেই তা বোঝা যায়। আশার কথা হচ্ছে, গত মঙ্গলবার থেকে হাতিরঝিল কেন্দ্রিক অপরাধিচক্র, মাদকাসক্ত, বখাটেদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেড়শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানা গেলেও এদের বেশিরভাগই থানা থেকে ছেড়ে দেয়ায় তারা আবারো হাতিরঝিলে ফিরে এসে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে হাতিরঝিল থেকে অপরাধীদের ধরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ জন্য অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এসে পুলিশের সাথে যোগসাজশ করে বা মাসোহারার বিনিময়ে অপরাধীরা অপতৎরতা চালানোর সুযোগ পেলে অপরাধ ও জনদুর্ভোগ কখনো কমবে না। হাতিরঝিলসহ রাজধানীর পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোতে পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনাপার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো পাবলিক প্লেসগুলোকে নাগরিকদের নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে বেড়ানোর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই বখাটে যুবক ও সংঘবদ্ধ অপরাধীদের শায়েস্তা করতে হবে। প্রাকৃতিক ও সুষ্ঠু বিনোদনের স্থানগুলোর পাশে গড়ে ওঠা বস্তি, মাদক ব্যবসা এবং ভাসমান পতিতাসহ অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব স্থানে পুলিশি টহল বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত আলো এবং সিসি ক্যামেরার নজরদারির ব্যবস্থা করা হলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।