Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির অঙ্গসংগঠন

ড্যাব-ছাত্রদলে সফল : মৎস্যজীবী কৃষক, তাঁতী, ওলামা দলের ৩ মাস শেষ হয়নি ২৩ মাসেও

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল দলটির। এজন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাক্কারজনক পরাজয়ের পর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ছাত্রদলকে দিয়েই শুরু হয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। শুরুটা সাফল্যজনকও হয়েছিল। ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের নেতৃত্বে ড্যাবের আহ্বায়ক কমিটি তাদেরকে দেয়া নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যেই কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন। ছাত্রদলেও দীর্ঘ ২৯ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মৎস্যজীবী দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, ওলামা দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি কমিটিকে তিন মাসের সময় দেয়া হয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের। কিন্তু সেই তিন মাস ২৩ মাসেও শেষ হয়নি। এখনো আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে এসব সংগঠন। আর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের বর্তমান কমিটির মেয়াদ কবে শেষ হবে তা এখন রহস্যের বিষয়। প্রতিটি সংগঠনের কমিটির মেয়াদ ছাড়িয়ে গেছে ৫ থেকে ৭ বছর। পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এসব কমিটির নেতাদের কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে আজীবনের জন্য তাদের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি গঠন, পুনর্গঠন একটি রাজনৈতিক দলের চলমান প্রক্রিয়া। বেশ কিছুদিন ধরে করোনার কারণে এই কার্যক্রম স্থগিত ছিল। এখন জেলা পর্যায়ে আবারও পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিলে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটির কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা স্বেচ্ছাসেবক দলের। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে সংগঠনটির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার দেড় বছর পর ঘোষণা করা হয় আংশিক কমিটি। এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু মারা গেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বাবুর মৃত্যুর পর ঘোষিত আংশিক কমিটিতে বাদ পড়ে যান সংগঠনটির অনেক ত্যাগী নেতা। সর্বশেষ ঘোষিত কমিটিতে শফিউল বারী বাবু সমর্থকদের অনেকেই বাদ পড়ে যান বলেও অভিযোগ তাদের। এখন সংগঠনটিতে একক আধিপত্য সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের। নিজের পছন্দের লোক বসানো, অন্যদের কোণঠাসা করার কারণে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিকে ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে গত ৬ ফ্রেব্রুয়ারি যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১০৯ জনকে পদ-পদবি দেওয়া হয়। এখনো সংগঠনটি পায়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা করোনাকালসহ নানা অজুহাতে কমিটি গঠনে বিলম্বের কথা জানান। কিন্তু সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করার বিষয়টি কোনো অজুহাতই হতে পারে না।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নূরুল ইসলাম নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ ৩ বছর হওয়ার কথা। অথচ এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দীর্ঘদিন আগেই। সাড়ে ৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কমিটি গঠন নিয়ে কোন প্রক্রিয়া শুরু করেনি বিএনপি কিংবা শ্রমিক দলের নেতারা। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে নিবন্ধিত এই সংগঠন। এর মধ্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নাসিমও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় সংগঠনের কোন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না। পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা নতুন কমিটির দাবি জানিয়ে আসলেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। একারণে গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১ সদস্যের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন শ্রমিক দলের বিদ্রোহী নেতা ফয়েজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। কার্যত: সংগঠনটির এখন তেমন কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুকে আহ্বায়ক ও কৃষিবিদ হাসান জারিফ তুহিনকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির নেতৃবৃন্দকে তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় বিএনপি। কিন্তু সেই তিন মাসের কমিটি প্রায় দুই বছর হতে চললেও কাউন্সিলের বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই।

২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর ইশতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতি এবং শফিউজ্জামান খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯১ সদস্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির গঠনতন্ত্রে এক ব্যক্তির এক পদ বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন শফিউজ্জামান খোকন। পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানকে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে এখন মুক্তিযোদ্ধা দল।

২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। আড়াই বছর পর ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সংগঠনটির ২৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলেও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার হাতাহাতি, মারামারি ও চুল টানাটানি হয়েছে। গতবছর ৮ মার্চ নয়াপল্টনে এক অনুষ্ঠানে হট্টগোলের পর চরম ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির হাইকমান্ড। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাবকে আহ্বায়ক ও আব্দুর রহিমকে সদস্য সচিব করে ১৫৪ সদস্য বিশিষ্ট মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিকে কাউন্সিল ও পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের মতো মৎস্যজীবী দলের কমিটিও তিন মাসের জন্য ঘোষণা করা হয় এবং এই কমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের।

ওই বছরের ৫ এপ্রিল মাওলানা শহ নেছারুল হককে আহ্বায়ক ও মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ১৬৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
একই বছরের ৬ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদকে আহ্বায়ক ও মো. মজিবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে তাঁতী দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিকেও তিন মাস সময় দেয়া হয় সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে সভাপতি ও চলচ্চিত্র অভিনেতা হেলাল খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি জাসাসের ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দুই মাস আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন দেশে করোনাকাল চলছে। এ অবস্থায় সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম চালানো কঠিন। তবে আমরা বিশ্বাস করি বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেওয়া হবে। ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের দিয়েই কমিটি হবে।



 

Show all comments
  • জুয়েল ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৪ এএম says : 0
    বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ