Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেল সুপার ও জেলার প্রত্যাহার

কারাগারে লাখ টাকায় নারীসঙ্গের ব্যবস্থা কাশিমপুর কারাগারের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নারীর সঙ্গে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সাজাপ্রাপ্ত বন্দি তুষারের সময় কাটানোর ঘটনায় সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা দু’জন হলেন- কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ এর সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায় ও জেলার নুর মোহাম্মদ। নারীর সঙ্গ ঘটনায় এ নিয়ে মোট ৫ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে ডেপুটি জেল সুপার মোহাম্মদ সাকলাইন, সার্জেন্ট আব্দুল বারী ও সহকারি প্রধান কারারক্ষী খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল রোববার আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন সাংবাদিকদের জানান, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে কারাগারে নারীর সময় কাটানোর ঘটনায় আমরা সিনিয়র জেল সুপার, জেলারসহ মোট ৫ জনকে প্রত্যাহার করেছি। এর আগে তিনজন ও রোববার দুইজনকে সদর দফতরের সংযুক্ত করা হয়েছে।’

হলমার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদের সঙ্গে কারাগারের ভেতরে কারা কর্মকর্তার কক্ষে নারীসঙ্গের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশিত হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনার ফুটেজে দেখা যায়, গত ৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ এর বন্দি হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীরের ভায়রা কোম্পানির জিএম তুষারের সঙ্গে এক নারী সাক্ষাৎ করেন। ডেপুটি জেলার সাকলাইন সাক্ষাতের অনুমতির জন্য ১২টা ২২ মিনিটে সুপারের রুমে প্রবেশ করেন। সুপারের রুম থেকে অনুমতি নিয়ে ১২টা ৪০ মিনিটে বের হন সাকলাইন।

ওই নারী ১২টা ৫৬ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন। ডেপুটি জেলার সাকলাইন ১২টা ৫৭ মিনিটে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে ১টা চার মিনিটে তুষারকে সঙ্গে নিয়ে ওই নারীর সাথে সাক্ষাৎ করাতে একটি কক্ষে নেন। সোয়া ১টায় জেল সুপার কারাগার থেকে বের হয়ে যান। এরপর তুষার একটি কক্ষে প্রায় ৪৬ মিনিট সময় কাটান ওই নারীর সঙ্গে।

গত ২১ জানুয়ারি অতিরিক্ত কারা-মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি কাশিমপুর গিয়ে তদন্ত করেছেন। কারা সূত্রে জানা গেছে, অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর আগে ও পরের দৃশ্য কারাগারের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ফুটেজ উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করছে তদন্ত কমিটি।

কারাগারে বিধিবহির্ভূত নারীসঙ্গের বিষয়টি আলোচনায় আসলে গত ১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে দেয়া এক প্রতিবেদনে সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায় (গতকাল প্রত্যাহার হন তিনি) উল্লেখ করেন, এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় হলমার্ক অর্থ কেলেঙ্কারি মামলার অন্যতম আসামি তুষার আহমেদকে। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার নুর মোহাম্মদ ১ লাখ টাকা, ডেপুটি জেলার মো. গোলাম সাকলাইন ২৫ হাজার ও অন্যান্য সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর, গেট সহকারী প্রধান কারারক্ষী ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে তিনি আরো উল্লেখ করেন, জেলারই ওই নারীসহ সংশ্লিষ্টদের কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেন এবং ডেপুটি জেলার তাদের রিসিভ করেন। জেলারের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া একজন বিচারাধীন আসামির সঙ্গে কারও সাক্ষাতের জন্য কারাগারের অফিসে আসা সম্ভব নয়। জেলারের সিনিয়র জেল সুপারকে অবহিত করার কথা, কিন্তু জেলার তা করেননি। সামগ্রিক বিষয়টি গোপন রাখতে ওয়াকিটকি বাদ দিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করে সমন্বয় করা হয়েছে। তাকে না জানাতেই এসব করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তুষার আহমেদ একজন সাধারণ বন্দি। তিনি শ্রেণিপ্রাপ্ত নন, এ কারণে তার অফিসে এসে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি জেলারসহ সংশ্লিষ্টরা অবগত আছেন। ডেপুটি জেলার সাকলাইন ও গেট ওয়ার্ডার সহকারী প্রধান খলিলুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা জেলারকে অবগত করে বন্দি তুষারকে অফিসে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ওই মহিলা হাজতির স্ত্রী বলে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ওই নারীর যেভাবে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি সামনে এসেছে, তা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারাগার

৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ