২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
হাঁচি-সর্দি, কাশি, গলাব্যথা,ঠান্ডা লাগা থেকে অনেক সময় কানে তালা লাগার ঘটনা ঘটে। অনেকেই কানে তালা লাগার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে থাকেন; কিন্তু এটি মোটেও তা নয়। কানে তালা লাগার এই অবস্থা দ্রুত মধ্যকর্ণে অর্থাৎ কানের পর্দার ভেতরের দিকে প্রদাহ বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। কানে তালা মানে কান বন্ধ হয়ে থাকা, কিছু না শোনা। যদিও বিষয়টি ঔষধের মাধ্যমে কমে যায়; তবে কানের এই সমস্যা একেবারে হালকা নয়। কানের পর্দা আমাদের কানকে বহি:কর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভিতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, যাকে সংক্ষেপে বলে ও.এম.ই। মধ্যকর্ণের প্রদাহ বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে। কখনও মধ্যকর্ণে সামান্য তরল পদার্থের উপস্থিতি, কখনও মধ্যকর্ণে পুঁজ সৃষ্টি, আবার মধ্যকর্ণে পুঁজ হয়ে কানের পর্দা হয়ে সেই পুঁজ কান দিয়ে বেরিয়ে আসার মাধ্যমেও এই রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে।
* কেন কানে তালা লাগে/বন্ধ হয়ে যায়? :
অডিটরি টিউব যা নাকের সাথে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে। অডিটরি টিউব মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। কোন কারনে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে/ঠিকমতো কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে। সাধারণত হাঁচি, সর্দি, কাশির বা ঠান্ডা লাগার কারণে কানের সাথে নাক এবং গলার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউবটি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সাময়িক বন্ধ থাকে। ফলে মধ্যকর্ণের সঙ্গে বাইরের পরিবেশের যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাসনালীর ওপরের অংশে জীবাণু সংক্রমণ বা প্রদাহ আপনার কানের সমস্যার কারণ হতে পারে। এ জন্য সর্দি ও সাইনোসাইটিস জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসা নিন। না হলে মধ্যকর্ণে প্রদাহ হয়ে ফুলে গিয়ে পানি জমতে পারে।
*কাদের এ সমস্যা হতে পারে? :
সাধারনত স্কুলগামী বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশী দেখা গেলেও যেকোন বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। যে সকল বাচ্চাদের নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমা হতে পারে। এ রোগের উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে :
১) ঘন ঘন উর্দ্ধশ্বাসনালীর সংক্রমন ; যেমন: সর্দি-কাশি-নাক বন্ধ।
২) প্রায়ই এলার্জি জনিত নাকের প্রদাহ/এলার্জিক রাইনাইটিস ;
৩) ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন;
৪) শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পিছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া;
৫) নাকের হাড় বাকা/ক্রনিক সাইনোসাইটিস এর সমস্যা;
৬) ভাইরাল ইনফেকশন।
৭)এছাড়া নাকের পিছনে ন্যাসোফ্যারিংস নামক স্থানে কোন টিউমার হলে।
*লক্ষণ কী/রোগী কী কী কষ্ট অনুভব করে?
১. মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি কাশির সঙ্গে হঠাৎ করে কান বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে এক কানে তালি দেওয়া বলে অভিহিত করেন।
২. হঠাৎ করেই কানে বেশ ব্যথা মনে হয়।
৩. কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ হয় যাকে বলা হয় টিনিটাস ।
৪. কানে কম শোনা যায়।
৫. ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানির মত পড়ে কিংবা পুঁজ পড়ে।
এ রকম সমস্যা দেখা দিলে জটিলতার আগেই একজন নাক-কান-গলার চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন বর্তমানে কানের পর্দার অবস্থা কী রকম, পর্দা কী ফুটো হয়েছে, না হয়নি।
এ ধরণের রোগে চিকিৎসক কান পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত এন্টি-হিস্টামিন; বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ; প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। আর যদি আপনি চুইংগাম খেতে পছন্দ করেন, তাহলে চিকিৎসক এর পরামর্শমতে চুইংগাম মুখে নিয়ে চিবাতে থাকুন আয়েশ করে। এটি চিকিৎসার অংশ হিসেবে কানের বন্ধভাব দূর করার খুব দ্রুত এবং সহজতম পদ্ধতি।
ঔষধের চিকিৎসার পরেও যদি ১২সপ্তাহে সমস্যার সমাধান না হয় তবে নাক-কান-গলা সার্জনরা একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ফুটো করে তরল পদার্থ বের করে থাকেন। যার নাম মাইরিংগোটমী।
সুতরাং এই ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করবেন না।
সুস্থ থাকুন জীবনকে উপভোগ করুন।
ডাঃ মোঃ আব্দুল হাফিজ শাফী
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।