পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে গত এক বছরে গবাদি-পশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার। খামারী, চামড়া ও গোশত ব্যবসায়ী সমিতি এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গবাদিপশু পালন বৃদ্ধি পাওয়ায় আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানীযোগ্য গরু রয়েছে ৪৪ লাখ ২০ হাজার। ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৭০ লাখ ৫০ হাজার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর কোরবানীতে জবাই হয় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু। বলা হচ্ছে, এ বছর মিয়ানমার থেকেও গরু আসছে। চামড়াব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর কোরবানী পশুর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সরবরাহ করত দেশী খামারীরা। গত বছর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হবার কারণে এবছর গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা নেয়ার কারণে গবাদিপশুর লালন-পালনের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে গবাদি-পশুর সংখ্যা। সে বিবেচনায় ভারতীয় গরু আসার কোন প্রয়োজন নেই। তবে উদ্বেগের জায়গা অন্যত্র। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড জাতীয় রাসায়নিক ও বিভিন্ন ইনজেকশন ব্যবহার করছে এক শ্রেণীর অসাধু ডেইরি ফার্মের মালিক তথা গরু খামারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব স্টেরয়েড ও হরমোনসমৃদ্ধ গোশত খেলে মানুষের কিডনি, লিভার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্যান্সারও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগীদের মৃত্যুও হতে পারে। এদিকে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় কোরবানীর গরু মোটাতাজাকরণে বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহারের পদ্ধতি বন্ধে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন।
দেশীয় গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও খামারীদের উৎসাহিত করতে কোরবানীর পশু নিয়ে ভারতীয়দের রমরমা ব্যবসা বন্ধে অবশ্যই সরকারকে কঠোর ও কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতীয় গরু যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি এখন থেকেই দিতে হবে। এটা সকলেরই মনে রাখা দরকার, গত বছর ভারতীয় গরু প্রবেশ সীমিত হওয়ায় দেখা গেছে দেশে কোরবানীর পশুর কোন সংকটই হয়নি। দেশীয় গরু দিয়েই মানুষ কোরবানী সম্পন্ন করেছে। এবারে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মহলের পূর্ব প্রস্তুতির ফলে কোরবানীর পশুর কোন সংকট হবে না। প্রকাশিত রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে এটাও পরিষ্কার যে, কোরবানীর পশু ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এ অবস্থাটা তৈরি হয়েছে বা হতে পারছে অনেকটা সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলেই। এখন যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে অবশ্যই দেশীয় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যতে যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বোধকরি এখনকার উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, কোরবানীর যে পশুগুলো বাজারে আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সেগুলোর মান নিয়ে। এখানে দু’টি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হতে হবে। প্রথমত, কোরবানী দেয়া হয় আল্লাহর নির্দেশ পালনে। এই গোশতের একটি নির্দিষ্ট অংশের হকদার দরিদ্ররা। এখন যদি এসব গোশতের মধ্যে মারাত্মক জীবাণু থাকে তাহলে সেটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্যদিকে সাধারণত যারা রেডমিট পরিহার করেন তারাও এসময়ে কোরবানীর পশুর গোশত খান। এসবের ক্ষতিকারক ওষুধ তাদের শরীরে প্রবেশ করলে তা স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা কোরবানী দেয়া হয় যেহেতু আল্লাহর নিয়তে, সে কারণে এই পশুতে ক্ষতিকর ওষুধের প্রয়োগ শুধু অনৈতিকই নয়, এক ধরনের গুরুতর অপরাধও। যেসব খামারী অসৎ উদ্দেশ্যে এধরনের প্রবণতায় লিপ্ত তাদের এখনই শনাক্ত করা জরুরী। সেই সাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত অপরিহার্য। যারা কোরবানীর হাট ইজারা নিবেন তাদেরও এ ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দেয়া প্রয়োজন যাতে এ ধরনের গবাদিপশু হাটে প্রবেশ করতে না পারে। বিশেষ করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি মার্কেটে যাতে গবাদিপশু প্রবেশের আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় তার ব্যবস্থা থাকা জরুরী।
ঈদুল আজহায় সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানী অপরিহার্য। এ কাজটি যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়, তাই কাম্য। বাংলাদেশে অনেকদিন থেকেই পশু মোটাতাজাকরণের বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। শুধু কোরবানীর পশু নয়, সাধারণভাবেও বাজারে যেসব পশু পাওয়া যায় সেগুলোতেও অনেক সময় মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। সে প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিষয়টি সারা বছর নজরদারীতে থাকলে বা রাখা গেলে এ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। বিষয়টি খামারী পর্যায়ে নিশ্চিত করা গেলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। মোটাতাজাকরণের অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া সম্পর্কে খামারীসহ ক্রেতাদের সচেতন করতে হবে। এ কাজটি করতে পারলে খামারীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি সুস্থ গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। মানুষ নিঃসংশয়ে কোরবানীর পশু কিনতে পারবে। এতে খামারীদের বিক্রি বাড়বে। অন্যদিকে আমরা মনে করি, যে কোনমূল্যে ভারতীয় গরুর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেশের টাকা দেশে রাখতে হবে। দেশের খামারীদের পশু পালনে উৎসাহী করে তুলতে এবং পশু সংকট কাটাতে এর বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।