Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৬ জানুয়ারি ছাতক পৌরসভায় ভোটযুদ্ধ

দলীয় কোন্দল না থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপির প্রার্থী

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:১২ পিএম

১৬ জানুয়ারি বহুল প্রত্যাশিত সুনামগঞ্জ জেলার শিল্পনগরী খ্যাত ছাতক পৌরসভা নির্বাচন। আর মাত্র ১দিন সময় বাকি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে সব ধরণের প্রচারিভাযান শেষ হচ্ছে। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দেও বেঁচে নেয়ার চেষ্টায় আছেন। উপজেলা নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাতক পৌরবাসীকে উপহার দেয়ার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। পৌরবাসীও নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার প্রত্যাশায় আছেন। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে সরগরম ভোটের মাঠ। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া দুই দলের জন্য অনেকটা প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। এবার পৌরসভা নির্বাচনে কে হবেন ছাতক পৌরসভার মেয়র, নতূন না পুরাতন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মনে। এখানে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রাশেদা আহমেদ ন্যান্সি (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। আবুল কালাম চৌধুরী এর আগে টানা তিনবার মেয়র ছিলেন। এটি চতুর্থ বারের মতো তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি মেয়র পদে তিনি প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর আগে তিনি ছাতক উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুই রাজনৈতিক দলের দুইজন প্রার্থী হওয়ায় প্রথম থেকেই সরগরম হয়ে উঠে। এ নির্বাচনী আমেজটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। পোষ্টারে পোষ্টারে চেয়ে গেছে শহরের প্রতিটি অলি-গলি ও পাড়া-মহল্লা। দলীয় প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে দলের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচার-প্রচারনায় নেমেছিলেন প্রার্থীদ্বয়। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে নিয়ে প্রার্থীরা ঘুরেছেন প্রতিটি ভোটারের দোয়ারে। চেয়েছেন ভোট, দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। শুরু থেকে কোমর বেঁধে মাঠে ময়দানে নেমে প্রচারনার পাশাপাশি ভোটারদের সাথে তারা নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করে আসছিলেন। শীতকে উপেক্ষা করে দিন-রাত সমান তালে প্রার্থীরা মানুষের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। নিজেদের সমর্থকের পাল্লা ভারি করে তুলতে সকল ধরণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থী ও দলীও নেতা-কর্মীরা। ছাতকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনায় নেমেছেন কেন্দ্রিয়, জেলা-উপজেলার নেতারা। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষেও কেন্দ্রিয় নেতা ছাড়াও জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দরা প্রচারনায় অংশ নিয়েছেন। দলীয় কোন্দল না থাকায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিএনপির স্থানীয় দু’বলয়ের নেতারা ঐক্য। এ ঐক্যের কারণে তারা বেশ ফুরফুরে। অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপির প্রার্থী। যে কারণে ১৬ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমেদ ন্যান্সির বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে দলীয় বিভক্তি ও কোন্দলের কারণে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলয়ের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহিদ মজনুসহ অন্যান্য নেতারা নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন। বিগত ১৫ বছরের কর্মকান্ড তুলে ধরে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দেশ জুড়ে উন্নয়নের মহোৎসব চলছে। এর অংশ হিসেবে ছাতক পৌরসভায়ও উন্নয়ন চলমান রয়েছে। চলমান কাজ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ পৌরসভাটি একটি আধূনিক পৌর সভায় রুপ নেবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহ রাখতে ১৬ জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য সকল ভোটারদের প্রতি তিনি আহবান জানান। বিএনপির প্রার্থী রাশিদা আহমেদ ন্যান্সি জানান, জনবান্ধব মেয়র হতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে পৌরবাসীর সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে পৌরবাসীও ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষ বিজয়ী হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বর্তমান মেয়র পৌরবাসীকে শাসন করছে। এ পৌর সভায় ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, লাইটিং ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থ। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তায় মানুষ হাটা-চলা করতে পারে না। তিনি ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পৌরসভার সকল ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। পৌরসভার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে ছাতক পৌরসভা স্থাপিত হয় ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে। ২০০৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পৌরসভাটি ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এ পৌর সভায় প্রতিষ্ঠাকালিন নির্বাচনে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল ওয়াহিদ মজনু মিয়া। তিনি ৮ এপ্রিল ১৯৯৯ থেকে ১৬ নভেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ১৭ নভেম্বর ২০০৪ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত টানা তিনবার অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী বিজয় লাভ করে পৌর চেয়ারম্যান ও পরে পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। শুরু থেকে পৌর সভাটি আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। এ নির্বাচনে দু’দলের দুইজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ৯টি ওয়ার্ডে ৩৩জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শেষ। এখন পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে বেঁচে নেয়ার পালা ভোটারের। ভোটাররাও তাদের মূল্যবান ভোটটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। যাকে ভোট দিলে পৌরবাসীর কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে এমন প্রার্থীকে পছন্দ করছেন ভোটাররা। ছাতক উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্ত ফয়েজুর রহমান জানান, নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৩০হাজার ২৮০ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ ও নারী ভোটার রয়েছেন ১৫হাজার ৯জন। আগামী ১৬ জানুয়ারি শনিবার ১৯টি কেন্দ্রের ৭৭টি ভোট কক্ষে ছাতক পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পৌর নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ