Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিমানবন্দর সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলের ২৬টি জেলার সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধানতম সড়ক এয়ারপোর্ট রোড। এটি অন্যতম গেটওয়ে হিসেবেও পরিচিত। এর সাথে রয়েছে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর। এই দুই গেটওয়ের মিলনস্থল এয়ারপোর্ট গোলচত্বর। সড়কটি ব্যস্ততম ও দ্রুত গতির। গোলচত্বরকে কেন্দ্র করেই এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল, আন্ডারপাসসহ ৬টি মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনকে কেন্দ্র করে মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। বাকিগুলোর কাজও শিঘ্রই শুরু হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করতে গিয়ে সড়ক যেমন দখল করতে হয়েছে, তেমনি এর নির্মাণে বড় বড় স্ল্যাব ও মালামালও সড়কের ওপর রাখা হয়েছে। এমনিতেই এক্সপ্রেস ওয়ের বড় বড় পিলার তৈরি করতে গিয়ে সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখলে চলে যাওয়ায় তা সরু হয়ে গেছে, তার ওপর স্ল্যাব ফেলে রাখায় যানবাহন চলাচল অত্যন্ত দুরুহ হয়ে পড়েছে। সরু রাস্তা দিয়েই যানবাহন এক গোলক ধাঁধাঁর চক্করের মতো চলাচল করছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিমানবন্দর চত্বর ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলার কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় যানবাহনের দীর্ঘ যানজট সবসময় লেগে থাকে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় বাসগুলো সরু রাস্তার উপর থামিয়েই যাত্রী উঠা-নামা করায় এতে যানজট পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে এক দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

বিগত এক দশক ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ককে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম চালাতে গিয়ে সড়কগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় যান চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। একসঙ্গে বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যেকোনো প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে কিভাবে এর যানবাহন চলাচল গতিশীল রাখা যায়, এ পরিকল্পনা আগেভাগে নেয়া জরুরি। প্রকল্পের কাজের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে এটা যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, তেমনি ভোগান্তি যতটা কম হয় এ পরিকল্পনা নেয়াও অপরিহার্য। প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কি হবে, কীভাবে যানবাহন চলাচল করবে তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে হয়। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীকে কেন্দ্র করে যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার বিকল্প পথ খুবই কম এবং যানবাহন চলাচলের নিয়মতান্ত্রিক কোনো প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। সড়কের কোনো অংশে অপ্রতুল জায়গা, আবার কোনো কোনো সড়ক একেবারে বন্ধ করে বছরের পর বছর ধরে কাজ করা হচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচল বিশৃঙ্খল হয়ে পুরো রাজধানীকে যখন-তখণ অচল করে দিচ্ছে। রাজধানীর অভ্যন্তরসহ এয়ারপোর্ট রোডে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে যানবাহন চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা রাখা উচিৎ ছিল। তাহলে যানজট, বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ এত প্রকট হতে পারতো না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ‘ডিমান্ড মডেল’ তৈরি হয়নি। কোন জায়গায় কখন কোন ধরনের প্রকল্প নির্মাণ করতে হবে, তার সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। ফলে যখন খুশি তখন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হচ্ছে এবং চরম জনভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ এবং তা শুরুর পরিকল্পনার মধ্যে গলদ রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে সেটি শেষ হবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। এই সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। বিমানবন্দর গোলচত্বর ঘিরে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলোর সম্ভাব্যতা ও প্রয়োজনীয়তার কাজ করা হয়েছে আলাদাভাবে। যদি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ সমন্বিতভাবে করা হতো, তাহলে এত জটিলতা সৃষ্টি হতো না। আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত কার্যব্যবস্থার বড়ই অভাব দেখা যায়।

বিমানবন্দর গোলচত্বর অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। এখানে বাস স্টপ ও রেল স্টেশনও রয়েছে। বিমান থেকে নেমে রাজধানীতে সহজে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাস ও রেল স্টেশন অত্যন্ত জরুরি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটির গঠন এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল হওয়া প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, এলাকাটিই বিশৃঙ্খল হয়ে রয়েছে। একদিকে মেগা প্রকল্পের সমন্বয়হীন কাজ চলছে, অন্যদিকে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা নেই। এখন করোনার কারণে বিমান চলাচল কম থাকায় বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরতদের চাপ নেই বললেই চলে। করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক সময়ে যখন চাপ বাড়বে, তখন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। বিদেশীরা বিমান থেকে নেমে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে নাজেহাল হলে দেশের ভাবমর্যাদা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মনে করি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তবে তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সমন্বয়হীন ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হওয়া কাম্য হতে পারে না। বিমানবন্দর এলাকায় প্রকল্পের কাজ সহজ করার পাশাপাশি যাতায়াত ও ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করা অপরিহার্য। এখানে যেসব বাস স্টপেজ রয়েছে সেগুলো দূরে সরিয়ে সংকুচিত হওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল মসৃণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত স্ল্যাব ও অন্যান্য উপকরণ সড়কের উপর ফেলে রাখা যাবে না। এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে, যাতে যান চলাচলে বিঘ্নিত না হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমানবন্দর-সড়ক
আরও পড়ুন