Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেবে দেশের খাতভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দেশের খাতভিত্তিক উন্নয়নের মাপকাঠি বিবিএস’র তথ্যে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিবিএস’র বেশিরভাগ তথ্য সঠিক নয় বলে আমলে নিচ্ছে না। এমনকি দেশের বেশিরভাগ মানুষও বিশ্বাস করছে না। তাই দেশের খাতভিত্তিক উন্নতির প্রকৃত চিত্র পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়, যাদের তথ্যের ব্যাপারে দেশের মানুষ ও সরকারের কোনো আপত্তি উঠেনি। ফাও’র ২০১৯ সালের তথ্য মতে, ‘বর্তমানে বিশ্বে কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চালে চতুর্থ, মাছে অষ্টম, স্বাদু পানির মাছে তৃতীয়, ইলিশে শীর্ষে (৮৬%), সবজিতে তৃতীয়, আলুতে অষ্টম, ফলে দশম, কাঁঠালে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারায় অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম, ছাগলে চতুর্থ ও ছাগলের গোশতে পঞ্চম এবং গবাদিপশুতে দ্বাদশ (দেশের কৃষির এ উন্নতি হয়েছে স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে। তবে যান্ত্রিকরণ তেমন না হওয়ায়, কৃষি জমির ২৭% সেচ সুবিধার বাইরে থাকায়, কৃষি উপকরণ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরী খুব বেশি হওয়ায় দেশের কৃষির উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে)। দ্য ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের প্রতিবেদন মতে, ‘উচ্চতায় যে দেশের মানুষেরা এগিয়ে, তাদের তুলনায় বাংলাদেশসহ মোট চারটি দেশের মেয়েরা নিম্নমানের পুষ্টির কারণে সাত ইঞ্চির বেশি উচ্চতা হারাচ্ছে। বাকি তিনটি দেশ নেপাল, গুয়াতেমালা ও তিমুর।’ ইউএনডিপি’র মানব উন্নয়ন সূচক-২০২০ মতে, ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৩তম (২০১৯ সালে ১৩৫তম, ২০১৮ সালে ১৩৬তম, ২০১৭ সালে ১৩৯তম ও ২০১৬ সালে ছিল ১৪২তম), ভারত ১৩১তম, পাকিস্তান ১৫৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭২তম, মালদ্বীপ ৯৫তম, ভুটান ১২৯তম, নেপাল ১৪২তম ও আফগানিস্তান ১৬৯তম। উক্ত প্রতিবেদন মতে, প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের জন্য গড়ে চিকিৎসক আছেন বাংলাদেশে ৫.৮, ভারতে ৮.৬ ও পাকিস্তানে ৯.৮ জন। বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব ৪০% মানুষের আয় জাতীয় আয়ের মাত্র ২১%। আর সবচেয়ে ধনী ১০% আয় জাতীয় আয়ের প্রায় ২৭%। বাংলাদেশের গিনি সূচকে পয়েন্ট দশমিক ৪৭৮। কোনও দেশের এই স্কোর দশমিক ৫০ এর ঘর পেরলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের ২৪.৬% মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের শিকার। এছাড়া, ১৮.২% মানুষ বহুমুখী দারিদ্রের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর, যা ভারতে ৬৯.৭ বছর। বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ জীবিত শিশু জন্মগ্রহণকালে ১৭৩ জন মা মারা যায়। বাংলাদেশের ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের মাধ্যমিক পাস- নারী ৩৯.৮% ও পুরুষ ৪৭.৫%। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬.৩%। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ১৪.৪ বছর, গড় শিক্ষাকাল ৩.৪ বছর, প্রত্যাশিত শিক্ষাকাল ৬ বছর ও মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ২২০.১% বেড়েছে। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ৬০.৪% এগিয়েছে। বর্তমানে মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ মধ্যম দেশের স্তরে রয়েছে

গ্লােবাল সাসটেইনেবল কম্পিটিটিভনেস ইনডেস্ক-২০২০ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৫তম, ভারত, ১২৭তম, নেপাল ৫৩তম, ভুটান ৫৫তম, মালদ্বীপ ৬৫তম, শ্রীলংকা ৮৬তম, পাকিস্তান ১৭৪তম ও আফগানিস্তান ১৮৮তম। ওয়াটার এইড’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যানিটেশন ও ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৮১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৬তম (৫২% মানুষ সীমিত পরিসরে ও অনুন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় রয়েছে)। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন-২০২০ মতে, প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে গঙ্গা, পদ্মা, যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত অববাহিকা। এসডিও’র প্রতিবেদন-২০১৯ মতে, বাংলাদেশের জলে-স্থলে বর্তমানে ৬৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। প্রতিদিন এর সঙ্গে ৩ হাজার টন করে যোগ হচ্ছে। দেশের পরিবেশের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ। বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণের কারণে মৃত্যু দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে। টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২১ সালের বিশ্বের ৯৩টি দেশের ১,৪০০টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের ২টি, ভারতের ৬৩টি, পাকিস্তানের ১৭টি, শ্রীলঙ্কার ২টি ও নেপালের ১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। বিশ্বসেরা গবেষকদের বৈশ্বিক ডাটাবেজ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।প্রায় ১.৬ লাখ বিজ্ঞানীর এই তালিকায় বাংলাদেশের ২৬ জন ও ভারতের প্রায় দেড় হাজার গবেষক রয়েছেন। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিটাল কম্পিটিটিভনেসের ‘ডিজিটাল রাইজার রিপোর্ট-২০২০’ মতে, ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখনো পেছনের সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান।ডিজিটাল উত্থানে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ, পয়েন্ট মাইনাস ৪৯।ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২০ মতে, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার: বাংলাদেশে ৫০%, ভুটানে ১০০%, নেপালে ৯৭%, মালদ্বীপে ৯০%, শ্রীলংকায় ৮৩%, পাকিস্তানে ৭৮% ও ভারতে ৭০%। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার: বাংলাদেশে ৩৪%, ভুটানে ১০০%, নেপালে ৮৩%, শ্রীলংকায় ৮২% ও ভারতে ৭৬%। উপরন্তু সংস্থাটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হারের ভিত্তিতে দেশগুলোকে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন ভাগে ভাগ করেছে। সে তালিকায় বাংলাদেশ ‘নিম্ন’, পাকিস্তান উচ্চ ও মালদ্বীপ মধ্যম ক্যাটাগরিতে রয়েছে (দেশের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকের অবস্থাও অনুরূপ। অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষক প্রশিক্ষণহীন! ফলে শিক্ষার মান অতি নিম্নতর। উপরন্তু দেশের শিক্ষা প্রধানত: সেকেলে, কর্মমুখী নয়। তাই দেশে কারিগরি শিক্ষার হার বর্তমানে ৮-১০%, যা জার্মানিতে ৭৩% ও জাপানে ৭১%। প্রযুক্তি শিক্ষাও নগণ্য। সর্বোপরি করোনার কারণে প্রায় এক বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অটোপাশ দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার মানে ধস নামতে পারে)। ইউএনডিপির গ্লােবাল নলেজ ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১২তম (স্কোর ৩৫.৯), ভারত ৭৫তম, শ্রীলংকা ৮৭তম, ভুটান ৪০.৯, নেপাল, ৩৬.২ ও পাকিস্তান ৩৫.৯ স্কোর। বাংলাদেশ ২০১২ সালেও ১১২তম ছিল।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’র ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট-২০১৯ মতে, পর্যটনে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৪তম (আগে ছিল ১০৪তম), ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম। আইএলও’র এশিয়া প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক আ হিউম্যান সেন্ট্রেড ফিউচার অব ওয়ার্ক শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, করোনায় সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের সরকারি সহায়তা তলানিতে। এ অঞ্চলের ৩৬টি দেশের সহায়তার গড় জিডিপির প্রায় ১৪%, আর বাংলাদেশে সেটা জিডিপির ৪% এর নিচে। এছাড়া, এ অঞ্চলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় বাংলাদেশ গত এক দশকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে।২০০১-২০০৯ সালের তুলনায় পরবর্তী দশকে বাংলাদেশে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কমেছে। আইএলও’র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট-২০২০-২১ মতে, ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল- বাংলাদেশে ৪৮ ডলার (বাংলাদেশে শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলার), পাকিস্তানে ৪৯১ ডলার, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ৫০ ডলার করে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ৩৮১ ডলার। ২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। অথচ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি-বাংলাদেশে ৫.৮%, মিয়ানমারে ৫.৯%, পাকিস্তানে ২.২%, নেপালে ৪.৩%, শ্রীলঙ্কায় ৪% ও আফগানিস্তানে ১.৭%। মাস্টারকার্ডের ‘দ্য মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব ওমেন এন্ট্রাপ্রেনিওর্স -২০২০’শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ৫৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫৮তম(গত বছর ছিল ৫৭তম)। দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১৫ শতাংশের নিচে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারা মূলত কৃষি ও মৎস্যের মতো প্রাথমিক ব্যবসায় জড়িত। যেসব খাতের প্রভাব অর্থনীতিতে বেশি, সেসব খাতে নারী নেতৃত্বের অনুপাত ২০.৭%। ভেরিস্ক ম্যাপেলক্রপটের মডার্ন স্লেভারি ইনেডক্স-২০২০ মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থার অবনতি হয়েছে।প্রথম বারের মতো এই দু’টি দেশ ‘ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ৩২টি দেশের তালিকায় চীন ও মিয়ানমারও রয়েছে।

আইএমএফ’র পিপিপিকে ডলারে জিডিপি’তে রূপান্তরিত করার তথ্য নিয়ে বৈশ্বিক ধনী-গরীব দেশের তালিকা-২০২০ তৈরি করেছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ও হাউমাচ ডটনেট। সে তালিকায় ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৩তম (৫,০২৮ ডলার), মালদ্বীপ ৬৬তম, শ্রীলঙ্কা ৯৯তম, ভুটান ১১২তম, ভারত ১২৪তম, মিয়ানমার ১৩৪তম, পাকিস্তান ১৩৮তম, নেপাল ১৬২তম ও আফগানিস্তান ১৭৬তম। ওয়েলথ এক্সের ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩% হারে। আঙ্কটাড, জিএফআই ও টিআইবি-সহ অনেক গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। জিএফআই বলছে, ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাপী অবৈধ অর্থ পাচারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩০ নম্বরে। গেল কিছুদিনে প্রতিবছরই পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ২৮% হারে বাড়ছে। ট্রেস ২০২০ সালে ঘুষ লেনদেনের ঝুঁকি নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৬ নম্বরে (গত বছর ছিল ১৭৮তম), ভুটান ৪৮, ভারত ৭৭, মালদ্বীপ ৮৫, শ্রীলঙ্কা ৮৭, নেপাল ১০৭, চীন ১২৬, পাকিস্তান ১৫৩ ও আফগানিস্তান ১৭১ নম্বরে (প্রাক্তণ অর্থমন্ত্রী মুহিত একবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে বলেছিলেন, ‘দেশের জিডিপির ৬০% কালো টাকা’)।
ফার্স্ট গ্লােবাল আয়োজিত আন্তর্জাতিক রোবটিকস প্রতিযোগিতা-২০২০ মতে, ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওকলা’স স্পিডটেস্ট গ্লােবাল ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৩তম। নেপাল, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ব্রডব্র্যান্ডের গতির ক্ষেত্রে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৮তম, নেপাল ১১৩, পাকিস্তান ১৫৯ ও ভারত ৭০তম। ওয়েবসাইট কেব্লডটইউকের মতে, ২০২০ সালে ব্রডব্যান্ডের গতির দিকে ২২১টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮৪তম, আর দামের ক্ষেত্রে ৫৭তম। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট সোসাইটির মতে,২০১৯ সালে ইউক্রেনের আইটি এক্সপোর্ট থেকে আয় হয়েছে ৪.২৭ বিলিয়ন ডলার (প্রবৃদ্ধি ৩০.২%)। এছাড়া, ২০১৭ সালে ফিলিপাইনের বিপিও ইন্ডাস্ট্রি থেকে আয় ছিল প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তাদের আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার হবে। আইটি আউটসোর্সিং দেশটির জিডিপিতে অবদান প্রায় ১১%।আর পুরো ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে বাংলাদেশ ১৮তম। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স-২০২০ মতে, বিশ্বের ১৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৫তম, স্কোর ৪৪.১৬ (গত বছর ছিল ৭৩তম) এবং ভারত ৩৫তম, পাকিস্তান ৬৬তম, নেপাল ৯৩তম, শ্রীলংকা ৯৮তম, ভুটান ১১৫তম, আফগানিস্তান ১৩২তম ও মিয়ানমার ১৩৯তম।

এসক্যাপ ও আইএলও’র ‘দ্য প্রোটেকশন উই ওয়ান্ট: সোশ্যাল আউটলুক ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে,চলমান কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে জিডিপিতে স্বাস্থ্য-বহির্ভূত সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয়ের হার বিবেচনায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। যেমন: বাংলাদেশের ০.৭%, ইরানের ১০.১%, তুরস্কের ৯.৯%, শ্রীলংকার ৫.২%,ভারতের ৩.২%, মালদ্বীপের ২.৯%, নেপালের ২.১%, পাকিস্তানের ১.৮%, আফগানিস্তানের ১.৮%, ভুটানের ১% ব্যয় হয়েছে জিডিপির। আংকটাডের ‘রিভিউ অব ম্যারিটাইম ট্রান্সপোর্ট-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক জাহাজ রিসাইকেল করেছে: বাংলাদেশ ৫৪.৭%, ভারত ২৬.৬%, তুরস্ক ৯%, চীন ৩.১%, পাকিস্তান ২.২% ও বাকি বিশ্ব ৪.৪%। ওয়াইপিএসএ-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৭০০ মহাসমুদ্রগামী জাহাজ পরিত্যক্ত হয়, যার অন্যতম বড় ক্রেতা বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিলের ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি ট্রিলেমা ইনডেক্স-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ১২৮টি দেশের মধ্যে সামগ্রিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ ৯৪তম ও গড় পয়েন্ট-৪৭.৮ (জ্বালানি নিরাপত্তায় ৩৯, পরিবেশগত টেকসইয়ে ৫৬ এবং জ্বালানি সরবরাহ ও প্রাপ্যতায় ৫০.৪)। জ্বালানি নিরাপত্তার গ্রেড বিবেচনায় খারাপ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ (ডি-গ্রেডে চতুর্থ)। তবে, জ্বালানি খাতের দ্রুত উন্নয়ন করছে এমন শীর্ষ দশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট মতে,বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২০০৯ সালে ২৫.৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯ সালের শেষে এসে যার পরিমাণ ছিল ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের আগস্টে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন এবং পানি ও পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামো ব্যবস্থায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২৮তম। এমনকি বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মানেও নেই।বাংলাদেশে এখন জিডিপির ২-৩% বিনিয়োগ করা হয় অবকাঠামো খাতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক-২০১৯ মতে, বিশ্বের ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৫তম (করোনার কারণে এটা ২০২০ সালে করা হয়নি)। ২০১৯ সালের তথ্য মতে, বৈশ্বিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ ও রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে নবম। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার পর প্রায় ৪০%শিক্ষার্থী বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান-প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।এ ক্ষেত্রে ভারত প্রথম, পাকিস্তান দ্বিতীয়, ইরাক তৃতীয়, আলজেরিয়ায় চতুর্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের ‘বাংলাদেশ স্কোর কার্ড-২০২০-২১’ প্রতিবেদন মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অধিকারসহ ১৩টি সূচকে ফের রেড জোনে নাম উঠেছে। এর আগের তালিকায় (২০১৯-২০) ছিল একই জোনে ১২টি সূচক। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে ফিসক্যাল পলিসি। আর ২০১৮-১৯ সালে ছিল ১১টি ও ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৭টি সূচক। ২০২০-২১ কার্ডে রেড জোনে থাকা সূচকগুলো হচ্ছে: কন্ট্রোল অব করাপশন, জমির অধিকার ও প্রাপ্যতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা, বাণিজ্য নীতিমালা, ফ্রিডম অব ইনফরমেশন, অর্থনীতিতে নারী ও পুরুষের সমতা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়, প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি ব্যয়, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার, বেসামরিক লোকের স্বাধীনতা, মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার হার ও ফিসক্যাল পলিসি। ২০টি সূচকের অধিকাংশই লাল চিহ্ন হওয়ায় এবারও মিলছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের মোটা অঙ্কের অনুদান। এই হচ্ছে বৈশ্বিক র‌্যাংকিং। এখন দেখা যাক অভ্যন্তরীন খবর।

সাবেক তত্ত¡াধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মীর্জা আজিজুল ইসলাম গত ১৬ ডিসেম্বর বলেন,দেশের গড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে: ১৯৮০-১৯৮৫ সালে ৩.৮%, ২০০০-২০১০ সালে ৫.৯%, ২০১১-২০১৫ সালে ৬.২% ও ২০১৬-২০১৮ সালে ৭.৪%। দেশে গত এক দশক ধরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ জিডিপি’র ২২-২৩%। ডিএসই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২০ সালের জুন শেষে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান: বাংলাদেশে ৯.৪১%, ভারতে ৬২.৭৫%, শ্রীলংকায় ১৪.৯২%, থাইল্যান্ডে ৮৯.২৯%, হংকংয়ে ১৩১১.১৪% ও চীনে ৩৭.২৩%। সরকারি সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের ৫২% মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে। বিবিএস’র ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ-২০১৯ অনুযায়ী, দেশের রাজধানী ঢাকাসহ নগরাঞ্চলের ৭% মানুষকে খাবার না পেয়ে একবেলা উপোস থাকতে হয়। আর খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকেন ২১% মানুষ। স্রেডার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ-৬৫০.১৫ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২-৩%। অথচ সরকারের পরিকল্পনা মতে হওয়ার কথা ছিল ২,১৮৮ মেগাওয়াট। অপরদিকে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১৯,৬৩০মেগাওয়াট। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ৭-৮ হাজার মেগাওয়াট। আর চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট।চাহিদা না থাকায় বাকি ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো বসে রাখা হচ্ছে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অথচ সারা দেশের গ্রাম ও মফস্বলে প্রতিদিন ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার দুর্গতির কারণে এটা হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঘণ্টায় ৪৬৪ কিলোওয়াট, আর ভারতে ২০১৮-১৯ সালে গড়ে জনপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে ১,১৮১ কিলোওয়াট/ঘণ্টায় বলে খবরে প্রকাশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গড়ে জনপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহারের পার্থক্য আকাশ-পাতাল।
বিভিন্ন খবরে প্রকাশ, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২.৩% বেকার। জিডিপির তুলনায় কর আহরণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বসবাসের অনুপযোগীতায় রাজধানী ঢাকা বিশ্বে দ্বিতীয়। দেশের অন্য শহরগুলোও প্রায় অনুরূপ। দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলা-ধূলা, বিনোদন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন ব্যবস্থা, সুশাসন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, এফডিআই, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি, প্রচার মাধ্যম ইত্যাদির অবস্থান বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে তলানিতে। নকল, ভেজাল, মাদক, দুর্ঘটনা, যানজট, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, মানব পাচার, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিতে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। কয়েক বছর যাবত ব্যাংকের অবস্থা নাজুক হয়েছে ব্যাপক খেলাপি ঋণের কারণে। এর মধ্যে অনেক ক‚ঋণ রয়েছে, যা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ নদী, খাল-বিল, হাওড় দখল, দূষণ ও ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে শুকে মজে গেছে দীর্ঘদিন যাবত, যা কিছু আছে, তাও নাব্যতা সংকটে ভুগছে। ফলে দেশটি মরুপ্রায় হতে চলেছে। দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ব্যয়বহুল কয়েকটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের উন্নতি তরান্বিত হবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ২জি ও ৩জি চলছে। কিন্তু বহুদেশে ৪জি ও ৫জি চলছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শুধুমাত্র শহরভিত্তিক। এসব দেশের উন্নতির চরম অন্তরায়।

দেশের বেশিরভাগ ভারী শিল্প প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। যে সামান্য চালু আছে, তাতেও ব্যাপক লোকসান চলছে। তাই গত জুলাই মাসে সরকারি সব পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন চিনিকলগুলোও বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। তাই দেশের রফতানি বলতে শুধুমাত্র গার্মেন্ট, যা মোট রফতানির ৮৪%। তাও করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, জলবায়ু প্রভাবের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। এছাড়া, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা দেশের শান্তি ও উন্নতিতে চরম অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। করোনায় দেশে প্রায় ৩২% মানুষ কাজ হারিয়েছে,আয় কমেছে ৮৪% মানুষের, ৮৮% ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও দারিদ্র বেড়ে ৪০% হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এসব ক্ষতি সহজে পূরণযোগ্য নয়। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও নতুন ধরনের করোনা। এই নতুন ধরনের করোনারও খুব দ্রুত বিশ্বায়ন হয়েছে।এর পরিণতি কি তা ভবিষ্যতই জানে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নতির প্রধান সোপান হচ্ছে-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এসব ক্ষেত্রে যারা যত উন্নতি করবে তারা তত টেকসই উন্নতি করবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আন্তর্জাতিক-সংস্থা
আরও পড়ুন