পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। এই খবরটি দিয়েছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক এন্ড বিজনেস রিসার্চ। সিইবিআর’র ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির অবস্থান বিশ্বের ১৩৫টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে ৪১তম। ২০২৫ সালে হবে ৩৪তম, ২০২৩০ সালে হবে ২৮তম ও ২০৩৫ সালে ২৫তম। বর্তমান সরকারেরও লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া। উপরন্তু ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়া এবং দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। এসব আশাব্যঞ্জক খবর। কিন্তু এসব খবর হচ্ছে অর্থনীতির আকার নিয়ে। এই ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে বর্তমান উন্নতির ধারার ভিত্তিতে। কিন্তু, দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষি, গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয়ভিত্তিক। দেশের কৃষির উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকা নির্ভর করে অনেকটা প্রকৃতির উপর। যেমন: সা¤প্রতিক সময়ে খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পন্ন হলেও ২০২০ সালে ব্যাপক বন্যার কারণে আমন ধান উৎপাদন কম হয়েছে ২০-২৫ লাখ মে. টন। ফলে ২০ লাখ টন চাল আমদানি করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এই পরিমাণে চাল আমদানি করা হলে সর্বাধিক রিজার্ভ মজুদ ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে অনেক কমে যাবে। উন্নতিও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরূপ প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা আরও হতে পারে। সর্বোপরি জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব তো রয়েছেই। তদ্রুপ গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয়ের উন্নতিও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, এসব বৈশ্বিক চাহিদার উপর নির্ভরশীল। যেমন: করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে গার্মেন্ট রফতানি ও বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের উপর। এ অবস্থা কতদিন বহাল থাকবে তা বলা কঠিন। তবে, এটা নিশ্চিত যে, আমাদের প্রবাসীদের মূল জায়গা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য, যারা জ্বালানি তেলনির্ভর দেশ। তেলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। সে কারণে এবং বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে তাদের উন্নয়নকর্ম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের বিদেশি লোকের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও বিদেশি লোকের চাহিদা অনেক হ্রাস পেয়েছে। তাই বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছে ও আসছে। এই অবস্থায় বিদেশে যেটুকু অভিবাসীর চাহিদা রয়েছে, তা দক্ষ লোক, যা আমাদের তেমন নেই। সর্বোপরি প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি তো রয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, মানুষের প্রয়োজনীয়তা তত কমছে কয়েকগুণ হারে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের ২০২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শর্ত পূরণ করতে পারলে। এটা হলে গরিব দেশ হিসাবে বর্তমানে যেসব সুবিধা ভোগ করছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে ২০২৭ সাল থেকে। তখন ব্যবসা, বিনিয়োগ, ঋণ, সাহায্য ইত্যাদির বিশেষ সুবিধা আর থাকবে না। তখন এসব নিতে হলে নিতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায় কঠিন শর্তে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়বে দেশের উন্নতিতে। তাই এটা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা ইতোপূর্বে সামলাতে পারেনি অনেক দেশ। আবার তারা গরিব দেশের কাতারেও ঢুকতে পারেনি। ফলে হাবুডুবু খেয়েছে। বাংলাদেশও সেরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে কি-না তা নিয়ে আশংকা রয়েছে পন্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে। আবার বিদেশি ঋণ, সুবিধা, বাণিজ্য ছাড়া উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন। কারণ, দেশে কর জিডিপির হার ১০% এর নিচে, যা এ অঞ্চলের মধ্যে কম। উপরন্তু গত ২৬ ডিসেম্বর ভোয়ার খবরে প্রকাশ, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি বাংলাদেশেরও জীবন-জীবিকাসহ সামগ্রিক জীবনকেই বিপন্ন বিপর্যস্ত লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষ ক্রমশ হারিয়েছে টিকে থাকার সক্ষমতা’। করোনা সৃষ্ট এই ক্ষতি সামলে নিতে কতদিন লাগবে তা বলা কঠিন। অপরদিকে, বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, করোনায় দারিদ্র্য বেড়ে ৪০% হয়েছে। অনুমেয় যে, এই হার আরও বেড়ে যাবে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠির প্রায় ১২.৩% বেকার। ওদিকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার পর প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছে। এসব নানা কারণে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে বার্ষিক ৮% ও পরবর্তীতে তারও অধিক হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি-না তা ভাববার বিষয়।
যা’হোক, সিইবিআর’র উক্ত প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার নিয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু উক্ত সময়ে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা, বেকারের সংখ্যা, মোট জনসংখ্যা ও আয় বৈষম্য কত দাঁড়াবে তা বলা হয়নি। কিন্তু এটা প্রায় নিশ্চিত যে, দেশের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে যেমন অর্থনীতির আকার বড় হবে,তেমনি দরিদ্র জনগোষ্ঠির সংখ্যা, বেকারসংখ্যা, মোট জনসংখ্যা ও আয় বৈষম্যও বাড়তেই থাকবে! উপরন্তু এসব ক্ষেত্রের অনেকগুলোতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। আর সেটা হলে, তা হবে অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার চেয়ে বেশি লজ্জাজনক।
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সংস্থা- ইউএনডিপির ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে ২০২০’ মতে, ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ২৪.৬% মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের শিকার। এছাড়া ১৮.২% বহুমুখী দারিদ্র্যের দিকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব ৪০% মানুষের আয় মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ২১%। আর সবচেয়ে ধনী ১০% আয় মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ২৭%। বাংলাদেশের গিনি সূচকে পয়েন্ট দশমিক ৪৭৮। কোনও দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০ এর ঘর পেরলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়।এই সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে। বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম।অপরদিকে, ওয়েলথ এক্সের ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩% হারে। এই ধনীদের কেউই কোন বিশ্বখ্যাত আবিষ্কার, উদ্ভাবন, শিল্প স্থাপন করে তার মুনাফা দিয়ে ধনী হয়নি। তারা ধনী হয়েছে অবৈধ পথে, যা এখনও অব্যাহত আছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে।দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও তেমন কোন কাজে আসেনি! আর এই অবৈধ উপার্জনই দেশের আয় বৈষম্যের প্রধান কারণ। সার্বিক উন্নতির অন্তরায়। তাই যে কোন মূল্যেই হোক দেশের অবৈধ উপার্জন বন্ধ করা জরুরি। স্মরণীয় যে, সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের মহান স্বাধীনতার চেতনার অন্যতম হচ্ছে, সকলের অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির পথে পা বাড়িয়েও দেশে আয় বৈষম্য সর্বাধিক হয়েছে বৈশ্বিকভাবে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অবাধ ও ভয়াবহ দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩-৪% কম হচ্ছে, সার্বিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে ও দারিদ্র নিরসন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্মরণীয় যে, এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিরাট অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে,যার পরিমাণ বছরে প্রায় লাখ কোটি টাকা। তাই দুর্নীতিই হচ্ছে, দেশের দারিদ্র্য নিরসনের প্রধান বাধা ও আয় বৈষম্য ব্যাপক হওয়ার প্রধান কারণ। তাই দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নির্মূল করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আর দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এসব বন্ধ করা দূরহ।
দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার আর একটি অন্তরায় হচ্ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বার্ষিক ১.৪%। এটা গড় হার। কিন্তু গরিব মানুষের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও অনেক বেশি। আর এই গরীব মানুষ সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা দেশের সম্পদের চেয়ে বোঝাই হচ্ছে বেশি! দ্বিতীয়ত: বর্তমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের মোট লোক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় দ্বিগুণ, যার বিরাট অংশ হবে দরিদ্র। আর এই দারিদ্র্য বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জন্য চরম লজ্জাস্কর। তাই দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা জরুরি। কিন্তু দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার জন্য বেকারত্ব দূর করতে হবে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। শিক্ষিত তরুনদের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বাধিক। উপরন্তু প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ তরুণ শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ১.১৩ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (তন্মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ৩২.৫ লাখ)। অর্থাৎ ৫ বছরে গড়ে বার্ষিক ২২-২৩ লাখ করে লোকের কর্মসংস্থান করা হবে। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে তা নিশ্চিত নয়। অথচ শ্রম বাজারে নতুন প্রবেশ করার বিষয়টি নিশ্চিত। তাই প্রতি বছরই বেকারের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এভাবে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের বেকারের সংখ্যা যা দাঁড়াবে, তা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক হতে পারে। আর বেকারত্ব মানে গরীব হয়ে যাওয়া, পথভ্রষ্ট হওয়া ও মানসিক যন্ত্রণায় নিপতিত হওয়া। বেকারত্ব সৃষ্টির সাথে যুক্ত আছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও। শিক্ষা ব্যবস্থা সেকেলে। কর্মমুখী নয়। ফলে বেকারত্ব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দক্ষ লোক পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে লাখ লাখ দক্ষ লোক বিপুল বেতন দিয়ে এনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালাতে হচ্ছে। তাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা আবশ্যক। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কর্মমুখী করা প্রয়োজন অবিলম্বে।
আয় বৈষম্য সর্বাধিক ও দারিদ্র্য নিরসন না হওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির অভাব। আইএলও’র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১ মতে, ‘ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল বাংলাদেশে ৪৮ ডলার (বাংলাদেশে শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলার), আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ৩৮১ ডলার। ২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে’। অপরদিকে,ভেরিস্ক ম্যাপেলক্রপটের মডার্ন স্লােভারি ইনেডক্স-২০২০ মতে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থার অবনতি হয়েছে। প্রথম বারের মতো এই দু’টি দেশ ‘ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। অথচ আইএলও’র উক্ত রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি মিয়ানমারে ৫.৯%, এরপর বাংলাদেশে ৫.৮%। তবুও বাংলাদেশে শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম মজুরি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে, শ্রমিকরা দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। বংশ পরস্পরায় গরিবই থেকে যাচ্ছে। আয় বৈষম্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দুরবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেই বেশি। তাই দেশের সব শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম মজুরি আইএলও’র শোভন মজুরি নিশ্চিত করাও দরকার।
আয় বৈষম্য ব্যাপক হওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্যের অভাব। ফলে, তারা চরম লোকসানের মুখে পড়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দীর্ঘদিন যাবত। অথচ দেশের ধারাবাহিক উন্নতির প্রধান ধারক ও করোনাকালের অর্থনীতি সচল রাখার প্রধান বীর হচ্ছে, দেশের কৃষককুল। তবুও তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় গরীব হয়ে পড়ছে। তাই অনেকেই পেশা পরিবর্তন করছে বাধ্য হয়ে। এতে কৃষির উন্নতিও ব্যাহত হচ্ছে, যা দেশের জন্য সুখকর নয়। কারণ, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট।তাদের যদি আর্থিক উন্নতি না হয়, তাহলে অর্থনীতির আকার বড় হয়ে তাদের লাভ কি? তাই কৃষকের আর্থিক উন্নতি ঘটাতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। এটা করা হলে দারিদ্র্যের হার ও আয় বৈষম্য অনেক হ্রাস পাবে। এছাড়া, উন্নতি অব্যাহত রাখা ও বেকারত্ব দূর করার জন্য টেকসই কর্মসংস্থান আবশ্যক, যার অন্যতম হচ্ছে, প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতের উন্নতি, পরিবেশ সুরক্ষা, প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থে ও মানে সম্পন্ন করা এবং ভ্যালুলেস প্রকল্প গ্রহণ নিষিদ্ধ করা দরকার। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা আবশ্যক (সরকারি পেনশন সুবিধা ছাড়াই)।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।