Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশার উৎপাতে নগরবাসী অতিষ্ঠ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

মশার উপদ্রবে রাজধানীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রাত্রে তো বটেই, দিনেও মশার আক্রমণ থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে না। কেউ কেউ দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানীর সর্বত্র মশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও স্বস্তিতে কাজ করা যাচ্ছে না। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পাড়া-মহল্লায় মাঝে মাঝে বিকট শব্দের ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলেও শব্দ দূষণ ব্যতীত তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং মশা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস না করে এভাবে ধোঁয়া দিয়ে মশা নিধন করা যে সম্ভব নয়, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া যেসব ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে ভেজাল রয়েছে বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে। অথচ দুই সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এসব অর্থের নয়-ছয় নিয়েও বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যে কোনো লাভ হয়নি বা হচ্ছে না, তা মশা নিধন কার্যক্রমে শৈথিল্য থেকে বোঝা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছর মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মশা গান শোনাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন।

শীতের সময় সাধারণত মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন, নর্দমা ও জলাশয়গুলোতে পানিধারা থাকে না। নোংরা পানি জমে থাকায় তা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ বিষয়টি সকলেরই জানা। এ সময় যদি এগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সচল রাখা হয়, তবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়। দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশন এ কাজটি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যখনই মশার উৎপাত নিয়ে লেখালেখি হয়, তখন তারা জেগে উঠে। ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করে। কিছুদিন এ কার্যক্রম চলার পর থেমে যায়। গত বছর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যখন মশার উৎপাত বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করেন, তখন দুই সিটি করপোরেশন নড়েচড়ে বসে। মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করে। এতে মশা অনেকটাই কমে যায়। তারপর কার্যক্রমও থেমে যায়। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। মশা বংশবৃদ্ধি করে নগরবাসীর জীবন যন্ত্রণাদায়ক করে তুলেছে। এমনিতেই করোনা সংক্রমণে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তার মধ্যে মশার অপ্রতিরোধ্য আক্রমণে ডেঙ্গু রোগও ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। অথচ মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। এর উপায় জানা আছে। কেবল প্রয়োজন দুই সিটি করপোরেশনের সদিচ্ছা ও কার্যকর উদ্যোগ। এ উদ্যোগটিই চোখে পড়ছে না। সম্প্রতি রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসা থেকে সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। নগরীর খাল ও জলাশয় উদ্ধার ও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের কাজও তারা শুরু করেছে। এতে মশার উৎপত্তিস্থলে নাড়াচাড়া পড়েছে। এ কারণে মশা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন। তার কথার সূত্র ধরে বলা যায়, যেহেতু মশা ছড়িয়ে পড়েছে, তাই একই সঙ্গে তা নিধনের উদ্যোগও নেয়া উচিৎ। তা না করায় মশা স্থান পরিবর্তন করে বাসা-বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যা নামার আগেই মশার দলবেঁধে আক্রমণ শুরু হয়। কারো পক্ষেই একদন্ড স্বস্তিতে বসে থাকার উপায় থাকছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের যে বিভাগ, তা কেন সক্রিয় হচ্ছে না? জনগণের এই ট্যাক্সের অর্থ কি অবস্থায় রয়েছে এবং কিভাবে ব্যয় হচ্ছে? এ প্রশ্নও অবান্তর নয়। জনগণ ট্যাক্স দেবে, সেবা পাবে না, তা হতে পারে না। মশার উৎপাত বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অজানা থাকার কথা নয়। তাদের এখনই সক্রিয় হয়ে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

রাজধানীতে কিউলেক্স প্রজাতির সাধারণ এবং ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস মশার বিস্তার শঙ্কাজনক বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। অনতিবিলম্বে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করা না হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিষয়টি দুই সিটি করপোরেশনকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন ও স্যুয়ারেজ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন ফেলে রাখায় তাতে পানি জমে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নিতে হবে। মশা নিধনে প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে। নিজ এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত করতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৫৪ এএম says : 0
    Government don't care about us because they live in a place where mosquito's cannot get inside.. Crores of people living in the bastee and thousands of people living on the street, where is the humanity. They only know how stay in power and loot our hard earned money and every moments they are self praising that our country better than canada and singapore.. didn't they visit canada/singapore??????????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মশার-উৎপাত

আরও পড়ুন