মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী (আই এস) একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। গত বৃহস্পতিবার বাগদাদে জোড়া আত্মঘাতী বোমা আবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে সিরিয়া এবং ইরাকে একসময় বিপুল ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণকারী এ গোষ্ঠী এখনও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে। এ বিষয়ে বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাংক গার্ডনারের প্রতিবেদন ইনকিলাব পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হ’ল:
সর্ব সাম্প্রতিক এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিয়া সম্প্রদায়। সুন্নী জিহাদিরা তাদের ‘রাফিদিয়ান’ বা ইসলাম অস্বীকারকারী হিসেবে খারিজ করে। বড় শহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো আইএস-এর বরাবরের কৌশল, বলছেন লন্ডনের কিংস কলেজের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক পিটার নিউম্যান। এর মাধ্যমে একদিকে তারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিতে চায়, অন্যদিকে তারা চায় এসব ঘটনার পর সুন্নি সম্প্রদায়ের ওপর শিয়াদের প্রতিশোধমূলক হামলা চলুক। আইএস চায় সা¤প্রদায়িক সঙ্ঘাত বেড়ে যাক। তাহলে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তার মধ্যে তারা দেখাতে পারবে যে তারাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
শক্তির মহড়া : বাগদাদের যে বাজারে ঐ হামলা হয় তা বেছে নেয়া হয়েছিল নানা ধরনের সুবিধার কারণে। হামলাকারীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সবাইকে জানিয়ে দেয়া যে, ২০১৯ সালে আইএস তার খেলাফত হারালেও তারা এখনও অনেক শক্তিশালী। আক্রমণের পরিকল্পনাকারীরা আরেকটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছিল। তা হলো ইরাকী জনগণের মায়া-মমতা। তারা জানতো, যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে এবং তার পাশে ভিড় করে দাঁড়াবে। আত্মঘাতী হামলাকারী যখন দেখতে পেল যে, তার পাশে অনেক মানুষ জমে গেছে তখনই সে নিজের কাছে রাখা বোমাটিতে বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপরও যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের লক্ষ্য করে দ্বিতীয় বোমাটি ফাটানো হয়।
আইরিশ রিপাবলিকান বাহিনীর গোষ্ঠী আইআরএ ১৯৭৯ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ওয়ারেনপয়েন্টে একই কৌশল ব্যবহার করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ১৮ জন সৈন্যকে হত্যা করেছিল। বাগদাদের এ হামলাটির মধ্য দিয়ে ‘আইএস তার শত্রু-মিত্র সবাইকে জানিয়ে দিতে চেয়েছে যে, তারা এখনও আছে, এবং তারা এখনও বড় ধরনের হামলা চালাতে প্রস্তুত’, বলছেন অধ্যাপক নিউম্যান।
গেরিলা কায়দায় হামলা : কিন্তু আইএস-এর জন্য এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, বিপজ্জনক হলেও তারা আগের মতো শক্তিশালী নেই। আফ্রিকার জঙ্গী গোষ্ঠী বোকো হারাম ২০১৫ সালে আইএস-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
একসময় যে বিশাল ভূখন্ড তারা নিয়ন্ত্রণ করতো সেটার আয়তন ছিল বেলজিয়ামের আয়তনের প্রায় সমান। আইএস পাঁচ বছর ধরে স্বঘোষিত ‘খিলাফতে’র অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো, ক্ষেতের ফসল তুলে নিত, তেল উৎপাদন করতো এবং সেই তেল কালোবাজারে বিক্রি করতো। তার চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো তারা ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার লোককে তাদের লড়াইয়ে সামিল হতে প্রলুব্ধ করতে পারতো।
কিন্তু সিরিয়ার বাঘুজে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর হাতে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আইএস খেলাফতের অবসান ঘটে। কিন্তু লড়াই শেষ হলেও প্রায় ১০ হাজার আইএস যোদ্ধা ইরাক এবং সিরিয়ায় পালিয়ে রয়েছে। তারা সাধারণ জনগণের সাথে মিশে আছে, সহজেই তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করতে পারে এবং স্থানীয় সুন্নি জনগণের মধ্যে যেকোনো ক্ষোভকে তারা উসকে দিতে প্রস্তুত।
আইএস-এর খিলাফতের ভৌগলিক কাঠামো এতটাই বিনষ্ট হয়েছে যে তারা আবার সেটাকে মেরামত করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারবে তেমন সম্ভাবনা খুবই কম। তারা যে নিজেরাই এখন লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে তারা সেটাও মানুষকে বুঝতে দিতে চায় না। সেজন্যে তারা যে কৌশল বেছে নিয়েছে সেটা একসময় ইরাকের ইসলামিক গোষ্ঠী খুব দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতো। তা হলো: বড় লক্ষবস্তুর ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, স্থানীয় জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানো এবং মানুষের জীবনযাত্রা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেখতে পেলেই সেটাকে বিনষ্ট করা।
লড়াইয়ের পরবর্তী ময়দান আফ্রিকায় : সিরিয়া এবং ইরাকের বাইরে, গত দু’বছর ধরে আইএসপন্থী দলগুলো সাফল্য পেয়েছে। আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি শোচনীয় হামলার পেছনে আইএস-এর হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়। এখন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, এই দশকে আইএস তৎপরতার প্রধান কেন্দ্র হবে আফ্রিকা। সেখানে আইএস-এ প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আল-কায়দার সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে।
আফ্রিকায় সাহেল-এর মতো অঞ্চল যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল, যেখানে প্রচুর দুর্নীতি চলে এবং যেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা নেই বললেই চলে, সেসব এলাকায় আইএস এবং আল-কায়েদা উভয়েই তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেবে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় দুটো গোষ্ঠীই ২০২০ সালে তাদের অভিযানের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
নানা ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যে লোকে এখন আগের মতো বাড়ির বাইরে যায় না, বড় ধরনের জন সমাবেশ হয় না এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশসহ নানা জায়গায় হামলা চালানোর খায়েশ তাদের এখনও রয়ে গেছে এবং তাদের পক্ষ হয়ে সেসব হামলা চালাতে উৎসাহী লোকেরও অভাব নেই। সূত্র : বিবিসি বাংলা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।