২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে দেহে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা কম আর্দ্রতার তারতম্য, ধুলোবালি, ধোঁয়া, সুগন্ধি, ফুলের রেণু, তীব্র গন্ধ, ঠান্ডা, ভাইরাসের প্রকোপ ইত্যাদির কারণে এ সমস্যাগুলো দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ত্বক ও শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে থাকে। পাতা ঝরার দিনগুলো রুক্ষতার ছাপ ফেলে যায় ত্বকের ওপর। শরীরের কিছু অংশ আবার একটু আগেভাগেই আক্রান্ত হয় শীতে।
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এখন শীতকাল চলছে এবং আগামী কয়েক মাস থাকবে। প্রতি বছর ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের শরীরে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় বিভিন্ন রকম শীতকালীন টাটকা শাকসবজি, ফলমূল পাওয়া যায়। টাটকা শাকসবজি, ফলমূল খাওয়ার ফলে শীতকালে সাধারণত রোগব্যাধি কম হয়। কিন্তু তার পরও আবহাওয়ার বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণের কারণে শীতকালেও অনেক রোগব্যাধি দেখা দেয়। অনেক সময় শীতকালে নাক, কান-গলায় বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন- সর্দি, কাশি, অ্যালার্জি, টনসিলে প্রদাহ, গলাব্যথা ইত্যাদি। এটা ছাড়া অ্যাজমা, শিশুদের নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। বছরের এ সময়ে কী কী রোগবালাই হয় এবং এ থেকে মুক্তির করণীয় দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
সর্দি-শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে সর্দির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সর্দি লাগলে কানে ব্যথা করে এবং নাক দিয়ে রক্তও পড়তে পারে। যার ফলে অনেক সমস্যা, যেমন-সাইনোসাইটিস হতে পারে।
কাশি- শীতকালে ঠান্ডায় কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। যার ফলে বুকে ও গলায় ব্যথা দেখা দেয়। অতিরিক্ত কাশির ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় কাশির সাথে কফ বা রক্তও বের হতে পারে। অ্যালার্জি-অ্যালার্জি প্রত্যেক মানুষের দেহে কম-বেশি বিদ্যমান। অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে মানুষের নাক, কান ও গলায় অ্যালার্জির প্রকোপ দেখা দেয়। যার ফলে হাঁচি-কাশি বেশি হয়। অ্যালার্জির জন্য চোখে কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে।
টনসিল- শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে গলার ভিতরের টনসিলে ইনফেকশন হতে পারে। টনসিলে ইনফেকশনের কারণে গলায় ব্যথা ও জ্বর হতে পারে। টনসিলাইটিসের জন্য শিশুদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে এবং বড়দের অফিস ও দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
গলাব্যথা- শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে বিভিন্ন কারণে গলায় ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন-হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি পান করলে, শীতে গরম কাপড় না পড়লে, গলায় ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া টনসিলের কারণে গলায় ব্যথা হতে পারে।
অ্যাজমা বা হাঁপানি- শীতকালে অ্যাজমা দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিয়মিত অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। অনেক সময় শীতকালে ভোরে অ্যাজমার অ্যাটাক বেড়ে যায়। তখন রোগীকে নেবুলাইজেশন করে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া উচিত। বয়স্ক লোকদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এ সময় বেশি সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। শীতের প্রকোপে প্রতি বছর বয়স্ক লোক মৃত্যুবরণ করে। তাই শীতের সময় বয়স্ক লোকদের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুদের নিউমোনিয়া - নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের ইনফেকশন। ভাইরাস ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ শিশুদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম। দ্বিতীয়ত, পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণে শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শীতে সবচেয়ে বড় সমস্যা শিশুদের নিউমোনিয়া। যারা শীতকালে জন্মগ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে বেশি ভয় হলো নিউমোনিয়া। শিশু বয়সে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হলো নিউমোনিয়া। শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার ফলে শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই শিশুদের অতি যত্নে রাখতে হবে।
শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম খাওয়া এবং গরম কাপড় না পরার কারণে নাক, কান ও গলার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে শিশুদের নিউমোনিয়াও হয়ে যেতে পারে। যার ফলে এ সময় শিশু ও বয়স্কদের বেশি রোগব্যাধি লেগেই থাকে। তার পরও এ সময় মামস, ভাইরাসজনিত জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার- শীতকালে সাবধানে থাকতে হবে। যাতে সর্দি, কাশি ও ভাইরাসজনিত জ্বর না হয়। ঠান্ডাজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন-ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বেশি নজর দিতে হবে। প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। এরপরও শীতকালে সর্দি-কাশি হাওয়ার পরও গুরুত্ব দেয়া হয় না বা অবহেলা করা হয়। তাই যখন নাক, কান ও গলায় সমস্যা দেখা দেবে, তখনই একজন নিকটস্থ ইএনটি বিশেষজ্ঞ চিকিসৎকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। সবশেষে মনে রাখুন-খাবার গ্রহণের আগে হাত মুখ ভাল করে পরিষ্কার করা জরুরি। অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিমিত ও নিয়মিত আহার, শারীরিক ব্যায়াম, বিশ্রাম, নিদ্রা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সুস্বাস্থ্যের পূর্বশর্ত।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।