Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনা করুন

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমাদের সেনাবাহিনীর দক্ষতা, যোগ্যতা ও সুনাম কারো অবিদিত নেই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে এর সদস্যদের অনন্য ভূমিকার কথা সবারই জানা। বাংলাদেশ সরকারও সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন থেকে শুরু করে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন নতুন ডিভিশন এবং ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য যা যা করা প্রয়োজন তা-ই করছে। এসবই সাধুবাদযোগ্য। তবে মাঝে মাঝে এসব উন্নয়ন কর্মকা- করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রভাব পড়তে দেখা যায়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ভাটিয়ারীকে চ্যাপ্টার এরিয়া করার পরিকল্পনা রুখতে দলমত নির্বিশেষে সকলেই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে গত শুক্রবার স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সীতাকু- উপজেলার দক্ষিণ অংশ ভাটিয়ারী-সলিমপুর এলাকার আয়তন খুবই কম। এসব এলাকার পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে জাহাজভাঙা শিল্পের কারণে এমনিতেই বসবাসের জায়গা কম। তার ওপর দীর্ঘকাল আগে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের পূর্ব অংশে কয়েক হাজার একর ভূমি সেনাবাহিনীকে ছেড়ে দেয়া হলে সেখানে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশিষ্ট ভূমিতে স্থানীয়রা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এ ভূমিকে চ্যাপ্টার এরিয়া করা হলে তারা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন হয়ে পড়বে। এতে তাদের ওপর ইউনিয়ন পরিষদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। নিজ ঘরে বিয়েশাদি থেকে শুরু করে যে কোনো অনুষ্ঠান করতে ক্যান্টনমেন্টের অনুমতি নিতে হবে। দূরের আত্মীয়-স্বজন ইচ্ছে করলেও আসা-যাওয়া করতে পারবে না। এটি সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত হবে, এটা তারা মানতে রাজি নন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভাটিয়ারীকে চ্যাপ্টার এলাকা করা নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি ও তার সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণের কনসেপ্ট থেকে উন্নত দেশগুলো এখন অনেকটা সরে এসেছে। দেশগুলো এ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে প্রযুক্তিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি যেমন গৌণ হয়ে আসছে, তেমনি তার কর্মকা- পরিচালনার জন্য সংরক্ষিত স্থানও কম লাগছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর দিকে লক্ষ করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা সামরিক বাহিনীর পরিধি বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকায়নের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। এতে লোকবলও কম লাগছে, আবার ভূমিও সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের মতো ছোট দেশে যেহেতু কৃষি ও আবাসনে জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, তাই সময়ের প্রয়োজনে সংরক্ষিত এলাকা যত কম করা যায়, ততই মঙ্গল। সেনাবাহিনীর জন্য ইতোমধ্যে যেসব সংরক্ষিত এলাকা করা হয়েছে, তার মধ্যেই কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন ঘটানো যায়, এদিকেই বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ার চিন্তা করাই শ্রেয়। একসময় শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে জনগণের অনেক জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এখন সেই জমির অংশবিশেষ জনগণকে ফেরত দেয়া শুরু হয়েছে। জনসাধারণ ও দেশের কল্যাণ সাধন করার জন্যই শ্রীলঙ্কা সরকার এ কাজ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাধারণ মানুষের আবাদি ও বসতি জমি সংরক্ষিত এলাকায় রূপান্তর করলে তাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের কৃষিজমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বসতি স্থাপন, এমনকি স্বাভাবিক চলাচলও বিঘিœত হয়। এতে অনেক সময় তারা ক্ষুব্ধ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আমরা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর আবাসন প্রকল্প করার পরিকল্পনা নিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে দেখেছি। সে সময় স্থানীয় জনসাধারণ ও সেনাবাহিনী প্রায় মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল। একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ভাটিয়ারীকে চ্যাপ্টার এলাকা করা নিয়েও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, কেউই সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে না। সেনাবাহিনীকে উন্নত করতে যা করার দরকার তা করতে হবে। তবে এ কাজ করতে গিয়ে জনসাধারণের অসুবিধা হয়, এমন পদক্ষেপ না নেয়াই উচিত। যে বাহিনী দেশ ও জনগণের রক্ষায় নিয়োজিত, তার সুবিধার জন্য জনগণকে ভোগান্তির শিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। এমন যদি হতো আমাদের প্রচুর জমি রয়েছে, তাহলে এ নিয়ে কারোই কোনো আপত্তি বা অভিযোগের কারণ থাকত না। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর এক শতাংশ কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, আবাসন, আভ্যন্তরীণ নদীভাঙন, সীমান্ত নদীভাঙন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা কারণে জমি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি যেমন কমছে, তেমনি নদীভাঙনে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে। তার ওপর যদি সংরক্ষিত এলাকার পরিধি বাড়তে থাকে, তাহলে মানুষের কষ্টে পড়া ছাড়া গতি থাকে না।
সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের বিষয়টি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে হবে। এ চিন্তা করতে হবে, কীভাবে স্বল্পপরিসরে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উন্নয়ন ঘটানো যায়। সম্প্রসারণ ঘটাতে গিয়ে জনসাধারণের মুখোমুখি হয়ে পড়া উচিত নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে দিকটি খেয়াল রাখা অপরিহার্য। বলাবাহুল্য, প্রযুক্তিনির্ভর হলে লোকবল কম লাগবে, সংরক্ষিত এলাকা বৃদ্ধিরও প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। আধুনিক যুগে এ কনসেপ্টই গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাদেরও এই কনসেপ্ট ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করব, ভাটিয়ারীকে চ্যাপ্টার এলাকা করা নিয়ে জনসাধারণের মাঝে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনা করুন
আরও পড়ুন