Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানসম্পন্ন করোনা ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বিশ্ববাসীর মনে আশা সঞ্চার করেছে। বহু দেশে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। হু’র তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৫০টি দেশ করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে ৪০টির বেশি উচ্চ আয়ের দেশ। ব্রিটেনের রানীসহ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতা ও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।কয়েকটি দেশ তাদের সব নাগরিককে বিনা মূল্যে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা করেছে।ফলে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য,করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু শংকাও রয়েছে। কারণ, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অনেক দেশে কিছু মানুষের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে কারো কারো। সর্বোপরি করোনার টিকা নিয়ে বাণিজ্য জমজমাট হয়েছে। ধনী দেশগুলো উৎপাদিত টিকার বেশিরভাগ ক্রয় করেছে ও ক্রয়াদেশ দিয়েছে। তাই গরীব দেশগুলো ও গরীব মানুষ এই টিকা পাবে কি-না তা নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছে।

করোনা বহুরূপী। একেক দেশে একেক রূপ ধারণ করেছে। আবার একই দেশে বহুবার রূপ পরিবর্তন হয়েছে। ফলে, করোনার সংক্রমণ ক্ষমতার তারতম্য অনেক। সর্বশেষ যুক্তরাজ্য ও দ.আফ্রিকায় এক নতুন ষ্ট্রেন দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, নতুন স্ট্রেন আরও প্রাণঘাতী। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসিও একই কথা বলেছে। আর দ.আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকা দিয়ে নতুন ষ্ট্রেনের করোনা প্রতিরোধ করা যাবে না! অবশ্য মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনার নতুন যে স্ট্রেন পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে মডার্নার কোভিড-১৯ টিকা কার্যকর। যা’হোক, করোনার নতুন ষ্ট্রেন ৬০টি দেশে ছড়িয়েছে বলে হু জানিয়েছে। তাই সেসব দেশে পুনরায় লকডাউন-কারফিউ জারী করা হয়েছে। এদিকে, করোনায় এ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি মানুষ আক্রান্ত ও প্রায় ২১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ও পুরুষ মানুষ বেশি। আক্রান্ত ও মৃতের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এই অবস্থায় গত ১৮ জানুয়ারি হু’র জরুরি সেবা কার্যক্রমের প্রধান বলেছেন, ‘শিগগিরই করোনায় বিশ্বে প্রতি সপ্তাহে ১ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তাই করোনাভীতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বব্যাপীই!

করোনার কারণে বৈশ্বিক মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কর্ম হারিয়ে দরিদ্র হয়েছে। বৈশ্বিক দারিদ্র ১৩ কোটি বেড়ে হয়েছে ৮২ কোটি। খাদ্য সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ অপুষ্টির শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপরন্তু, করোনা রুগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রচন্ড চাপে পড়ে বেশিরভাগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি ধনী দেশগুলোও এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায়নি। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রকৃতি বিরোধী কর্মের কারণেই করোনা মহামারি সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু এই ব্যাধি হয়তো কখনও দূর হবে না। অন্যসব ভাইরাসের মতোই থেকে যাবে।উপরন্তু করোনা সৃষ্ট যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামের মতে, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা থেকে যাবে।

যা’হোক, করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে চীন, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ অন্যতম। এই সব দেশের বিজ্ঞানীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে মাত্র এক বছরের মধ্যেই তারা সফল হয়েছেন, যা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। কারণ, কোন ভাইরাসেরই ভ্যাকসিন এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়নি। কমপক্ষে ৫-৬ বছর লেগেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও অধিক সময় লেগেছে। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক বছরের মধ্যেই।সর্বোপরি সব ট্রায়াল শেষে এখন বাজারে এসেছে ফাইজার, অক্সফোর্ড, ভারত, ইরান এবং চীনের ‘করোনাভ্যাক’ ও রাশিয়ার ‘এপিভ্যাককরোনাইত্যাদি ভ্যাকসিন, যা ইউরোপের দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত,চীন, ব্রাজিলসহ অনেক দেশে প্রয়োগ হচ্ছে। প্রতিটি মানুষকে ৪ সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বার একই টিকা গ্রহণ করতে হবে। ফলে টিকার পরিমাণ লাগবে দ্বিগুণ। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তি নির্ণয় করে প্রথমে ফ্রন্ট লাইনের লোকজন ও বয়স্কদের টিকা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যাদের করোনা হয়েছিল, তাদেরও টিকা নিতে হবে। উপরন্তু টিকা নেওয়ার পরও মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া, যাদের অ্যালার্জি ও নানা জটিল সমস্যা রয়েছে তারা এবং অন্তঃস্বত্তা নারীদের করোনার টিকা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ পর্যন্ত যেসব করোনার টিকার ব্যবহার শুরু হয়েছে, তারমধ্যে অক্সফোর্ডের টিকাই সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যা ‘কোভিশিল্ড’ নামে অভিহিত, ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনোভিত্তিক সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদন করা হচ্ছে।এ নিয়ে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সেরাম ইনস্টিটিউট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাই সেরামকে বিল গেটসের ফাউন্ডেশন ১৫ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে তিন ডলার মূল্যে টিকা দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। অবশ্য, অক্সফোর্ডের টিকা থাইল্যান্ডেও উৎপাদন করা হচ্ছে সীমিত আকারে। যা’হোক,ভারতে ভারত বায়োটেক- ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকা তৈরি হচ্ছে। এটার শেষ ট্রায়াল হওয়ার আগেই বাজারজাত করায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। তবে, মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট ইনফেকসাস ডিজিজ বলেছে, ‘কোভ্যাক্সিন মানবদেহের পক্ষে নিরাপদ এবং কার্য্যকর’। অপরদিকে,চীন ও ইরান তাদের নিজস্ব উৎপাদিত টিকা ব্যবহার করছে। পাকিস্তান, তুরস্ক, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশে চীনের ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ও ফাইজারের টিকা বেশি ব্যবহার হচ্ছে।

কয়েকটি কোম্পানির টিকা ব্যবহারের পর ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মারা গেছে কিছু ব্যক্তি। ইসরায়েলে করোনার টিকা নেওয়ার পর অনেক মানুষের মৃদু ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয়েছে। করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এটি হয়েছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত। নরওয়েতে ফাইজারের টিকা নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।অবশ্য এ জন্য টিকা দায়ী না, অন্য জটিল ব্যাধির কারণে তাদের মধ্যে হয়েছে তা চিহ্নিত হয়নি। ভারতে ১৬-১৯ জানুয়ারি টিকা নেওয়ার পর সাড়ে ছয়শ’ লোকের নানা ধরনের অসুস্থতার উপসর্গ দেখা গেছে। কয়েকজন মারা গেছেন। এই অসুস্থ ও মৃতের মধ্যে কারা ‘কোভিশিল্ড’ আর কারা ‘কোভ্যাক্সিন’ নিয়েছে, সেটা নির্ণয় করা হয়নি। শুধুমাত্র ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় গত ১৯ জানুয়ারি জানিয়েছে, ‘ভারতে প্রথম চারদিনে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৪.৫৪ লাখ মানুষ। তন্মধ্যে সামান্য অসুস্থ হওয়ার হার ০.১৮%, আর ভ্যাকসিন নেয়ার পর মৃত্যুর হার ০.০০২%’। এই অবস্থায় ভারতে প্রথম দফায় টিকা নিতে অগ্রাধিকার পাওয়াদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ টিকা গ্রহণ করেনি। তাই ভারতে অনাগ্রহ কাটিয়ে দেশবাসীকে টিকায় আরও বেশি আগ্রহী করে তুলতে টিকা নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও দ্বিতীয় দফায় টিকা গ্রহণ করবেন বলে খবরে প্রকাশ। মডার্নার টিকায় অ্যালার্জিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে করোনা-লকডাউন ও ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। উপরন্তু বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ধরা পোস্টারে লেখা ছিল, ‘কোভিড ভ্যাকসিন বিষ’। ফাইজারের টিকার উৎপাদন হ্রাস করার কারণে স্পেন, হাঙ্গেরীসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে এর ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই হাঙ্গেরী রাশিয়ার টিকা নেওয়ার চুক্তি করেছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ মানুষ টিকা নিতে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে। অপরদিকে, টিকা দেওয়ার পরও ইসরাইলে অনেকের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তবে, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান বলেছেন, টিকার পুরো কার্যকারিতা তৈরি হতে কমপক্ষে দু-সপ্তাহ বা সম্ভবত আরো বেশি সময় লাগে। করোনা টিকা গ্রহণে মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে উৎসাহী করা হচ্ছে।

করোনায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে কয়েক লাখ। তাই দেশে করোনা নিয়ে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। তাই দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। এই টিকা ১৮ বছরের নিচের কাউকে দেওয়া হবে না। প্রথম পর্যায়ে ফ্রন্ট লাইনের ও বয়স্কদের টিকা দেওয়া হবে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একটি করে টিকা কেন্দ্র করা হবে। এছাড়া, রাজধানী ঢাকায় ৩০০টি কেন্দ্র করা হবে। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রথম দফায় করোনার টিকা দেয়া হবে। এরপর একযোগে সারা দেশে টিকা দেয়া হবে। ভারতের অক্সফোর্ডের ৩ কোটি টিকা আনবে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ও সেরামের চুক্তি হয়েছে। এই টিকা পাওয়ার পর প্রতিদিন ২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে (তন্মধ্যে ঢাকায় প্রতিদিন ন্যূনতম ৪৫ হাজার মানুষ) বলে খবরে প্রকাশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ৪ ডলার দরে টিকা কিনছে ভারত থেকে। আর পরিবহন খরচ এক ডলার।উপরন্তু ফাইজার–বায়োএনটেকের তৈরি টিকা নেওয়ার জন্য হু বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে’। বাংলাদেশে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে টিকা প্রদান। এজন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের রেজিস্ট্রেশন।এ জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে একটি ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া, গত ২১ জানুয়ারি ভারত থেকে কোভিশিল্ডের ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। এটি মূলত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য উপহার। এই টিকা দিয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে। ভারত থেকে চুক্তির ৫০ হাজার টিকার প্রথম চালান এসেছে গত ২৫ জানুয়ারি। স্বাস্থ্যসেবা সচিব বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকা দেয়া হবে।তবে বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আনার কয়েকটি আবেদন আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। তাদের অনুমতি দেয়া হলে সেই টিকা নাগরিকদের কিনতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনটি জায়গায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে। মহাখালীর সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান কার্যালয়, তেজগাঁর সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির নিজস্ব সংরক্ষণাগার ও তেজগাঁর কেন্দ্রীয় ওষুধাগার। ভ্যাকসিন ‘ওয়াক ইন কুল’ নামে ছোট ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হবে। দেশের ২৯টি জেলায় ওয়াক ইন কুল আছে। আরও ১৮টি জেলায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ওয়াক ইন কুল তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ‘আইএলআর’ নামের হিমায়িত বাক্সের মধ্যে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। ভ্যাকসিন পরিবহন করা হবে আলাদা হিমায়িত বাক্সে’। খবর প্রকাশ, ভারতের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে ৬ মাস লাগবে’।টিকা সংরক্ষণকৃত স্থানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী গত ২০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেছেন, কোভ্যাক্সের ৩.৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে’। একই দিনে স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, ‘দেশে অন্তত ৮-৯ কোটি মানুষকে যেন টিকা দেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে করে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে’। কিন্তু হু’র গাইড লাইন হচ্ছে: ‘প্রতিটি দেশের ৮০% মানুষকে টিকা দিতে হবে।বাকী ২০% মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে’। হু’র এই গাইড লাইন মতে, এ দেশে প্রায় ২৫ কোটি ডোজ টিকা দরকার। কারণ, দেশের মানুষ প্রায় ১৭ কোটি।তন্মধ্যে অসুস্থ, গর্ভবতী ইত্যাদি কারণে ১ কোটি লোক টিকার বাইরে থাকতে পারে। তাহলে অবশিষ্ট থাকে ১৬ কোটি মানুষ। এর ৮০% মানুষকে টিকা দিতে হবে এবং দুই বার করে। তাই ২৫ কোটি ডোজ টিকা দরকার হতে পারে।ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের এক জরিপ মতে,দেশের ৩২% মানুষ টিকা কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে টিকা নিতে আগ্রহী। আগ্রহী আরও ৫২% মানুষ আছেন, তবে তারা ঠিক এ মুহূর্তেই টিকা নিতে রাজী নয়। তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা নিতে আগ্রহী।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীব বিজ্ঞানী ও দেশে দ্রুত করোনা সনাক্তকরণের কীট আবিষ্কারক ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, ‘ভারতে তৈরি অক্সফোর্ডের টিকা বাংলাদেশ-ভারতের উপযোগী। তারপরও এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না তা যাচাই করতে ১৫ দিন অপেক্ষা করা উচিৎ বাংলাদেশের। কারণ, ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে এর ফলাফল কি আসে সেটি দেখার জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করা দরকার। সেখানে এই টিকার প্রভাব ভালো হলে বাংলাদেশের মানুষের দুশ্চিন্তা চলে যাবে।

বিশ্বের শীর্ষ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে: যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। যেমন: শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার স্থানটি লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া, তিন দিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। তবে, এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়। শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তবে, সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই আবিষ্কৃত করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত যেগুলো সর্বাধিক মানসন্মত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা-ভ্যাকসিন
আরও পড়ুন