পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাঘের প্রথম দিনের তুলনায় পরদিন গতকাল শনিবার শীত ও কুয়াশার দাপট অনেকটাই কমেছে। নিম্নতম তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির ঘরে, যা আগের দিনে নামে ৬.৫-এ। ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন এবং আবার অনেক জায়গায় মেঘমুক্ত উজ্জ্বল সূর্য কিরণে দিনের বেশিরভাগ সময়জুড়েই রোদের তেজ থাকায় উত্তর-পশ্চিমের হিমেল হাওয়া ততটা জোরালো নয়।
তাছাড়া বাতাসে জলীয়বাষ্পের হার অধিক (ঢাকায় সকালে ৯০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬৬ শতাংশ)। ঊর্ধ্বাকাশের শীতল জেটবায়ু নিচের দিকে নামেনি। এসব কারণে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের শীতের সম্ভাবনা আপাতত কম।
আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপরের ৫ দিনের শেষের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মাঘের শীত নামানো সম্ভাব্য এই বৃষ্টির পর বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে ৭.৯ এবং সর্বোচ্চ টেকনাফে ২৯.৪ ডিগ্রি সে.। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ২৩.৬ এবং সর্বনিম্ন ১৩.৬ ডিগ্রি সে.। আগের দিনে নওগাঁয় পারদ নামে ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দেশের নদ-নদী অববাহিকায় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
তবে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলাগুলো। ঘন কুয়াশা আর কাঁপুনি দেয়া ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন :
রংপুর থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান : তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরসহ উত্তরের ৮ জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অসহনীয় শীতের কারণে গরম কাপড়ের অভাবে নিম্ন আয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। কাহিল হয়ে পড়েছেন শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে নিত্যদিনের স্বাভাবিক কর্মকান্ড। শীতের কারণে বেড়ে চলেছে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে গতকাল শনিবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তি থাকলেও সন্ধ্যার পর পরই তাপমাত্রা নামতে থাকে। সে সাথে বইতে থাকে প্রচন্ড হিমেল হাওয়া।
গত দু’দিন ধরে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি রংপুরের ৮ জেলায়। পশ্চিমা লঘুচাপ আর পূবালী বাতাশের সংমিশ্রনে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরতে থাকায় সন্ধ্যার পরপরই হাট-বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। কুয়াশার কারণে ১০ ফুট দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঠান্ডায় হাত-পা শিষ লেগে যাচ্ছে। মানুষ কোন কাজকর্ম করতে পারছে না। দিনের বেলায়ও সূর্যের দেখা মিলছে দুদিন ধরে। ফলে মানুষ কাঁথা-কম্বল শুকাতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলে মানুষ রাতের অধিকাংশটাই আগুনের তাপ নিয়ে শীত নিবারণ করছে। চরাঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। গরম কাপড়ের অভাবে নদী তীরবর্তী ছিন্নমূল মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। প্রচন্ড শীতের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র লোকজন। শীত বস্ত্রের অভাবে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়া শীতের কারণে কোল্ড-ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এ অঞ্চলে। এসব রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। অন্যদিকে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে সদ্য রোপণ করা বোরো ক্ষেতসহ শীতকালীন সবজি ক্ষেতের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান : ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনে (শুক্রবার-শনিবার) সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে।
তীব্র শীতে ও ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কমে গেছে। হাতে কাজ না থাকায় চরের অভাবী মানুষের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্র মানুষগুলো চরম কষ্টে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিনাতিপাত করছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহ জেলার ৫টি উপজেলায় তীব্র শীতের কারণে গ্রামাঞ্চলসহ তিস্তা-ধরলা বেষ্টিত ৬৩ চরের মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বেকায়দায়। গত শুক্রবার দিনভর মৃদু কুয়াশা ছিল। সন্ধ্যা নামার সাখে সাথে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা জেলা। গতকাল শনিবার শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবন বির্পযস্ত করে তুলেছে। সন্ধার পর থেকে এর ঘনত্ব বাড়ে। রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। গতকাল শনিবার সারা দিন হিমেল হাওয়ার কারণে রাস্তা ঘাট ছিল ফাঁকা। ফলে জেলা শহরের বিপণি-বিতান, রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে লোকজন নাই বললেই চলে।
গত শুক্রবার থেকে গতকাল শবিার সারাদিন কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারনে হতদরিদ্র মানুষগুলো আগুন জালিয়ে শীত নিবারন করছে। এলাকায় ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় শহর ও গ্রাম। ফুটপাতের সবজি, মাছ, ফলমূল ও শীতের কাপড় ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনা না থাকায় তারা দোকান গুছিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও ভাড়ার আশায় আর বসে থাকছেন না।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট শহরের স্টেশন এলাকার রিকশাচালক একরাম মিয়া বলেন, গত শুক্রবার রিকশা চালানো গেলেও শনিবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালানো সম্ভব হয়নি। বেলা ৩টার দিকে মাত্র ৪/৫ জন যাত্রী পরিবহন করেছি। সবজি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, কুয়াশার কারণে মানুষজন বের হচ্ছে না। এ কারণে অর্ধেক সবজিও বিক্রি হয়নি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামীম আশরাফ বলেন, বাতাসের আদ্রতা প্রায় ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ হওয়ায় কুয়াশার এত ঘনত্ব বেড়েছে। আবহাওয়ায় উচ্চ বলয় চাপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তাপমাত্র সর্বনিম্ন ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে। কুয়াশা আরও দু-একদিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান : উত্তরের জেলা নীলফামারীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত দু’দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা বিরাজ করছে এই জেলায়। এতে করে দূর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষজন। ঘন কুয়াশার কারনে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনের বেলাতেও কুয়াশার কারনে ভারি যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীত নিবারণ করতে গরম কাপড় সংগ্রহে নিম্ন আয়ের মানুষরা পৌরসভা মাঠের পুরানো কাপড়ের বাজারে ভীড় করছেন। এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব বেড়েছে। আর এই রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ বয়সীরা।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা : কথায় আছে- মাঘের শীতে বাঘ পালায়। মাসের শুরুতেই জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটেখাওয়া মানুষ। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় বাড়িয়ে দিয়েছে কনকনে ঠান্ডার মাত্রা। রাত থেকে সকাল অবধি বৃষ্টির মত ঝড়ে কুয়াশা। দুপুরের পর স‚র্যের দেখা মিললেও থাকেনা রোদের তীব্রতা। এতে বিপাকে রয়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। দরিদ্র ও অসহায়রা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে, এ অঞ্চল দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
ট্রাক চালক আবু সাঈদ বলেন, পেটের ফিকিরে শীত উপেক্ষা করেও গাড়ী চালাতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে তা কষ্টকর হয়ে উঠছে। এতে ধীরে ধীরে যেতে হচ্ছে। আর দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
ভ্যানচালক আনারুল হক বলেন, কয়েকদিন ধরেই প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। এ কারণে আয় রোজগারও কম।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত শুক্রবার সকাল ৯টায় এখানে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। শনিবার সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি। তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও কমেনি ঘন কুয়াশা ও শীত। আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে শীত জেঁকে বসেছে। হঠাৎ ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা না পাওয়ায় গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছিন্নমূল ও দরিদ্রশ্রেণীর মানুষদের। হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা সারা নীলফামারী জেলার অভাবী মানুষজন শীত নিবারণের জন্য খড় কুটো জ্বালিয়ে অব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেখা গেছে, হিমালয়ের খুব কাছের এলাকা সৈয়দপুর। আর এ কারণে জেঁকে বসেছে শীত। গত শীত মৌসুমের তুলনায় এবারের পুরাতন গরম কাপড়ের মূল্য তুলনামূলক বেশী হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এরপরও এক বেলা খেয়ে না খেয়েও তারা ক্রয় করছেন শীতবস্ত্র। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।