পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আঁকাবাঁকা সবুজ পাহাড়ি পথ ছুঁয়ে যায় মন-প্রাণ। খাগড়াছড়ির অপরূপ নিসর্গ প্রতিদিনই অগণিত পর্যটকের নয়ন জুড়ায়। শীতল বাতাস, নয়নাভিরাম দৃশ্য কাছে টানে পর্যটকদের। পাহাড়-টিলা, অরণ্য প্রকৃতির সৌন্দর্য বিধাতার নিপূণ হাতে গড়া যেন অন্য এক পৃথিবী। সবুজ উঁচু পাহাড়ের পাশ দিয়ে সাদা মেঘের ভেলা পর্যটকের গা ছুঁয়ে যায়। মেঘ-পাহাড়ের অপূর্ব মিতালী চোখে পড়ে খাগড়াছড়ি পেরিয়ে সাজেক ভ্যালি। দার্জিলিংকে হার মানায়!
পার্বত্য এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন ও বিনোদন স্পট। পাহাড়, ঝরণা, কৃত্রিম লেক, গুহা, গিরিখাদ আরও কত কী। এরমধ্যে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝরণা, তৈদুছড়া ঝরণা, হাজাছড়া ঝরণা, আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, জেলা পরিষদ পার্ক, মায়াবিনী লেক, রামগড় কৃত্রিম লেক ও ঝুলন্ত সেতুসহ প্রতিটি পর্যটন স্পটে এখন পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।
খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য স্বচক্ষে দেখে বিমোহিত হন দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকগণ। তবে পর্যটকদের চাহিদা, প্রত্যাশা অনুযায়ী পাহাড়ি এই জনপদে সময়োপযোগী অবকাঠামো সুবিধা, যোগাযোগ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব পূরণ হচ্ছে না। অথচ প্রতি বছরই বাড়ছে পর্যটকের আগমন। স্থানীয় জনসাধারণ ও পর্যটকগণ বলছেন, পর্যটন খাতে কর্তৃপক্ষের নজর আরও বাড়ানো দরকার।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ণিল সংস্কৃতি ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দে ভিন্ন মাত্রা দেয়। ড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের বর্ণিল সংস্কৃতি, আচার-রীতি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসুরা এই পাহাড়ে। করোনা প্রভাব কমার পর এবার শীতে খাগড়াছড়িতে পর্যটক আসছেন রেকর্ড হারে।
শহরের অদূরে পাহাড়চুড়ায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। যার উচ্চতা প্রায় ২৬শ’ ফুট। আলুটিলা পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে ৬ কিলোমিটার দুরের খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য উপভোগ্য। আলুটিলায় আছে রহস্যময় এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ। দেড়শ’ ফুট নিচে পাহাড়ের তলদেশে এ সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট। প্রতিদিন পর্যটকরা সুড়ঙ্গ দেখে শিহরিত হন।
দীঘিনালায় তৈদু জলপ্রপাত নজরকাড়া। পানছড়িতে দৃষ্টিনন্দন ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’ পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা। সেখানে আছে সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। খাগড়াছড়ি সদরে হৃদয় মেম্বার পাড়ায় রয়েছে ‘রিছাং ঝরণা’ এবং জেলা পরিষদ পার্কের ঝুলন্ত সেতু। যেকোন পর্যটকের মন টানতে যথেষ্ট।
খাগড়াছড়িতে যাওয়া সহজতর। ঢাকা থেকে দূরত্ব ৩১৬ কি.মি., চট্টগ্রাম থেকে ১০৯ কি.মি.। রাজধানী ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে খাগড়াছড়িতে। জনপ্রতি ভাড়া ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা। এসি বাসে ভাড়া ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকা। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি বাস ভাড়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা।
জেলার সীমান্তে সাবেক মহকুমা শহর রামগড়ে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস অর্থাৎ বর্তমান বিজিবি’র জন্মস্থান, কৃত্রিম লেক ঝুলন্ত সেতু ছাড়াও দর্শনীয় বিভিন্ন স্পট রয়েছে। খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকদের থাকার-খাওয়ার জন্য রয়েছে পর্যটন মোটেল, শৈল সুবর্ণা, ইকোছড়ি, হেরিটেজ পার্ক ইত্যাদি। সুস্বাদু ও মানমস্মত খাবারের জন্য আছে হোটেল-রেস্টুরেন্ট।
পর্যটন বিকাশে খাগড়াছড়িতে নানামুখী সঙ্কটের কথা স্বীকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানিতে পর্যটকরা আসতে পারেন খাগড়াছড়ি। অনেক স্পট আছে ঘুরে বেড়ানোর মতো। তবে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে পর্যটন প্রসার হচ্ছে না। অব্যবস্থাপনার কারণে পর্যটকরা অনেক সময়ই বিড়ম্বনায় পড়েন। কর্তৃপক্ষ যদি পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয় তাহলে পাল্টে যাবে জেলাবাসীর জীবনমানও। দুর্গম এলাকায় ঝরণাসহ প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব, গাইড সুবিধা না থাকায় পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না বলেও দাবি অনেকের। যানবাহনের ঘাটতি, ভাড়া সুনির্দিষ্ট না থাকায় সাজেকে পর্যটকদের যাতায়াতে ভোগান্তি কমানোর দাবিও রয়েছে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক বলেন, পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। তারপরও ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা ঘুরতে এসে তাদের মন যেন আনন্দে ভরে যায়। জেলার পর্যটন উন্নয়নে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কথা জানান খাগড়াছড়ি পার্বত্য পরিষদেও চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। তিনি বলেন, পর্যটকদের জন্য ক্যাবল কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পর্যটন নিয়ে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা আছে। উন্নয়নের কর্ম পরিকল্পনা ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পর্যটকদের ব্যাপক আগমন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আশাব্যঞ্জক।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ জানান, বর্তমানে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের অবাধ চলাফেরায় যাতে সমস্যা না হয় তাও দেখভাল করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।