যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
দুধ এক প্রকার খাদ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ সাদা তরল পুষ্টিকর পানীয়। যা মানব দেহের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা জরুরি প্রয়োজন। সুষম খাবার তালিকায় দুধের গুরুত্ব অত্যধিক। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের প্রধান অংশই দুধ। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সবারই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আছে দুধ। দুধের বহুবিদ গুণ রয়েছে।
দুধের খাদ্যমান ও পুষ্টিগুন বিষয়ে ঢাকার গেন্ডারিয়াস্থ আজগর আলী হসপিটালের চীফ ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন,
১. তরল পানিয় দুধে রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিমান ও মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁতের গঠন ও বিকাশে উপকারী। দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকা আমিষ দাঁতের এনামেলের ওপর প্রতিরোধী পাতলা স্তর গড়ে তোলে, মুখের ভেতর দাঁত এসিডের সংস্পর্শে আসলে এটি তখন দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ক্ষয় রোধ করে। প্রতি বেলা আহারের মধ্যবর্তি সময়ে পানি বাদে দুধই হচ্ছে আরেকটি নিরাপদ পানীয়, কারণ দেখা গিয়েছে দুধ দাঁত ক্ষয়ের সবচে নাজুক অবস্থাতেও দাঁতের ক্ষয় সাধন করে না।
২. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন ও বিকাশে খুব দরকারী। ছোটবেলা থেকে শুরু করে সারা জীবনব্যাপী দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ হাড়কে করে মজবুত আর রক্ষা করে অস্টিওপোরোসিস নামের হাড়ক্ষয়কারী রোগ থেকে। যদি দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রতিদিনের আহারে না থাকে, তবে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে যা বিশেষ করে মহিলাদের আর বয়স্কদের চিন্তার বিষয়। ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে অস্টিওপোরোসিস নামক হাড়ক্ষয়কারী রোগ হতে পারে। শুধুমাত্র ফল ও সব্জি খেলে যে উপকার হত, তারচে ফল, সব্জি আর স্বল্প চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার নিয়মিত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকরী।
৩. দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে ‘উচ্চমান সম্পন্ন আমিষ’ যা মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয়। দুগ্ধজাত আমিষ শরীরে অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহের মাধ্যমে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কমতি থাকা ‘সিরিয়াল’ ও সবজিজাত সাধারণ মানের আমিষের পুস্টিমান বাড়িয়ে তোলে।
৪. বেশ কিছু গবেষণায় দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের সাথে হৃদরোগের লক্ষণসমূহ হ্রাসের একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে। দেখা গেছে যারা স্বল্প পরিমাণে দুধ পান করেছিলেন তাদের চাইতে যারা বেশি পরিমাণে দুধ (বিশেষত সর বাদ দিয়ে) পান করেছিলেন তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম। এক্ষেত্রে আরো অন্যান্য নিয়ামক থাকতে পারে, তবে স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ রক্তে বাজে কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমিয়ে থাকতে পারে, আর ভাল কোলেস্টরেলের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকতে পারে। অধিকতর বাজে কোলেস্টরেল আর কম পরিমাণ ভাল কোলেস্টরেল দুটোই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. প্রচলিত ধারণার বিপরীতে জানা গেছে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন না তাদের চাইতে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন তারা তুলনামূলক ঝরঝরে শরীরের অধিকারী হয়ে থাকেন। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত সুষম খাবারের অংশ হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে ওজন হ্রাস ত্বরান্বিত হতে থাকে, বিশেষ করে তলপেট থেকে যেখানটায় বেশি চর্বি থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
৬. নিয়মিত কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়। যা এখন শুধু বয়স্ক নয়, শিশু-কিশোরদেরও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের এই উপকারিতার পেছনে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য দরকারি পুস্টিগুণের সমন্বিত অবদান আছে নয়ত এতে থাকা স্বল্প গ্লাইসেমিক সূচক রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এ বিষয়ে সেলিনা বদরুদ্দিন আরো বলেন, শরীরে পানিশূণ্যতা হলে দুর্বল মনযোগ, স্মরণশক্তির এলোমেলো ভাব, অনুভূতির অবসাদগ্রস্থতা আর ভাল না লাগার রোধ করতে পারে দুধ। তরল খাবার হিসেবে পানির পাশাপাশি দুধ সত্যিই দারুণ, যা শুধু শরীরের জলীয় মাত্রার পরিপূরণ করে না, সেইসাথে প্রচুর পুস্টিমান দিয়ে থাকে। পাশাপশি নিয়মিত দুধ পান মলাশয় ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে।
মলাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ক্যালসিয়াম ও দুধে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট ‘কনজুগেটেড লিনোলেয়িক এসিড’ প্রতিরোধমূলক কাজ করে থাকে বলে বিবেচিত হয়। যারা নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মলাশয়ের ক্যান্সার হবার হার কম।
এ ছাড়াও অসাধারণ কয়েকটি গুণ রয়েছে গরুর দুধে। গরুর দুধ দেহ শক্তিশালী ও মন তরতাজা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আহতদের দ্রæত আরোগ্য লাভে গরুর দুধ সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে। গরুর দুধ ভোক্তাকে দীর্ঘায়ু লাভে সাহায্য করে। দুধপান যৌবনও ধরে রাখে। মেধা, মনন বিকাশ ও স্মৃতিশক্তিকে শাণিত করতে গরুর দুধের জুড়ি নেই। গরুর দুধ অবসাদ ও বিষ্ণণতা দূর করে। দিনমান কাজ শেষে এক গ্লাস দুধ মুহূর্তেই ফুরফুরে করে তুলতে পারে মন-মেজাজ। মাথা ঘোরা, দেহে বিষাক্ততা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, তীব্র তৃষ্ণা ও ক্ষুধা, অনেক দিনের জ্বর দূরীকরণে গরুর দুধ অত্যধিক কার্যকর। নারীর রক্তপাত বন্ধে গরুর দুধের জুড়ি নেই। মনে রাখতে হবে দুধের সর বাদ দিয়ে বা লো ফ্যাট দুধ পান করতে হবে।
পরিশেষে বলতেই হয়, নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন। কাজেই নিয়মিত দুধ পান করুন। শরীর সুস্থ রাখুন।
আলম শামস
কবি ও সাংবাদিক
মোবাইল ০১৭১৫৮৯১৫৩৩।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।