Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাসড়কে ৭৫২টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু

তথ্য সংগ্রহে সেতু বিভাগের গাফিলতি : মেরামতের উদ্যোগেও ধীরগতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সালেহপুর সেতুতে ফাটল : যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কা : যানজটে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগযোগ ব্যাহত : বন্যা, নকশা ও নির্মাণত্রুটি, গাড়ির ধাক্কা, অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচলসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত

সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে ৫ হাজার ২৬টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এর মধ্যে মহাসড়কেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ৭৫২টি। আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১ হাজার ১৯৩টি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, সালেহপুর এবং নয়ারহাট সেতু তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে নয়ারহাট সেতুটি নতুন করে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর সালেহপুর সেতুর নিচে এক পাশের (গার্ডার) বীমে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। সেই সাথে সেতুটি এক পাশে অনেকখানি দেবেও গেছে। যেকোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর সঙ্গে সাভার ও দেশের দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেতুর উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর কর্মকর্তারা বলেন, গত দুই দিন ধরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজারের সালেহপুর সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। সেতুর নিচে আটটি বীমের মধ্যে চারটিতে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। সেই সাথে এক পাশে দেবেও গেছে।

ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজারের সালেহপুরে তুরাগ নদের ওপর নব্বইয়ের দশকে প‚র্ব ও পশ্চিম পাশে পাশপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। প‚র্ব পাশের সেতু ব্যবহার হয় রাজধানীতে যানবাহন ঢোকার জন্য। আর পশ্চিম পাশের সেতু ব্যবহার হয় রাজধানী থেকে যানবাহন বের হওয়ার জন্য। সেতুর নিচে এক পাশের (গার্ডার) বীমে ফাটলের কারণে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক লেন বন্ধ করে সংস্কারের কাজ করছে ঢাকা সড়ক বিভাগ। এতে মহাসড়কটিতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে কাজ করছেন পুলিশ। এদিকে সেতুটি মেরামত করতে অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লাগবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক বিভাগ।

গত বুধবার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলে (সাভার থেকে ঢাকাগামী) এক পাশে নিষেধজ্ঞা দেয় ঢাকা সড়ক বিভাগ। এরপর থেকে ধীরে ধীরে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। এ ব্যাপারে সওজ এর ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সালেপুরে দুই লেন বিশিষ্ট দুটি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে সড়কের পূর্বপাশে অবস্থিত সেতুটির (সাভার হতে ঢাকাগামী লেন) এক পাশের গার্ডারে (বীম) ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল আমরা গত তিন দিন আগে দেখতে পাই, গত বুধবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। তবে আমরা যতদ্রæত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো।

আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সবুর খাঁন বলেন, সেতুটি সংস্কারের জন্য এক লেন বন্ধ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। তবে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল জেলার পরিবহনের চাপ থাকায় যানজট তৈরী হচ্ছে।

সারাদেশেই সড়ক-মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে হাজার হাজার সেতু-কালভার্ট। বন্যা, নকশা ও নির্মাণত্রæটি, গাড়ির ধাক্কা, অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেই সেতু-কালভার্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তথ্য সংগ্রহে সেতু বিভাগের রয়েছে গাফিলতি। যে কারণে প্রতিনিয়ত সেতু কালভার্ট ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দাবি, সেতু যে কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠুক না কেন তা মেরামতের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সওজ অধিদপ্তর দেশের কোন সেতু কী অবস্থায় রয়েছে তা জানতে একটি সফটওয়্যার চালু করেছে। ‘ব্রিজ মেইনটেন্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা বিএমএমএস নামের এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাইকা সহায়তায় সওজের সেতুগুলোর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নতুন-পুরনো মিলিয়ে ২১ হাজার ৪৯২টি সেতুর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ওসব সেতুকে এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে এ ক্যাটাগরিতে থাকা সেতুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৩৩টি। এসব সেতু ভালো অবস্থায় রয়েছে। বি ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২ হাজার ৯৩৩টি সেতু। সেগুলো হালকা ক্ষতিগ্রস্ত আর ‘মেজর এলিমেন্টাল ড্যামেজ’ থাকা সেতুগুলোকে সি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। এ ধরনের সেতুর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩০। আর ‘মেজর স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ’ থাকা সেতুগুলোকে ডি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। সওজ অধিদপ্তরের নেটওয়ার্কে থাকা ডি ক্যাটাগরির সেতুর সংখ্যা ১ হাজার ৯০। সি ও ডি ক্যাটাগরিতে থাকা ৫ হাজার ২৬টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। আর জাতীয় মহাসড়কেই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ৭৫২টি সেতুর অবস্থান। আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১ হাজার ১৯৩টি।

সূত্র জানায়, ঢাকার পোস্তগোলা সেতু গত বছরের জুনে সদরঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে আসা একটি জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর থেকে সেতুটি দিয়ে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলছে। এখনো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে থাকা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সওজের হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে একটিও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নেই। তবে চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ১৭টি। ওই তালিকায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাতামুহুরী সেতুও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুটি জাপানের অর্থায়নে পুননির্মাণ করা হচ্ছে। যার কাজ চলতি বছরই শেষ হওয়ার কথা। তাছাড়া ঢাকা-সিলেট-তামাবিল জাতীয় মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করা প্রক্রিয়া চলছে। ওই মহাসড়কটিতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা ৫১টি। একইভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৪০টি, জয়দেবপুর-জামালপুর মহাসড়কে ২০টি, ঢাকা-রংপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ১০৭টি, সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে ৪টি, রাজবাড়ী-খুলনা মহাসড়কে ৪৮ ও ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। দেশের প্রধান ৮টি জাতীয় মহাসড়কের এ চিত্র। বাকি জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। অভিযোগ রয়েছে, হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে গড়িমসি করার কারণেই হঠাৎ করে একটা সেতুতে ফাটলের দেখা মেলে। এই তথ্য সংগ্রহে সেতু বিভাগের চরম গাফিলতি রয়েছে। আবার কোন সেতুতে ত্রুটি দেখা দিলেও তা মেরামত করতে গড়িমসি করে সেতু বিভাগ। মেরামতের বাজেট করতে করতেই সময় পার হয়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষার আগে সড়ক ও সেতু মেরামত করার কথা থাকলেও প্রতিবছরই বর্ষা নামার পর মেরামতের ধুম পড়ে। তখন কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করেই কোটি কোটি টাকা বিল তুলে নেয়া হয়।



 

Show all comments
  • পারভেজ ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    সেতু বিভাগের গাফিলতির কারণেই সকল সমস্যা তৈরি হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
    যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া খুব জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Islam ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪১ এএম says : 0
    সব মিথ্যা কথা আমরা উন্নায়নের জোয়ারে বাস করি
    Total Reply(0) Reply
  • Shoayeb Mahmud ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪১ এএম says : 0
    পদ্মাসেতুর পূর্ব সংকেত
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
    দায়িত্বপ্রপ্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই দল, চাঁদাবাজি ও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, তাদের মহাসড়ক দেখার সময় নেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ