Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শরীরের জন্য রোদের প্রয়োজন

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

রোজই সূর্য উঠে। অথচ তার মুখ আমরা ক‘জনই বা দেখি। মুখ দেখা থাক, গায়ে রোদ লাগাতেই প্রবল অনীহা আমাদের। অথচ কী আশ্চর্য ব্যাপার দেখুন, বাজারে একটা তেলের সঙ্গে পাউডার দিলে তেলের বোতল কিনে ফেলি অথচ প্রকৃতির রোদ, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী অজস্র উপাদান বিলিয়ে দিলেও আমরা নিতে চাইছি না। বরং উলটো গায়ে যাতে রোদ না-লাগে, সেইজন্য গায়ে লেপটে মেখে নিচ্ছি সানস্ক্রিন লোশন। অবশ্য রোদের ভয়টা একেবারে অমূলক নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ত্বকে রোদ পড়লে কিছু সমস্যা হয়। উদাহরণ হিসেব- ফোটো পিগমেনটেশন বা ত্বকে গাঢ় কালো দাগ, ঘামাচি, ফোস্কা পড়ে যাওয়া, ট্যান, ফোটো অ্যালার্জির কথা বলা যায়। তবে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক নয়। বরং কিছু নিয়ম মেনে গায়ে রোদ লাগালে লাভবান হবেন সিংহভাগ মানুষ। অথচ আমরা বুঝতেই চাইছি না যে, রোদের প্রতি ভবিষ্যতে এই উন্নাসিকতার ফলাফল বড় ভয়াবহ হতে চলেছে। কারণ রোদ গায়ে লাগালে পাওয়া যায় অসংখ্য সুফল। আর রোদ ত্যাগ করলে কুফল। আপাতত সুফলের দিকে তাকানো যাক-

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- কিছু সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গায়ে রোদ লাগালে টি সেল‘গুলো প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, এই ‘টি সেল’ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে সেখানকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সরাসরি জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় টি সেল। তাই টি সেলের সক্রিয়তা বজায় থাকা দরকার।

২. ভিটামিন ডি- একমাত্র ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় রোদ পাওয়ার পরেই! ভিটামিন ডি-এর অভাবে অকালে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা যাচ্ছে, শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। অথচ সামান্য গায়ে রোদ লাগালেই এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বিদেশের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গ্রীষ্মে গায়ে ভালোভাবে রোদ লাগালে রক্তে ভিটামিন ডি ৩-এর মাত্রা ভালো থাকে। শীতকালে এই ভিটামিন ডি ৩ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় এই ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ- বেশ কিছু সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে ব্রেস্ট, কোলোন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে সূর্যের আলো।

৪. ঘুমের হরমোন- আমাদের শরীরের মেলাটোনিন নামে একটি হরমোন ক্ষরিত হয়, যার কারণে আমাদের ঘুম আসে। দিনের বেলায় প্রকৃতির উজ্জ্বল আলোয় কাজ করলে রাতে মেলাটোনিন ক্ষরণ ভালো হয়। খুব ভালো হয় ভোরের আলোয় জেগে উঠে দিন শুরু করলে। মেলাটোনিন আমাদের শরীরবৃত্তীয় ঘড়িটিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

৫. মন ভালো রাখতে- সঠিকভাবে সূর্যের আলো গায়ে পড়লে আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনের কারণে আমাদের মেজাজ ভালো থাকে। জানার বিষয় হয়, এন্ডোরফিন হরমোন ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। ডিপ্রেশন বা অবসাদ কাটাতেও রোদ খুব উপাকারী।

৬. রক্তচাপ কমাতে- রোদে থাকে অতিবেগুণি রশ্মি। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এই রশ্মির সংস্পর্শে আসলে ত্বক থেকে নাইট্রিক অক্সাইড নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৭. পুরুষ হরমোন-বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে যখন ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অনুকূলে তাকে। আর ভিটামিন ডি‘র প্রধান উৎস হল সূর্যালোক।

৮. শ্বেতি সারাতে রোদ- আমাদের ত্বকে আছে মেলানোনাইট নামে কোষ। এই কোষ মেলানিন তৈরি করে। মেলানিন হল এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই রঞ্জক পদার্থের কারণে আমাদের দেহের রং কালো হবে না ফর্সা হবে তা নির্ভর করে। মেলানিন আসলে আমাদের ত্বক রক্ষা করে। আমরা যখন রোদে বের হই, তখন অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকে পড়ে। এই রশ্মির কিছু কিছু খারাপ প্রভাবও আছে। সেই খারাপ প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে বাঁচাতে মেলানোসাইট কোষগুলো উদ্দীপিত হয়ে যায় ও বেশি করে মেলানিন তৈরি করে। এই কারণে রোদে বেড়ানোর পর কারও কারও ত্বক লাল বা কালচে হয়ে যায়। শ্বেতি রোগে মেলানিন উৎপাদনে সমস্যা হয়। তাই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসক রোগীকে রোদে থাকতে বলেন নিদিষ্ট সময়ের জন্য।

৯. ছোটোদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে- কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি থাকে। এদের উচ্চাতা বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁদের চিকিৎসার সময় দৈহিক বৃদ্ধির হার গ্রীষ্মকালে বেড়েছে। তা ছাড়া ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় আলট্টা ভায়োলেট রে পড়ার পরই। ভিামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চতাও বাড়ে।

১০. ছোটোদের জন্ডিস- বাচ্চারা জন্মের পরই অনেক সময় জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। এই জন্ডিস সারাতেও রোদ ভালো কাজে দেয়। তবে সরাসরি শিশুকে রোদে রাখলে চলবে না। বরং কাচের পাল্লা দেওয়া জানালার তলায় শিশুকে রাখুন মিনিট দশেক। বাচ্চা ভালো থাকবে।

১১. কখন রোদে বের হবেন - সকাল ১১টা পর অতিবেগুনি রশ্মির তলায় না-যাওয়াই ভালো। তাই সকাল ৮টার পর আধাঘন্টা রোদে কাটান। এই সময়ে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কম থাকে। ছোটোরা মিনিট ১৫ রোদে কাটালেই চলবে। তবে একটু বড় বয়সের বাচ্চারা রোদে খেললে তেমন একটা সমস্যা হয় না।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোদ-প্রয়োজন

আরও পড়ুন