Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীত-কুয়াশায় জনদুর্ভোগ

ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

মাঘের আবহাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কনকনে হিমেল হাওয়া বইছে। সেই সাথে দেশের বেশিরভাগ জেলায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে নানামুখী জনদুর্ভোগ। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক এলাকায় শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠির শীতকষ্ট অবর্ণনীয়।

ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে দিন এনে দিন খাওয়া গরীব মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। সর্দি-কাশি, জ¦র, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুস ও টনসিলের জটিলতাসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা সঙ্কুচিত হওয়ায় সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ও নৌপথে ফেরিসহ নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যান চলাচলে ঝুঁকির কারণ তৈরি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৮.৩ এবং সর্বোচ্চ সীতাকুন্ডে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ২৪.৩ এবং সর্বনিস্ন ১৪ ডিগ্রি সে.। মওসুমের বর্তমান সময়ের তুলনায় রাত ও দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই রয়েছে। গতকাল দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কি.মি. বেগে কনকনে হিমেল হাওয়া অব্যাহত থাকে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের হার বেশি রয়েছে। ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের হার ছিল গতকাল সকালে ৯৬ শতাংশ ও সন্ধ্যায় ৭৩ শতাংশ।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পুর্বাভাসে জানা গেছে, সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্তমানে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

কনকনে ঠান্ডায় আবারও জবুথবু কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান : শীত ও কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় উত্তরীয় হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে ঠান্ডার মাত্রা। এ অবস্থায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।
এর আগে গত তিনদিন ধরে দিনের বেলা সূর্যের দেখা মিললেও রাত ৮ টার পর ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল প্রকৃতি এবং তা অব্যাহত ছিল সকাল ১০টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত। গতকাল মঙ্গলবার বেলা গড়িয়ে গেলেও মিলছে না সূর্যের দেখা। কুয়াশায় ঢাকা আছে প্রকৃতি।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সুবল চদ্র সরকার জানায়, গতকাল মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষি শ্রমিকরা। বোরো চাষের ভরা মৌসুম চললেও কনকন ঠান্ডায় শ্রমিকরা ঠিকমত মাঠে কাজ করতে না পারায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে বোরো আবাদ। কনকনে ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ বাড়ছে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র পারিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক আরমান আলী জানান, এই ঠান্ডায় এমনিতেই হাত-পা বাইরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তার উপর পানিতে নামিয়ে চারা লাগানো অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম শহরের রিকসা চালক আলম মিয়া জানান, গত কয়কদিন রাতের বেলা ঠান্ডা বেশি থাকলেও দিনের বেলায় তেমন ঠান্ডা ছিল না। এখন যে অবস্থা তাতে গরম জামা কাপড় গায়ে লাগিয়ে রিকসা নিয়ে বেড়িয়েছি। ঠান্ডায় থাকা যাচ্ছে না। শিরশির বাতাস জামা-কাপড় ভেদ করে ভিতরে ঢুকছে।

অন্যদিকে টানা শীতে জেলার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীত জনিত রোগ।

কুড়িগ্রাম জনারল হাসপাতালর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পুলক কুমার সরকার জানান, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন ডায়রিয়া ও ৬ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে গত ১৫ দিন ধরে রোগীর সংখ্যা একটু বশি বলে জানান তিনি।
শীতে কাঁপছে মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান : টানা কয়েক দিন থেকে শীতের তীব্রতায় কাঁপছে মৌলভীবাজার। জেলার উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত প্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে রয়েছে পুরো জেলা। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের তীব্রতায় ছিন্নমুল ও দিনমজুররা পড়েছেন সীমাহীন কষ্টে। সাধারণ মানুষের জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেও ঘর থেকে বাহির হচ্ছেন না। কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী হাওরপাড় ও চা বাগান এলাকার শ্রমজীবি মানুষ ভোগান্তিতে পরেছেন। দিনে ও রাতে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকেই।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল সহ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স গুলোতে শীতজনিত রোগ সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের নিয়মিত ভর্তি অব্যাহত রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, তাপমাত্রা কমেগেলে ও ঘনকোয়াশা থাকায় বোরো ধান চাষাবাদে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। অনেক সময় বীজ তলায় চারা গজাতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়াও ঘন কোয়াশা দীর্ঘনি থাকলে ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমের প্রথম দিকে অর্থাৎ গত ৮ নভেম্বর থেকে মৌলভীবাজার অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নীচে নেমে আসে। এর কয়েকদির পর থেকে তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা নামা করে।

মৌলভীবাজারস্থ শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে। ঘন কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত-কুয়াশা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ