পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয়ের পর সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা ছিল দলটির। প্রতিটি কমিটিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত কাউন্সিল ও ভোটের মাধ্যমে কমিটি করার নির্দেশনাও দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠন কোন সংগঠনের কোন কমিটিতেই বাস্তবায়ন হয়নি হাইকমান্ডের সেই নির্দেশনা। অঙ্গসংগঠনের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কিংবা তৃণমূল পুনর্গঠনে যোগ্য-ত্যাগীদের বাদ দেয়া, অনৈতিক লেনদেন, পক্ষপাতিত্ব এবং অনেক জেলা কমিটির মতামত উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকটি সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জোরালোভাবে। কয়েকটি প্রমাণ পাঠিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও। এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি সাংগঠনিক টিমে করা হয় রদবদল, স্থগিত করা হয় একাধিক টিম সদস্যের পদও। এছাড়া অনিয়মের মাধ্যমে গঠিত কমিটিগুলোও স্থগিত করার ঘটনা ঘটেছে। কমিটি গঠন নিয়ে এসব বিষয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলে।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়েও অন্তহীন অভিযোগ। কমিটিতে নিজের লোক বসাতে ত্যাগীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দোহায় দেয়া হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পছন্দের লোক হিসেবে তুলে ধরে সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা নিজের অনুগত লোকজনকে কমিটিতে রাখতে মরিয়া হন। অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়েও কমিটিতে পদ দেয়া হয়। যেসব কমিটি গঠন করা হচ্ছে সবগুলোতেই আসছে এমন অভিযোগ।
আবার আংশিক কমিটি ঘোষণার পর দীর্ঘদিনেও পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পরিচয়হীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। ফলে সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দলকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে দূর্বল করে তুলছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিকূলতার মধ্যেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠনের কাজ চলছে। আর বিএনপির মতো বৃহৎ দলে অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন, যারা প্রত্যেকেই নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু পদের সংখ্যা সীমিত। তাই কাউকে পদ দিলে অন্যরা বাদ পড়েন। তবে কোথাও অনিয়মের সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, বিএনপির ১১টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে এই মুহূর্তে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে জোরেসোরে। এই তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে বিএনপির মেরুদন্ডও বিবেচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে যুবদলের ১১টি টিম, স্বেচ্ছাসেবক দল ১২টি টিম এবং ছাত্রদল ১০টি টিম গঠন করে তৃণমূলে কমিটি করছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ছাত্রদল, ফেব্রæয়ারিতে যুবদল এবং সেপ্টেম্বরে স্বেচ্ছাসেবক দলের এই টিম গঠন করা হয়। এসব টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উপজেলা ও পৌর এবং ছাত্রদলকে উপজেলা, পৌর ও কলেজ পর্যায়ে কমিটি গঠন করার। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় তৃণমূলে তিনটি সংগঠনের কমিটিই একযুগ বা দেড় যুগ আগের। ইতোমধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন অর্ধেকের বেশি হয়ে গেছে। তৃণমূলে স্বেচ্ছাসেবক দলের পুনর্গঠন কাজও এগিয়ে চলছে। দফতর সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইতোমধ্যে ১৫-২০ শতাংশ পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে তৃণমূলের কোনো কমিটি এখনো ঘোষিত হয়নি।
যুবদলের তৃণমূল পুনর্গঠনে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া, অনেক জায়গায় উপঢৌকন ও অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয়-অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে অনেক জায়গায় টিমের তত্ত্বাবধানে ঘোষিত কমিটি কেন্দ্র থেকে স্থগিতও করা হয়েছে। এমন অভিযোগে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা, কালীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা এবং শৈলকুপা উপজেলা ও পৌরসভায় ঘোষিত যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তৃণমূলে ছাত্রদল পুনর্গঠনেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অনেক জায়গায় অভিযোগ আমলে নিয়ে সাংগঠনিক টিম পুনর্গঠন করা হয়েছে, কিছু বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে। এরপরই রয়েছে ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকা টিম। এছাড়া ঢাকা বিভাগীয়, সিলেট, কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধেও নানা রকম অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে গত সেপ্টেম্বরে সিলেট ও কুমিল্লা বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রদলের দফতর সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে ভাল কাজ করছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় টিম। তাদের কাজে খুশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
আংশিক কমিটি দিয়ে চলছে যুব-স্বেচ্ছাসেবক-ছাত্রদল : মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেয় যুবদল। এরপর কমিটির মেয়াদ শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে ১১৪ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করা হয়। তবে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি সংগঠনটি। এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত মার্চ ও আগস্টে দুই দফায় ৩৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেয় স্বেচ্ছাসেবক দল। এরপর সেপ্টেম্বরে দুই দফায় ১৮৬ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদিত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি সংগঠনটি। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ঘোষিত কমিটিতে বাদ পড়েছেন সংগঠনটির অনেক যোগ্য-ত্যাগী নেতা। স্থান পাওয়া অধিকাংশ নেতা গত ১০-১৫ বছর ধরে রাজনীতিতে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। এমন ৬০-৭০ জনকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। মূলত কমিটিতে সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত কর্মী ও ব্যবসায়ী বন্ধুদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। ফলে শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ার ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সমর্থকদের অনেকেই বাদ পড়ে যান বলে অভিযোগ তাদের। তাদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘদিনের এসব নিষ্ক্রিয় নেতাদের দিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করায় তৃণমূল পুনর্গঠনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের তিন মাস পর গত ডিসেম্বরে ছাত্রদলের ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কাউন্সিলের এক বছর পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি সংগঠনটি। এই তিনটি সংগঠনই দীর্ঘদিন ধরে আংশিক কমিটি দিয়ে চললেও কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ হবে-দায়িত্বশীল কেউ তা বলতে পারেন না। ফলে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি, আশা করি খুব শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
সেচ্ছাসেবক দলের কমিটির বিষয়ে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছি। তিনি অনুমোদন দিলেই ঘোষণা করা হবে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ আংশিক কমিটি গঠনে ব্যপক অনিয়ম হয়েছে। সহ-সভাপতিদের মধ্যে আসাদুজ্জামান নেছার কর্মসূচিতে ছিলেন অনিয়মিত। আজহারুল হক মুকুল রাজনীতির মাঠে প্রায় ১৫ বছর নিষ্ক্রিয়, লিটন মাহমুদ, শাহাবুদ্দীন মুন্না, ইকবাল আনসারী টিপু চার বছর রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন। সাধারণ সম্পাদকের মহল্লার বন্ধু হিসেবে পরিচিত ডিস ব্যবসায়ী চৌধুরী ওয়াহিদুর রহমান চয়ন রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও আসিফ কবির চৌধুরী শত, ড. শরিফুল ইসলাম বুলু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক দেড় যুগেরও বেশি সময় রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তাদেরকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। পূর্বে কোনো পদে না থাকা এবং রাজনীতির মাঠে না থেকেও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন আরিফুর রহমান আরিফ, আসগর হায়াত লিমন, তারিক আহম্মেদ তারেক, তকদির হোসেন স্বপন, আহসান হাবিব প্রান্ত, এসএম জাহাঙ্গীর, জাকারিয়া আল মামুন, সাইদ উদ্দীন সুমন। এদিকে রাজপথে না থেকেও ঠিকমতো বাড়ির হাজিরা দেওয়ায় এবং সাধারণ সম্পাদকের বিশেষ নজরে থাকায় সিরাজুস সালেকিন লিমনকে সাবেক কমিটির ২৩৩নং সদস্য থেকে বর্তমান কমিটির যুগ্ম--সম্পাদক করা হয়েছে। একই কারণে সাবেক কমিটির ৩৪০নং সদস্য ডিজেডএম হাসান বিন সোহাগকে যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে না থাকলেও নেতা-কর্মীদের কাছে আদম ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত সাবেক কমিটির সহ-প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আশ্রাফ উদ্দিন রুবেলকে করা হয়েছে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
একইভাবে মোকসেদ আলম, রেজাউর রহমান বাবু, আকরাম হোসেন, সাইদুর রহমান মামুনকে বড় পদ দেয়া হয়েছে আর মাঠের রাজনীতিবদদের করা হয়েছে অবমূল্যায়ন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বাহারুল ইসলাম, বারেক ইসলাম, জিল্লুর রহমান খোকন, রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, কামরুজ্জামান জুবেদ, এইচএন আশিকুর রহমান, মাহমুদুল হাসান খোকন, ইকরামুল হক হেলাল, এইচএন রাশেদ খান, মাহাবুবুল হক হেলাল, ফয়েজউদ্দিন শাকিল, সাইফুল শিকদার, ইকবাল হোসেন বাদল, ফয়েজউল্লাহ ইকবাল, আল ইসলাম ব্যাপারী, মহসিন চৌধুরী রানা, মাসুম ভূইয়া, বদিউল আলম বিপু, মো. রবিউল ইসলামকে সহ-সাংগঠনিকের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের তালিকায় থাকায় পদ পেয়েছেন ইলতুতমিশ সওদাগর, অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার জাহান রুমি ও ইতালি প্রবাসী গোলাম মোর্শেদ রাসেল। একইভাবে ২৭ সদস্যের উপদেষ্টামন্ডলীর অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এমনকি পদ পাওয়ার পরও তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মসূচিতে পায়না নেতাকর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।