পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্যের বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা পর্যায়ে ১১৩টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই ট্রফি বিতরণ করেন। দুই অর্থবছরের জন্য সর্বমোট ৫২টি স্বর্ণ, ৩৭টি রৌপ্য এবং ২৪টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করা হয়। ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত এবং এদের প্রায় সবারই আন্তর্জাতিক পরিচিতিও রয়েছে। রফতানি বাণিজ্যের প্রসারে সবারই সুনির্দিষ্ট অবদান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো : জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স, রিফাত গার্মেন্টস, স্কয়ার ফ্যাশন, স্কয়ার টেক্সটাইল, বেক্সিমকো ফার্মা, প্রাণ এক্সপার্ট, রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ফুড্্স, অ্যাপেক্স ট্যানারি, কারুপণ্য রংপুর, আকিজ জুট, বিআরবি ক্যাবল, প্রাণ অ্যাগ্রো। এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি দু’বছরেই স্বর্ণপদক লাভ করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, প্রতিষ্ঠানগুলো রফতানি আয় বৃদ্ধিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি, একই সঙ্গে উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন ও রফতানি করে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সুনাম বয়ে এনেছে। বাংলাদেশের পণ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিং করে বাণিজ্যবিকাশকে এগিয়ে দিয়েছে। এই অসাধারণ সাফল্য ও কৃতিত্বের জন্য আমরা ট্রফিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠান, তাদের মালিক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।
গার্মেন্ট পণ্য, ওষুধ, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য প্রভৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে অনন্য সাফল্য এসেছে, তার পেছনে রয়েছে উদ্যোক্তাদের বিপুল বিনিয়োগ, সুপরিকল্পনা, উদ্যম, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত কর্মতৎপরতা ও শ্রম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন কিছু সফল উদ্যোক্তার কথা আমরা জানি, যাদের উদ্যম বিপুল, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রচুর। তাদের দেশপ্রেম ঈর্ষণীয়। তারা বাংলাদেশী পণ্যকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিং করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য, ওষুধ সামগ্রী ইত্যাদি এখন বাংলাদেশী পরিচয়েই একের পর এক বাজার দখল করে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের দেশের জন্য আরো অনেক কিছু দেয়ার আছে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ অবারিত করতে হবে। তাদের সকল উদ্যোগে সরকারকে বিনাদ্বিধায় সহযোগিতা করতে হবে। গার্মেন্টের কথা আমরা সবাই জানি। এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের ভূমিকা ও অবদান জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওষুধসামগ্রী একের পর এক আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছে। এখন শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধ উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং এ খাত থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এ জন্য এর উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদপ্রাপ্য। খাদ্যপণ্য, পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যও রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে আন্তর্জাতিক বাজারে ঠাঁই করে নিচ্ছে। তাই সফল উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার জন্য জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান অনুপ্রেরণাদায়ক। তাদের জন্য সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগিতা নির্বাধ করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা উদার ও নিশ্চিত করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রফতানি বাণিজ্যের বিকাশ ঘটছে। প্রতি বছরই রফতানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যাও বাড়ছে। রফতানি ও রফতানি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার দিনকে দিন উন্মোচিত হচ্ছে। রফতানি ও রফতানি আয় বৃদ্ধির সেই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। কথায় বলে, ‘হয় রফতানি বাড়াও, না হয় ধ্বংস হয়ে যাও।’ আমরা যদি আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চাই, তবে অবশ্যই রফতানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। রফতানি বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, শিল্পায়ন দ্রুতায়িত করতে হবে। এটা সত্য, বিনিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলছে। ফলে শিল্পবিকাশও প্রত্যাশানুপাতে ঘটছে না। বিনিয়োগ ও শিল্পবিকাশের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। জমির অভাব, রাস্তাঘাটের অভাব, বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব এবং ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে ব্যয়াধিক্য, দুর্নীতি ইত্যাদির কথা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এসব সমস্যার সমাধান যথাশিগগির না করা গেলে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে কাক্সিক্ষত গতি আসবে না। সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগ-শিল্পায়নের বাধা অবশ্যই দূর করতে হবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আয়লক্ষ্য অর্জন মোটেই কঠিন নয়। এ জন্য উৎপাদন ও রফতানির পরিবেশ অনুকূল নিশ্চিত করতে হবে। এই সঙ্গে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের বহুমুখীকরণের দিকেও নজর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে অন্যান্য দিকের উল্লেখসহ নতুন বাজার সন্ধান ও পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আমরা আশা করি, উদ্যোক্তা, শিল্পমালিক ও রফতানিকারকরা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।