Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

অসংখ্য শিরা-উপশিরা যেমন রক্ত বহন বা প্রবাহিত করে দেহকে সুস্থ্য রাখে, তেমনি অসংখ্য নদী-উপনদী ও শাখা নদীর প্রবাহিত পানি বাংলাদেশকে সজীব-সতেজ রাখে। বাংলাদেশকে যে সুজলা-সুফলা বলা হয়, তার প্রধান কারণ হচ্ছে, জালের মতো বিস্তৃত অসংখ্য নদ-নদী। এসব নদী প্রবাহিত মিষ্টি পানিই পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র, ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে মানুষের জীবনধারণের মূল উৎস হয়ে আছে। পৃথিবীতে এমন দেশ খুব কমই আছে, যেখানে বাংলাদেশের মতো নদ-নদী রয়েছে। এসব নদ-নদীর প্রতিটিই প্রকৃতির দান। কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্টি করা হয়নি। পৃথিবীর বহু দেশ রয়েছে, যেখানে কৃত্রিম উপায়ে খাল ও নদী সৃষ্টি করা হয়েছে। নদী বা খাল কেটে সাগর থেকে পানি আনা হয়েছে। সউদী আরবের মরুভূমিতে ফসল ফলানোর জন্য খাল খনন করে সমুদ্র থেকে পানি আনা হয়েছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে, পানির জন্য এ ধরনের ব্যয়বহুল কাজ করতে হয়নি। নদ-নদীগুলো অফুরন্ত পানির উৎস হয়ে রয়েছে। কখনো কখনো নদী উপচে বন্যায় আমাদের ভেসে যেতে হয়। এর কারণ, নদ-নদীগুলো আর আগের মতো স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয় না। প্রয়োজনীয় পানিও ধারণ করতে পারে না। পলি পড়ে নাব্য হারিয়ে মৃত অবস্থায় উপনীত। বহু নদ-নদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, জীবনযাপন, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নগর, হাটবাজার, যাতায়াত, বসতি, ভাষার বৈচিত্র সবই গড়ে উঠেছে নদ-নদীকে কেন্দ্র করে। প্রবাহমান নদ-নদীর স্রোতধারায় তাদের জীবন এগিয়েছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির মেরুদন্ড হয়ে আছে নদ-নদী। আজকে বাংলাদেশের যে উন্নতি ও অগ্রগতি, তা নদ-নদীর প্রবাহের উপরই দাঁড়িয়ে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এটাই পরম সত্য।

দুই.
জালের মতো বিস্তৃত নদ-নদী যেমন আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের, অন্যদিক দিয়ে দুর্ভাগ্যেরও। দুর্ভাগ্য এজন্য যে, আমাদের প্রধান চারটি নদ-নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ ৫৪টি ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে শুধু গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি রয়েছে। বাকি ৫৩টি নিয়ে কোন চুক্তি নেই। এটাই আমাদের জন্য দুঃখের কারণ হয়ে রয়েছে। সবগুলো নদ-নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চাবি-কাঠি ভারতের হাতে। সে ইচ্ছামতো তার অংশে বাঁধ, গ্রোয়েন নির্মাণ ও আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তার প্রয়োজনে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, আবার বন্যায় পানি ছেড়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ভারতের এই আচরণ অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হলেও, তার তোয়াক্কা করছে না। আন্তর্জাতিক নিয়মে অভিন্ন নদ-নদীর পানি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমানুপাতিক হারে পাওয়ার বিধান থাকলেও সে তা মানছে না। বরং দিন দিন অধিক পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সবকটি নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা এখন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আমরা শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতে কেবল প্রমত্তা পদ্মার কথা শুনেছি, বাস্তবেও দেখেছি। অনেকে গল্প-উপন্যাস ও গান লিখে-গেয়ে বিখ্যাতও হয়েছেন। দুঃখের বিষয়, পদ্মার এই দুঃসময় নিয়ে কাউকে সাহিত্য ও সঙ্গীত রচনা করতে দেখা যায় না। তাহলে কি পদ্মার প্রয়োজনীয়তা শিল্পী, সাহিত্যিকদের কাছে ফুরিয়ে গেছে? তাদের কি উচিত নয়, পদ্মার যে দুরবস্থা, তা নিয়ে কাজ করা? দেশের নদ-নদীর করুণ চিত্র তুলে ধরা? পদ্মার এখন কী অবস্থা, তা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর মুখ পর্যন্ত পদ্মার দীর্ঘ এলাকার অধিকাংশই শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। যে পদ্মার পানি প্রবাহের মধ্যে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলার ডুবে থাকত, সেই ব্রিজের ১২টি এখন শুকনো চরে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মার এই করুণ দশার কারণে এর সাথে সংযুক্ত প্রায় ৮৫টি শাখা নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ফারাক্কার উজানে ভারতের অংশে পদ্মার পানি থৈ থৈ করছে। ভারত ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কানপুর ব্যারাজ এবং উত্তর প্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য প্রায় ৪০০ পয়েন্ট দিয়ে পদ্মার পানি সরিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে, যে তিস্তাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প গড়ে উঠেছে, সেই তিস্তার উপর দিয়ে এখন মানুষ হেঁটে চলাচল করতে পারে। এর ফলে তিস্তা সেচপ্রকল্প টিকে থাকবে কিনা, এ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রবাহও কমে গেছে। এর ফলে যমুনা নদীও তার স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের নদ-নদীর এসব করুণ কথা প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে। নদ-নদী বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগেরও কমতি নেই। তারা বিভিন্ন পরামর্শও দিচ্ছেন। তাতে নদ-নদীতে এক ফোঁটা পানিও যুক্ত হচ্ছে না। এর কারণ, এসব প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ, পরামর্শ যার শোনার কথা, সেই সরকারের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উল্টো আমরা দেখি, সরকার ভারতের প্রশংসা করতে করতে এমনভাবে বিগলিত হয়ে পড়ে যে, পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলতে যারপরনাই লজ্জাবোধ করে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন একটি ইংরেজী দৈনিকের সাক্ষাৎকারে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বলেছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার কাজ করছে। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলে তাদের বিব্রত করতে চাই না। এই যদি হয়, সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অবস্থান, তাহলে ভারত তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করবে, এমন আশা সুদূরপরাহত। ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর তিস্তা চুক্তিটি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। যেখানে ভারতের কাছ থেকে চেয়ে কিছু পাওয়া যায় না, সেখানে ভারত তার ইচ্ছায় তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করবে, এমন আশা স্বপ্নেও যে পূরণ হবে না, তা দেশের মানুষ জানে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবার ভারতের সাথে সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে কেন তিস্তা চুক্তি করার কথা ভারতকে বলতে চান না? বলা বাহুল্য, সরকার ভারতের সাথে অতুলনীয় সুসম্পর্কের কথা বলতে বলতে মানুষের কান ঝালাপালা করে ফেলছে। অন্যদিকে, ভারতও বাংলাদেশের সাথে তার সুসম্পর্কের সোনালী অধ্যায়ের কথা বলছে। এ সম্পর্কের কথা বলে সে তার সব স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। করিডোর, নৌ ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহার, বাণিজ্যিক সুবিধাসহ যা যা প্রয়োজন তার সবই আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনাটুকু দিচ্ছে না।

তিন.
ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য প্রাপ্তির আশা এখন দূরাশা ছাড়া কিছুই নয়। তার কাছ থেকে পানি আদায়ের যে কয়টি কৌশল বা বিনিময় প্রথা ব্যবহার করা যেত, তার কোনোটিই এখন আর বাংলাদেশের হাতে নেই। ভারতের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, বাংলাদেশের নৌ ও স্থলপথ ব্যবহার করে তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভারতের এই যোগাযোগ ব্যবস্থা বা ট্রানজিট হতে পারতো একটি বড় হাতিয়ার। ভারতের এই চাওয়ার বিষয়টিকে পুঁজি করে তিস্তার চুক্তিটি নিয়ে বার্গেইনিং করে স্বাক্ষর করা যেত। সরকার সেদিকে যায়নি। বরং ভারতের খুশি করাই যেন তার সন্তুষ্টি। বিনা বাক্যে ভারতের সব চাহিদা পূরণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন ভালো করেই জানে, ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা নিকট নয়, দূর ভবিষ্যতেও আদায় করা সম্ভব হবে না। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের মানুষ তা দেখেছে। নিষ্পন্ন হওয়া এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই ভারত ৪৪ বছর লাগিয়েছে। আর ন্যায্য পানি? সে যে দিল্লী দূরস্ত হবে, তা বলা অনাবশ্যক। এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা যে নিজেরা করব, সে ক্ষেত্রেও ভারত আপত্তি জানাচ্ছে। ফারাক্কার বিকল্প হিসেবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ সরকার নেয়, তাতেও ভারতের আপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার কথা, বিকল্প গঙ্গা ব্যারেজ নির্মিত হলে নাকি তার অংশে ভাঙ্গন এবং বন্যা দেখা দিতে পারে। কী আশ্চর্য কথা! ভারত ফারাক্কার মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করবে, আর তা থেকে যেটুকু পানি দেবে, তা ধরে রাখার বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রেও আপত্তি জানাচ্ছে। এমন বৈরি মনোভাবসম্পন্ন এবং অতিস্বার্থপর প্রতিবেশী বিশ্বে আর কোনো দেশের আছে কিনা আমাদের জানা নেই। অথচ রাজবাড়ির পাংশায় ২.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গঙ্গা ব্যারেজ নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬টি জেলার ১৬টি নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পাবে। ব্যারেজ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকবে পানির বিশাল রিজার্ভার। সারা বছরই এর মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। গঙ্গা নির্ভর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। এ অঞ্চলে বসবাস করা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যমোচন সম্ভব হবে। লবণাক্ততা থেকে সুন্দরবন রক্ষা পাবে। পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত হবে ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ৫১ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ২৯ লাখ হেক্টর জমি কৃষি কাজে এবং ১৯ লাখ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আসবে। এতে বছরে ২৫ লাখ মেট্রিক টন বাড়তি ধান এবং ১০ লাখ টন অন্যান্য ফসল উৎপাদিত হবে। মৎস্য উৎপাদন হবে ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ব্যারেজ নির্মাণে যে খরচ হবে, তা মাত্র ৫ বছরে উঠে আসবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হবে। অথচ ভারত আমাদের নিজেদের নেয়া এই ব্যবস্থায়ও আপত্তি জানিয়েছে। ফলস্বরূপ প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে আছে। ভারত এ প্রকল্প নিয়ে যে যুক্তি দেখিয়েছে বিশেষজ্ঞরা একে খোঁড়া বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশের যে জায়গায় ব্যারেজটি নির্মাণ করা হবে, সেখান থেকে উল্টো স্রোত ভারতীয় অংশে গিয়ে আঘাত করার কোনো কারণ নেই। উল্টো স্রোত দেখা দিলেও তা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করবে না। বরং দেশকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করবে। ভারত বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই পানি সংরক্ষণের উদ্যোগটিও নিতে দিচ্ছে না। শুধু এই প্রকল্পই নয়, তিস্তায় পানি সংরক্ষণের প্রকল্পেও আপত্তি জানাচ্ছে।

চার.
বলা হয়, পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদরাজির অস্তিত্ব টিকে আছে পানির কারণে। যেখানে পানি নেই সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। এ কারণে এখন বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ও মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পানি রয়েছে কিনা তা আগে সন্ধান করেন। পানি থাকার অর্থ প্রাণের অস্তিত্ব থাকা। এজন্য ভিনগ্রহে পানির অস্তিত্ব খোঁজার জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করতেও দ্বিধা করছে না। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব এবং সভ্যতা গড়ে উঠেছে পানিকে কেন্দ্র করে। এই উপমহাদেশের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, জনপদ, নগর, ব্যবসা বানিজ্য, সমাজ-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। আর বাংলাদেশকে সজীব-সতেজ থাকার লাইফ লাইন হচ্ছে, জালের মতো বিস্তৃত নদ-নদী। এসব নদ-নদীর নাব্য ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। এজন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। ভারতের সাথে যে সুসম্পর্কের কথা বলা হয়, তার ভিত্তিতে পানির ন্যায্য প্রাপ্তির বিষয়টি বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। ভারত বিব্রত হবে, এমন মনোভাব পরিহার করে চুক্তির কথা বলতে হবে। তাকে বলতে হবে, আমরা তোমার সব দাবী বাস্তবায়ন করেছি, তুমি আমাদের তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করো। তা নাহলে, সরকারের সাথে ভারতের সুসম্পর্কের বিষয়টি জনগণের কাছে প্রহসন ছাড়া কিছুই মনে হবে না। পাশাপাশি গঙ্গা ব্যারেজের কাজ শুরু করতে হবে। এতে ভারত কি বলল, তা আমলে নিলে হবে না। বলা বাহুল্য, যে পদ্মাসেতু নিয়ে আমরা গর্ব করছি, সেই পদ্মায় যদি পানি না থাকে, তবে এ সেতু অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। পদ্মাসেতুকে অর্থবহ করে তুলতে হলে এবং পদ্মার স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের বিকল্প নেই। দেশের নদী শাসনের যে কার্যক্রম তা জোরদার করতে হবে। আমরা জানি, ড্রেজিংসহ দেশের নদ-নদী শাসনের বিভিন্ন কার্যক্রমে বছরে শত শত কোটি টকা বরাদ্দ ও ব্যয় করা হচ্ছে। এই অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এতে অর্থ ব্যয় হলেও, আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না। এ ধরনের অর্থহীন কার্যক্রম ও অপচয় নিরোধ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ন্যায্য-হিস্যা
আরও পড়ুন