Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধীরগতির সংস্কারে ভোগান্তি

নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে থামছে না সীমাহীন ভোগান্তি। ব্যস্ততম এ সড়কটির ৫৯ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ সড়কেই গর্ত। ফলে খানাখন্দ ও ধুলাবালিতে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারীদের। দীর্ঘদিন ধরে এ মহাসড়ক ফোর লেন ও বর্ধিতকরণের কাজ চলমান থাকলেও কিছুতেই ক‚লকিনারা করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে চলাচল করতেও এখন অশ্বস্তিতে থাকেন যাত্রীরা। বেহাল সড়ক আর অসহনীয় যানজটের কারণে দেড় ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। গত কয়েক বছর ধরে অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো সুস্থ মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। বেহাল এই মহাসড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। পাশাপাশি কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন গতকাল গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কটির বিজয়পুর থেকে লালমাই এলাকার বিভিন্ন স্থানে একেবারেই নাজুক অবস্থা। আর লালমাই বাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু হয়ে বাগমারা বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্ত। দুই-তিন ফুট গভীরতার এমন গর্ত রয়েছে কয়েকশ’। সড়কটির কুমিল্লা অংশের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাগমারা এলাকা, লাকসামের মিশ্রি, জংশন ও বাইপাস হাউজিং এলাকা, মনোহরগঞ্জের নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার এলাকা এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ এলাকা। এসব এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে হেলে-দুলে গাড়ি চলে। আতঙ্কের এই সড়কটিতে প্রায়ই বিভিন্ন যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। আর এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লা ও বিভিন্ন সূত্র জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া এই ফোর লেনের কাজ গত বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ধীরগতির কারণে কাজের মেয়াদকাল বেড়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।

এদিকে নোয়াখালী-কুমিল্লা দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরনের কাজে ধীরগতিতে হওয়ার কারণে ওই সড়কের বেশির ভাগ এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া প্রতিনিয়ত দূষিত করছে ওই অঞ্চলের বাতাস। নির্মাণসামগ্রী বালু, মাটি, খোয়া ও পাথর ফেলা রাখা হয়েছে পুরো সড়কজুড়ে। গাড়িতে করে বালি ফেলার কারণে সড়কে ধুলাবালির অভাব নেই। সড়কটির কোথাও রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও পাথর ফেলে রোলার দিয়ে রেখে দেওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কয়েক লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদ উল্ল্যাহ বলেন, কুমিল্লা অংশের টমছম ব্রিজ থেকে লালমাই পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ, লালমাই-লাকসাম অংশের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং লাকসাম-সোনাইমুড়ী অংশের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। লালমাই-লাকসাম অংশে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে চার মাস আগে। তবে লালমাই-লাকসাম অংশে ভ‚মি অধিগ্রহণে সময় লেগেছে। প্রয়োজনীয় অর্থ জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে দিঘিরজান পর্যন্ত কিছু অংশে কাজ শেষের দিকে, আর বাকি অংশের কাজ চলমান। আর দিঘিরজান থেকে সোনাইমুড়ী বাইপাস পর্যন্ত আংশিক কাজ করার পর বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, নোয়াখালী অংশের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা থেকে চাষিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু করতে পারছেন না।

এই সড়কে চলাচলকারী উপকূল বাসের চালক তোফায়েল আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়কটিতে বড় বড় গর্ত আর ভাঙা থাকায় ঘন ঘন গাড়ি বিকল হচ্ছে। গত প্রায় চার বছর ধরে এমন বেহাল অবস্থা চললেও এটি সংস্কারে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপকূল বাসের পরিচালক রাশেদ কামাল মজুমদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভাঙা রাস্তার কারণে এই সড়কে আমাদের কয়েকটি বাস দুই বছরের মধ্যে বিকল হয়ে গেছে। ওই সড়কের দিঘিরজান এলাকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ধুলাবালুতে হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জিসহ নানা রোগে ভুগছেন তারা। ধুলাবালুর কারণে দোকানে বসা দায়।

কুমিল্লার চিকিৎসক ইকবাল হোসেন দৈনিক ইনকলাবকে জানান, এই ধুলাবালির পরিবেশের কারণে প্রতিটি নিঃশ্বাসে মানুষের দেহে শত শত রোগের জীবাণু প্রবেশ করছে। আর যারা অ্যাজমা বা অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য মৃত্যুময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। লাকসাম বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কালাম দৈনিক ইনকিলাকে বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে জনভোগান্তি বেড়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত প্রায় ছয় মাস আগে লাকসাম অংশে দুই লেনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে ধীরগতি ও সড়ক খোঁড়া হলেও ড্রেন নির্মাণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণে এখানে সারাদিনই যানজট লেগে থাকে। বাধ্য হয়ে এক দিকের গাড়ি এখন বাজারের ভেতরের বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করে। এরপরও ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, কুমিল্লা অংশে সওজ এ পর্যন্ত যেসব স্থানে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেছে, তার সবটুকুই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উন্নয়নকাজে যদি বিলম্ব হয়, সেটি সওজের কারণেই হবে। একই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খানের ভাষ্য, মৌজার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর সেটি কেটে গেছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদকাল বেড়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যেই আশা করছি দ্রুত গতিতে ফোর লেনের কাজ শেষ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ