পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সউদী উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল আইস’র ঢাকা সফরে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সফররত সউদী মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও বাংলাদেশের তরফ থেকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রত্যাশা অনেক বেশী। মুসলিমবিশ্বের প্রাণকেন্দ্র ও পবিত্রতম ভূমি সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরনো, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যম-িত। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে এবং প্রধান বৈদেশিক কর্মসংস্থান তথা শ্রমবাজার হিসেবে সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানামাত্রিক গুরুত্ব বহন করে। এছাড়া সউদী আরব আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তবতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস ও হুমকির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যকার গতানুগতিক ঐতিহ্যগত সম্পর্কের মাত্রার সাথে নতুন চিন্তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর এটাই প্রকৃষ্ট সময়। সউদীমন্ত্রীর কণ্ঠে সেই প্রত্যাশিত সহযোগিতার কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যদিও যথাযথ কারণেই এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক বিরোধে বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়তে চায়না; তবে মুসলমানের পবিত্র কিবলা ও মহানবী (স.)’র স্মৃতিধন্য পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনার উপর যে কোন হুমকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে মোটেও কুণ্ঠিত হবেনা, আমাদের সরকার ইতিমধ্যেই এই নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী হুমকির কারণে বাংলাদেশ যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বোধ করছে, ঠিক তখন সউদী আরবের মত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগের ঘোষণা এসেছে। অতঃপর সউদী প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রশস্ত করবে বলেই ধারণা করি। তেলসম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছাড়াও ধর্মীয় ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সউদী আরবের সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নানাভাবে লাভবান হতে পারে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। সেই সাথে চীনা প্রধানমন্ত্রী এমনকি পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনাও সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় একই সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিগুলোর নেতাদের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থানে ঠেলে দেয়ার দেশী-বিদেশী তৎপরতা বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ইস্যুতেও আমাদের তৈরী পোশাক রফতানী, বৈদেশিক বিনিয়োগে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ভর করেছে। নিজেদের নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা জারিসহ আরো কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতা ও কূটনৈতিক কর্মকা- সাময়িকভাবে সীমিত করেছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে সউদী আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা নেতাদের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে অবস্থার একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়। বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক ধারা থেকে দেশকে একটি ইতিবাচক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার এই প্রয়াসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সুদক্ষ প্রয়াস ও নেতৃত্ব প্রাথমিকভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে এসব সম্ভাবনা চলমান বাস্তবতায় জাতির স্বার্থে কতটা কাজে লাগানো যাবে তা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর। পবিত্র নগরীদ্বয় মক্কা-মদিনার নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত থাকবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকবে বলেই আমরা মনে করি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও আদান-প্রদানের সম্পর্ক একটি চলমান প্রক্রিয়া। যথাযোগ্য ও সময়োপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হয়। সরকার এসব সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।