Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা সম্ভব না হলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান চলবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বাস্তবানুগ এবং সময়োপযোগী। যদিও বলা হচ্ছিল, জানুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। তবে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাই যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত। দেশে করোনা সংক্রমণ কমেনি। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুও হচ্ছে। আগেই বলা হয়েছিল, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত ইতোমধ্যে করোনার এই ঢেউ শুরু হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হয়ে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এ তুলনায় আমাদের দেশে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও তা ধীর গতির এবং অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি নেয়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছিল। এতে দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সংক্রমণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ প্রেক্ষিতে, সেসব দেশে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় করোনা তাদের খুব একটা আক্রান্ত করতে না পারলেও তাদের সংস্পর্শে পরিবারের বয়স্ক সদস্য ও অন্যান্যরা আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশে করোনার মাত্রা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে এ হার বৃদ্ধির ঝুঁকি নেয়া কোনোক্রমেই উচিৎ হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাসময়ে যথার্থভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যাতে ব্যাহত না হয়, এজন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দূর করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিভাবকদের আহবান জানিয়ে বলেছেন, সন্তানদের সময় দেবেন। তারা যেন খেলাধুলা করতে পারে, এ ব্যবস্থা করবেন। তাদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ আহবান সময়ের দাবী এবং অভিভাবকের তা প্রতিপালন করা উচিৎ। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনায় দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঘরবন্দী হয়ে থাকায় তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। শারিরীক ও মানসিকভাবে তাদের সতেজ ও উচ্ছল রাখতে অভিভাবকদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। অনলাইনে চলা ক্লাস করতে তাদের যেমন সহযোগিতা করতে হবে, তেমনি পড়ালেখার বিষয়টিও তদারকি করতে হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নেই। অনেক অভিভাবকের পক্ষে স্কুলের বেতন দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটের বাড়তি খরচ দেয়ার সামর্থ্য নেই। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এ অবস্থায়, অনলাইনে শিক্ষার খরচের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা প্রয়োজন। কীভাবে ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত বা অসমর্থ্য শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পেতে পারে, তা সরকারকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষেরও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার। শিক্ষার্থীদের বেতন কমিয়ে দিয়ে অভিভাবকদের ইন্টারনেট সুবিধা নিতে সহায়তা করা উচিৎ।

করোনার ভয়ংকর বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর অবসান কবে হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই সবকিছু সচল রাখতে হবে। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। যতদিন পর্যন্ত করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন না পাওয়া যাচ্ছে, প্রকোপ না কমছে, ততদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সহায়তা করতে হবে। সকল শিক্ষার্থী যাতে ইন্টারনেটের সহজ সুবিধা পায়, এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে টিউশন ফি কমিয়ে অভিভাবকদের ইন্টারনেট খরচের যোগান দিতে পারে, এজন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দিতে পারে। যতদিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে, ততদিন ইন্টারনেট খরচ বাবদ প্রণোদনা বলবৎ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অভিভাবকরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সন্তানদের পড়ালেখা যথাযথভাবে চালাতে সুবিধা হবে এবং শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এক্ষেত্রে খারাপ ফলাফল করা শিক্ষার্থীরাও হয়ত পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাবে। সেটা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় মেনে নিতে হবে।

 



 

Show all comments
  • জাহিদ খান ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    আগে শিক্ষার্থীদের জীবন। ঝুঁকিতে ফেলে স্কুল খোলা ঠিক হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • রাজিব ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    টিকা দেয়ার আগ পর্যন্ত স্কুল খোলা ঠিক হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম বি এস এল ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন