পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বায়নের প্রভাব দিনকে দিন আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রকট হয়ে উঠছে। সৃষ্টি হচ্ছে গভীর ক্ষত। শিক্ষা যেখানে জাতীয় মেরুদন্ড গড়ার প্রাথমিক শর্ত, সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির না হলেও গড়িয়ে চলছে ভিন্ন খাতে। আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের স্থান দখল করেছে সার্টিফিকেটসর্বস্বতা। বেশিরভাগ উচ্চস্তরীয় ডিগ্রিধারীদের মধ্যে মূল্যবোধের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষাকে সঠিক ও কাঙ্খিত পথে পরিচালিত করতে না পারলে জাতির উন্নয়নের সঠিক নিশানা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কারণ বহুবিধ।
যেখানে আমরা আজ হতাশার সাগরে নিমজ্জিত, সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে কি ভাবতে পারি? তারা কি অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না? ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পানিসংকট, বিদ্যুৎবিভ্রাট এবং দেশের সার্বিক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে কালাতিপাত করছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, নৃশংস খুন, ডাকাতি, ধর্ষণসহ নানাবিধ ঘটনায় দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নৈতিক অবক্ষয়, হিংসা, অহংকার, ক্রোধ-বিদ্বেষ, ছিনতাই, লোভ, শঠতা, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রবঞ্চনা, স্বার্থপরতা, প্রতারণা, মোনাফেকী, অন্যায়, অবিচার, জুলুম যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মানুষ উদ্বিগ্ন, বিচলিত। আমাদের সমাজ জীবনে জীবন্ত হয়ে আছে চরম অবক্ষয়ের চিত্র। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ অবক্ষয় বিদ্যমান। এ অবক্ষয় ধীরে ধীরে প্রভাবিত করছে সমাজকে, কলুষিত করছে প্রত্যেকের মন-মানসিকতাকে। দেশের আজকের এ পরিস্থিতির জন্যে অনেক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। তার মধ্যে নৈতিকতার অবক্ষয়কে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাই আমাদের দেশে সুখ, শান্তি, স্বস্তি চাইলে আমাদেরকে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, নৈতিকার অবক্ষয় রোধ কীভাবে সম্ভব?
সা¤প্রতিককালে ধর্ষণ, নারীর প্রতি অমর্যাদাকর ঘটনা বেড়েই চলেছে আর এ নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেজ্ঞদের মতে, সমাজের চলমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে জৈবিক চাহিদার সম্পর্ক রয়েছে। ভোগবাদী সমাজে এক ধরনের যৌনপ্রবণতা প্রবলতর হয়েছে। যৌনতা কোনও নতুন বিষয় নয়। আদিমকালেও ছিল, আজও আছে। বর্তমান সমাজে এমন কিছু নতুন উপাদানের সম্পৃক্ততা ঘটেছে যে কারণে জৈবিকতায় আদিমতা ফিরে আসছে। পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ও ভোগবাদী সমাজে এই প্রবণতা কোনও অবস্থায়ই অপরাধ বলে গণ্য হয় না। এর অন্যতম কারণ পাশ্চাত্য দেশে পরিবার-সমাজ বলে তেমন কিছু নেই। মূল্যবোধের চর্চা বলতে প্রকৃতার্থে যা বোঝায়, পাশ্চাত্যে তা মোটেই নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথায়, পশ্চিমের জানালা খুলে দেব যাতে আলো হাওয়া আসতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ধুলো-ময়লা প্রবেশ করতে না পারে। বাস্তবে আজ তা কিন্তু হচ্ছে না। বরং বলা চলে, বাইরের ধুলোঝড় এ দেশের যুব সমাজকে মাতোয়ারা করে তুলেছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওসমান গণী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে তুলনা করে দু’ধরনের সমাজের ছবি তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্যে বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে সমাজে অবাধ যৌনাচার প্রবেশ করেছে। বিশ্বযুদ্ধে পুরুষদের মৃত্যুতে সমাজে পুরুষের সংখ্যা কমে যায়, ফলে যৌনতা বঞ্চিত নারীরা স্বামী ভাগ করে নেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করেছিল। তৎকালীন সময়ে সমাজ রক্ষার নামে নারীদের মধ্যে চাহিদা পূরণের প্রশ্নে সমাজে নারী-পুরুষের অনৈতিক সম্পর্কের প্রচার ও প্রসার ঘটে, যার প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী নারীবাদীরা পাশ্চাত্যের এই ঘটনাকে এ দেশেও বাঁকা পথে নৈতিকতায় বেঁধে ফেলতে চাইছেন। দূর প্রাচ্যের দেশগুলোর সমাজব্যবস্থা আমাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যৌনতাকে কেন্দ্র করে যে অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওসব দেশে পরিবারব্যবস্থায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। সামাজিক জীবনে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে, মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে সামাজিক বন্ধন। বর্তমানের উন্নততর তথ্যপ্রযুক্তির অপপ্রয়োগই এর অন্যতম কারণ বলা চলে। মা-মেয়েদের নিয়ে টিভির পর্দায় এমন সব ছবি দেখছেন, যাতে এক পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করছে, আবার এক নারী একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনতৃপ্তি ভোগ করছে। এইসব সরকারি সেন্সর প্রাপ্ত ছবি পুরোপুরি পর্নো না হলেও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তাই পর্নোগ্রাফির করাল গ্রাসে নিপতিত আজকের সমাজ। মাঝে মধ্যে পুলিশ বøু-ফিল্মের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে না। পর্নোর সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক রয়েছে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। তথ্য বলছে, বিশ্বের সর্বাধিক পর্নোর ব্যবস্থা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এইসব পর্নো এবং টিভি সিরিয়ালের পাশ্চাত্যমুখী প্রভাব পড়ছে আজকের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ের ওপর, বিশেষ করে কম্পিউটার নেটিং-এর নানা প্রোগ্রামের মধ্যে প্রায় সব কিছুই পাওয়া সম্ভব। এদিকে কম্পিউটার তো আজ নবপ্রজন্মের ছেলেমেয়ের হাতে হাতে। ফলে সহজ মেলামেশার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে নারী-পুরুষের মধ্যে। পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ যৌনতার ব্যাপারে অনেকাংশে দায়ী। ভুলে গেলে চলবে না, ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী নারীদেহ সৌষ্ঠবের প্রতি পুরুষের আকর্ষণ। আরেকটু এগিয়ে বলতে হয়, নারীদেহের এমন কিছু অংশ পুরুষকে আকর্ষণ করে যা পুরুষের মস্তিষ্ককোষে যৌনতার প্রলুব্ধ করে।
ইতিহাসের চাকা এগিয়ে চলে সামনের দিকে, কখনও পিছোয় না। সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে যৌনতার সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। রাহুল সংস্কৃতায়ন তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে দেখিয়েছেন, প্রাচীন কালে মা-ছেলে, বাবা-মেয়ে, ভাই-বোনের মধ্যে যৌন মিলনের প্রচলন ছিল। সভ্যতার বিকাশ এবং মানবসমাজ গঠনে বিশেষ প্রভাব রয়েছে যৌনতার। সমাজে বিয়ে প্রথা চালু হবার পর কেবলমাত্র স্বামী-স্ত্রীর মিলনকেই বৈধতা দেওয়া হয়। এর বাইরের অন্যসব সম্পর্কই অনৈতিক বলে মনে করা হয়। চীন দেশে নিকটাত্মীয়র মধ্যে বিয়ে আইনত নিষিদ্ধ। আধুনিক সভ্য সমাজে অনৈতিক সম্পর্ক রোধের জন্য আইন-কানুনও চালু রয়েছে বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে এবং চীন দেশে পর্নো আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ওইসব দেশে অনৈতিক সম্পর্ক বা ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর পাওয়া যায় না। মুক্ত যৌনতার সমর্থকরা বলতে পারেন, সৌদি আরবে আইন-কানুন ধর্মীয় নেতাদের নির্দেশে চলে। কিন্তু আধুনিক চীন, সেখানেতো ধর্মের গোড়ামি নেই সেখানেও অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে কঠোর আইন। অথচ ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সরকারি নিয়মেরই অংশ। আমার চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে। আমি চীন ভ্রমণ করেছি ১৯৮০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। লক্ষ্য করেছি বিমানবন্দর থেকে শুরু করে চীনের সর্বত্র সমাজ গড়ার প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সহাবস্থান। কল-কারখানায়, কৃষিকাজে, অফিস-আদালতে সমসংখ্যক নারী-পুরুষ মিলেমিশে কাজ করছেন, অথচ অবৈধ সম্পর্ক সেখানে নিয়ন্ত্রণে। একাকিত্বের কারণে কোনও নারী সেখানে পুরুষের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে তেমন কোনও খবর নেই। মেয়েরা নির্ভয়ে পথ চলছে একাকি। অথচ আমাদের দেশে সাধারণ মেলামেশার সূত্র ধরেই বিপদজ্জনক অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। ফলে পরিবার ভাঙছে, সমাজ নড়বড়ে হচ্ছে। মারাত্মক মরণব্যাধি ‘এইডস’-এর মূলেও সেই অনৈতিক সম্পর্ক। বহু আগে কুমারী মা হওয়াটা তেমন কোনও বিষয়ই ছিল না। এরকম ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। হাজার হাজার বছর পর আজকের সমাজে কুমারী মা হওয়াটা নিন্দনীয় এবং এক সামাজিক অপরাধ বলেই বিবেচিত। স্বভাবতই এসব দৃষ্টান্তকে সামনে আনা বা সে যুগে ফিরে যাবার কথা বলাটা প্রচন্ড ধরনের মূর্খামি ছাড়া আর কিছু নয়। ইতিহাস ঠিক গতিতেই এগোবে, পেছনে ফিরবে না। অতি আধুনিকতার পরশে পাশ্চাত্যে কুমারী মায়েদের নিয়ে সরকার চিন্তিত হয়ে পড়েছে, কুমারী মায়েদের গর্ভপাত করানোর ঘটনা সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছে। তাই পশ্চিমী হাওয়া যেমন আমাদের সমাজের জন্য কাঙ্খিত হতে পারে না, তেমনি প্রাচীন যুগকে ফিরিয়ে আনার নারীবাদী চিন্তা সমাজকে অধঃপতিত করবে।
আমাদের দেশে নারীবাদীরা ইনিয়ে-বিনিয়ে অবৈধ প্রেম বা অনৈতিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন। নারীবাদীরা পুরুষবিদ্বেষী হয়ে নারীর অপরাধ আড়াল করে সমস্ত অপরাধের জন্য পুরুষকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় কারানোর চেষ্টায় সচেষ্ট থাকেন। ধর্ষণ নিয়ে দেশব্যাপী হুলস্থুল হচ্ছে অথচ সম-অপরাধ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কেউ কোনও ধরনের প্রশ্ন তুলছেন না। আসলে ধর্ষণ আর অনৈতিক সম্পর্ক দুটোই একই সমস্যার এপিঠ-ওপিঠ। ধর্ষণে অপরাধী একজন আর অনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে অপরাধী উভয়েই।
যুগপৎ দু’টো সমস্যাকে একই দৃষ্টিতে দেখতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সুস্থ সংস্কৃতিকে রক্ষা বা সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য কোনও মহল থেকেই তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে খবর নেই। এখন সমাজে আর্থিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সামাজিক অবক্ষয়, কালো টাকা ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে। দেশের তথাকথিত ভাইটাল সমস্যাগুলো নিয়ে নানাজন নানাভাবে কথা বলছেন কিন্তু মারাত্মক এ সমস্যা সমাধানে কেউ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসছেন না। গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যায় পরিবারগুলো ভাঙতে ভাঙতে একদিন সমাজটাই বিপন্ন হয়ে পড়বে। আর সে কারণেই অনৈতিক সম্পর্কের সূত্র ও উৎস গভীরভাবে যেমন ভাবতে হবে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইদানিং অনেকেই ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে, ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে। কতিপয় বিপথগামী লোকের কর্মকান্ডের জন্যে ধর্মকে দায়ী করা যায় না। জীবন চলার পথে আমি এটাও লক্ষ্য করেছি, এসব ভন্ড, মুখোশধারী লোকদের কর্মকান্ডের জন্যে কেউ কেউ দাঁড়িওয়ালা লোকদের পর্যন্ত বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে। অনেককেই দেখি ধর্ম বিষয়ে বেশী লেখাপড়া না করেই ধর্মের গভীরে না গিয়ে মনগড়া আলোচনার প্রয়াস চালায়। সমাজে আমরা যেমন অনেক জ্ঞানী লোক দেখতে পাই তেমনি অনেক জ্ঞানপাপী ও জ্ঞানমূর্খও আমাদের চোখে পড়ে। সাধারণত যে জ্ঞানের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ যুক্ত হয়না তারাই জ্ঞানপাপী হয়ে যায়। তাদের কিছু লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এরাই সমাজে জ্ঞানমূর্খ হিসেবে চিহ্নিত আর এদেরকেই ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন রকম অপকর্মে ব্যবহার করে। সত্যিকার অর্থে যারা ধর্ম পালন করে তারা কোনদিন মানুষ হত্যার মত জঘন্য অপরাধ করতে পারে না।
আমরা যেখানে নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রর্থনা করি অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্টদের পথে আমাদের পরিচালিত না করার জন্যে সেখানে আমরা কীভাবে এমন অন্যায়, এমন জঘন্য পাপ করতে পারি? সত্যিকার অর্থে যিনি মুসলমান তিনি এমন অপরাধের সাথে জড়িত থাকতে পারেন না, সত্যিকার কোন মুসলমান এদেরকে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত এবং প্রশ্রয় দিতে পারেন না। সত্যিকার কোন মুসলমান সমর্থনও করতে পারেননা। যারা এসব কাজ করছেন তারা পথভ্রষ্ট, তারা অভিশপ্ত। কেউ যদি এসব পথভ্রষ্টদের সহযোগিতা ও সমর্থন করেন কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে তাকেই জবাব দিতে হবে।
অন্যান্য ক্ষেত্রের মত অনৈতিক সম্পর্ক রোধে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়; লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সমাজবিজ্ঞানী সবার মনোযোগী হওয়া এবং উত্তরনের কার্যকর পথ বের করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসে গেছে। সমাজবাদী দেশ চীনে অনৈতিক সম্পর্ক রোধ এবং নারীদের নির্ভয়ে পথ চলার পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে আমাদের এ দেশে তা কেন হবে না, এ প্রশ্ন মোটেই অবান্তর নয়। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, কোন ধর্ম এসব অনৈতিক কাজকে অনুপ্রাণিত করেনা, প্রশ্রয় দেয়না। আমার ধারণা, নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণেই অনেক ধরনের পাপ ও অন্যায়ের পথ প্রশস্ত হয়। অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্টরাই সমাজে বিভিন্ন রকমের পাপ ও অন্যায় করতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করেনা। তাদের কারণেই সমাজ ও দেশে পাপাচার ও অনাচারের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে একথা স্পষ্টই বলতে চাই, সমাজ জীবনে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।