পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সড়ক-মহাসড়কের ওপর নির্মিত বহু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতু বিভাগের অবহেলা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুগুলো দুর্দশায় উপনীত হয়েছে। এর ফলে কোনো কোনো সেতুতে যেমন ফাটল দেখা দিয়েছে, তেমনি কোনো কোনো সেতু দেবে যেতেও দেখা যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের উপর নির্মিত সেতুর করুণ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের ৫ হাজার ২৬টি সেতু ও কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে শুধু মহাসড়কেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ৭৫২টি এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে ১১৯৩টি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর এই চিত্র অত্যন্ত শঙ্কাজনক। যেকোনো সময় এসব সেতু ভেঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনাও ঘটছে। গত সপ্তাহে রাঙ্গামাটিতে একটি ওভার লোডেড ট্রাক বেইলি ব্রিজ দিয়ে পার হওয়ার সময় ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে। এতে তিন জন নিহত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিজটি রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সালেহপুর সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। এর একপাশ দেবেও গেছে। যেকোনো সময় এটি ভেঙ্গে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নব্বই দশকে তুরাগ নদের উপরে এই জোড়াসেতু নির্মাণ করা হয়। এর একটি দিয়ে যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ করে, অন্যটি দিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়। রাজধানীতে প্রবেশের সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় ও দেবে যাওয়ায় তা বন্ধ করে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এতে একটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সড়ক-মহাসড়ক এবং এর মধ্যকার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের টনক নড়ে এবং তৎপর হতে দেখা যায়। অথচ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়-বিভাগের দায়িত্বই হচ্ছে, নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুর নিয়মিত তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। এ কাজটি তাদের করতে দেখা যায় না। তাদের দায়িত্বই যেন নির্মাণ করে দেয়া পর্যন্ত। তারপর কি হলো না হলো, তা তদারকি না করা। তাদের এই উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে উল্লেখিত শত শত সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একেকটি সেতু এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। এ ধরনের সেতুর তথ্য কাগজে কলমে থাকলেও তা সংস্কারের উদ্যোগ নেই। এসব সেতু দিয়ে যানবাহন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে। সাধারণত একটি সেতুর স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করেই তা নির্মাণ করা হয়। এই স্থায়িত্বের সাথে এর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি জড়িত। পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে কি ধরনের, কত ওজনের এবং দৈনিক কত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে পারবে তাও হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়। দেখা যায়, একটি সেতু নির্মাণের পর এসবের কোনো হিসাব-নিকাষের বালাই থাকে না। যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা হয়। এতে যে পর্যন্ত সেতুটির মেয়াদ ও টিকে থাকার কথা, তার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সাভারে যে সেতুটিতে ফাটল ও দেবে যাওয়া দেখা দিয়েছে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সেতু বিভাগের দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এটি যেমন শিল্পাঞ্চল, তেমনি এখানে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সেনানিবাস, বিকেএসপি, ইপিজেডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম গেটওয়ে হিসেবেও পরিচিত। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকার আমিন বাজার, সালেহপুর ও নয়ারহাটের তিনটি সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর কোনো রক্ষণাবেক্ষণই করা হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সেতুর এমন দুর্দশা কল্পনাও করা যায় না। ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলে, এর দায় নিশ্চিতভাবেই সেতু বিভাগের উপর পড়বে। শুধু সাভারই নয়, দেশে যত সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় সেতু বিভাগকেই নিতে হবে।
সরকার বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু খাতে। এই বরাদ্দ দেয়ার কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত, মসৃণ ও দ্রুত করা। দেখা যাচ্ছে, বছরে এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়ক ও সেতুর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না, রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। যদি তা হতো, তাহলে এত সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকত না। মহাসড়কের উন্নয়ন শেষ হতে না হতেই তা বেহাল অবস্থায় পড়ত না। যানজট, খানাখন্দ সৃষ্টি হতো না এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে থাকত। মহাসড়কের শৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত পুলিশও তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। সড়ক ও সেতুতে যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী চলাচল যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তেমনি ওভারলোডিং যানবাহনও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। একটি সড়ক ও সেতুতে কত ওজনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এ এক অরাজক পরিস্থিতি। যে যেভাবে পারছে সড়ক ও সেতু ব্যবহার করে চলেছে। বিশ্বের কোথাও এমন পরিস্থিতি আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। এ কারণেই সড়ক ও সেতুর স্থায়িত্ব কমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এদিকে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সড়ক ও সেতু নির্মাণ করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। এগুলোর নির্দিষ্ট মেয়াদ ও স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও তদারকি করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও সেতুর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। বরাদ্দকৃত জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকার যথাযথ ব্যবহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত ও টেকসই এবং সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের অপচয়, দুর্নীতি, গাফিলতি ও উদাসীনতা কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।