পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ড. কাজী দীন মুহাম্মদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান। তিনি একজন প্রখ্যাত ভাষাতত্ত¡বিদ ও সাহিত্যিক। পহেলা ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নে, বাংলা ভাষায় প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ছোট বেলা থেকেই কাজী দীন মুহম্মদ লেখালেখি শুরু করেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ছাপা হয়। পরপর তিনটি প্রবন্ধ তিনটি ইস্যুতে ছাপা হয়। পরে কলেজে উঠে সাপ্তাহিক ও মাসিক মোহাম্মদীতে লেখা শুরু করেন। স্কুলে থাকাবস্থায় ‘জঞ্জাল’ নামে একটি গল্প আজাদে ছাপা হয়। সে সময় ড. কাজী দীন মুহম্মদের বেশ কিছু কবিতাও পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়। প্রথমদিকে গল্প ও উপন্যাস দিয়ে লেখা শুরু করলেও পরে অনেক কবিতা লেখেন। তবু তিনি নিজেকে কবি বলে দাবি করতে চাননি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর ১০টি মূল্যবান বইয়ের পান্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেন। তবুও পিছপা না হয়ে, জীবদ্দশায় তিনি ৩৮টি গ্রন্থ রচনা করেন।
ড. কাজী দীন মুহম্মদ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভের পর ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০- এ তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমীর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চার বছর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আর্ট ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষণা পরিষদের সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি বাংলা একাডেমীর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ স্কুল টেক্সটবুক বোর্ডের পাঠ্যক্রম কমিটির সদস্য ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও তৎকালীন দেশের সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লার সদস্য ছিলেন।
জ্ঞানী ও পন্ডিত ড. কাজী দীন মুহম্মদ পুরস্কার ও সম্মাননা হিসেবে ১. বাংলাদেশ দায়েমী কমপ্লেক্স পুরস্কার [১৯৮৯], ২. বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার [১৯৯০], ৩. Distinguished leadership award, American biographical institute published in 7th edition of biographical encyclopedia. ৪. Pandit iswar chandra vidyasagr gold plaque [২০০২] ঃthe Asiatic society, Calcutta, India. ৫. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্প স্বর্ণপদক [২০০৩], ৬. কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার [২০০৪], ৭. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম ব্যাচের পক্ষ থেকে গুণীজন সম্মাননা লাভ করেন।
ড. কাজী দীন মুহম্মদ মূলত ভাষাতাত্ত্বিক রূপে আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী। তবে ভাষাতত্ত¡ ব্যতীত বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়েও তার আলোচনা-গবেষণার নজির রয়েছে। কেবল ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্যের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক এবং ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবেও তিনি সকলের নিকট সম্মানিত ও সুপরিচিত। একজন মৌলিক গবেষক, ভাষাতাত্ত্বিক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ ড. কাজী দীন মুহম্মদ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসও লিখেছেন। তিনি ৮৪ বছর বয়সেও ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি চর্চায় নিবেদিত ছিলেন।
প্রচারবিমুখ, নিরহংকার, সাদা মনের এই জ্ঞানী মানুষটি দেশকে ভালবেসে, অন্য দেশ থেকে আসা বড় বড় চাকরির সুযোগকে হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর কোন মোহই তাক আকৃষ্ট করতে পারেনি। নিরবতাকে পুঁজি করে ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রূপসী শীতলক্ষার পাশে বাঁশ ঝাড়ের ঝিরিঝিরি বাতাস, শীতল পরিবেশে তিনি সমাহিত হন। আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।