Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

বাংলাদেশ নামের গণপ্রজাতন্ত্রের মালিক এর জনগণ। এ মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় জাতীয় নেতারা আন্দোলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয় না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতেই প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রদত্ত ভাষণে গুরুত্বারোপ করেছেন।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া ওই ভাষণে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীকে জনগণের পুলিশ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ বাহিনীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষের জীবনের শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে। সব সময় দেশের মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই যে পুলিশ বাহিনীর কর্তব্য তা মনে রাখতে হবে।

শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা খুবই প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সমাজে সব ক্ষেত্রে গণইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো জরুরি। আইনের শাসন, মানবাধিকারসহ জনগণের মৌলিক অধিকার সুসংরক্ষণে পুলিশ বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালনের নির্দেশনা জনগণের পুলিশ হিসেবে তাদের গড়ে তোলার পথনির্দেশক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা ও আত্মত্যাগ অনন্য। করোনাকালেও তারা মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ সুনাম জিইয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডিপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপিসহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গডে তোলেন। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙালিদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌছে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাস জুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১২৬২ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের তালিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আমরা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মানবিকতা দেখেছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। হোম কোয়রেন্টাইন নিশ্চিত এবং বাজার মনিটরিং কাজে প্রশাসনের সহযোগিতায় আছে পুলিশ। আবার ঘরবন্দি দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছাতে কাজ করেছেন এ বাহিনীর সদস্যরা। মানুষ ভিন্ন এক পুলিশ দেখেছে। জনগণের বন্ধু এ পরিচয়ে পুলিশ বাহিনীর বাস্তব রূপ দেখে আশাবাদী মানুষ। সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত এ বাহিনীর বদনাম মুছে ফেলার উপযুক্ত সময় সুযোগ এখনি।

করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ নানামাত্রিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। লকডাউন যেন সবাই মানে- সেটা দেখভাল করেছে, ত্রাণ দিয়েছে, অন্য সংস্থা ত্রাণ দিলে সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয় দেখেছে, মৃতদেহের সৎকার করেছে, করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়েও কাজ করেছে। মানবিক বিষয়কে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের জন্য এই বাহিনী ঝুঁকি নিয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৬ পিএম says : 0
    In Islam each muslim are police because Allah ascribed to the nation (Ummah) of Muhammad the same characteristic which He ascribed to the Prophet himself in the previous verse when He said: [You are the best nation brought forth for the people of the world: you enjoin right and you forbid wrong, and you believe in Allah.] Qur'an 3/110. And He said: [Believing men and believing women are the protecting friends of each other: they enjoin right and they forbid wrong.] Qur`an 9/71. In the same vein, Abu Huraira, a companion of the Prophet and narrator of many hadith used to say: "You are the best people for the people, you tie them in chains and shackles and drag them off to paradise." Allah explains in the above verse that this nation is the best nation for the people i.e. the most beneficial to them, the one doing them the greatest favour. This is because they constitute the total good and benefit for the people via their enjoining right and forbidding wrong both in quality and in quantity, since they enjoin all that is right and forbid all that is wrong, and their message is addressed to all people of the world. Furthermore, they uphold this institution with jihad in the path of Allah with their lives and their property, and this constitutes the complete benefit for the world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশের-ভূমিকা-গুরুত্বপূর্ণ
আরও পড়ুন