পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের মরণফাঁদ ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিহারে পড়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার। তিনি গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ পুরোপুরি সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিবিসি’র উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে বিহার সরকারের পক্ষ থেকে একটি তালিকা তুলে দেয়া হয়েছে। এতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ হওয়ার আগে ও পরে বিহারে গঙ্গার গভীরতা বা নাব্যতা কতটা কমেছে তার হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গায় বিপুল পরিমাণ পলি জমছে। আর একারণে বিহারে প্রতিবছর বন্যা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়াই এর স্থায়ী সমাধান। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় তিনি আরো বলেছেন, আগে যেসব পলি নদীর প্রবাহে ভেসে বঙ্গোপসাগরে পড়ত, এখন ফারাক্কার কারণে সেটাই নদীর বুকে জমা হয়ে বন্যা ডেকে আনছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এ আহ্বানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রীর সাথে একটি দৈনিক থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, জেনে বুঝে এ বিষয়ে কথা বলবেন। এদিকে যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন একজন সাবেক সদস্য আলোচ্য দৈনিকটিকে জানিয়েছেন, নদীর ওপর বাঁধ দিলে তা যে শেষ পর্যন্ত হিতে বিপরীত হয়, তার প্রমাণ ফারাক্কা বাঁধ। তিনি আরো জানিয়েছেন, এই বাঁধ দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গার নাব্যতা বজায় রেখে কলকাতা বন্দর চালু রাখা। এই বাঁধের কারণে গঙ্গার ভাটি এলাকা বাংলাদেশে পানি কমে গেছে। এই সময়ে বাঁধের বিভিন্ন ফটকে পলি জমে এখন বিহারেও বন্যা হচ্ছে। এসব প্রতিক্রিয়ার কথা অনেক আগেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন। বাস্তবত এখন সমস্যা ঘটতে দেখে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা টের পেলেন ফারাক্কা কতটা তাদের ক্ষতি বয়ে আনছে এবং সঙ্গতকারণেই তারা বাঁধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বাংলাদেশে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সকলেরই জানা। এই বাঁধসহ ভারতের বৈরী পানি নীতির কারণে বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল অংশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নদ-নদীগুলো শুকিয়ে যাবার কারণে সাগরের নোনাপানি উপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। সুন্দরবন হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষিতে পানির সংকট ক্রমশ তীব্র হয়েছে। সুপেয় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদ-নদী নাব্য হারিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে বাংলাদেশে। মনে করা হচ্ছে, এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। বলা বাহুল্য, প্রতিবেশী ভারতের বৈরী পানি নীতির কারণেই বাংলাদেশ নানা ধরনের বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। এর শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালে ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ প্রতিষ্ঠা শুরু করেছিল। ১৯৭৫ সালে ভারত গঙ্গা থেকে প্রতিসেকেন্ডে ১ হাজার ১শ’ কিউবিক মিটার পানি হুগলিতে সরিয়ে নিতে ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল। যদিও ১৯৫১ সালেই ভারত গঙ্গায় বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কার্যত, ফারাক্কা হচ্ছে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের একটি বড় অংশ। বাস্তবতা হচ্ছে, ৪০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার কথা বলে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার পর থেকে ভারত কার্যত একতরফাভাবেই পানি প্রত্যাহার করে চলছে। একথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, খোদ ভারতেই অনেকদিন থেকে পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এধরনের বাঁধ নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করে আসছে। ব্যাপারটি শুধু ভারতেই নয়, বরং সারা দুনিয়াতেই নদ-নদীতে এধরনের বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে পরিবেশ রক্ষার বিবেচনা থেকেই। পরিবেশবিদদের এ আশংকা সত্য হলো বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। প্রকৃত বিবেচনায় এটি হচ্ছে, প্রকৃতির প্রতিশোধ। বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবেই পলি জমে এখন তা বিহারে বন্যার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশের জীবন-মরণ এ সমস্যা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই প্রতিবাদ মুখর হতে দেখা যায় নি। চুক্তি অনুযায়ী পানি না পেলেও সরকার কোন কথা বলে না। অথচ ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তার রাজ্যের ক্ষতি সম্পর্কে ঠিকই বলেছেন। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, বাঁধটি তুলে দিতেও বলেছেন।
ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। এক সময়ে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ফারাক্কাসহ বাংলাদেশের উজানে ভারত যেসব বাঁধ দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে সবগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারা রুদ্ধ করলে যে তা কোনো না কোনো সময় বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়, তা আজ ফারাক্কা বাঁধ বুঝিয়ে দিচ্ছে। এই বোধ থেকে ভারত যদি শিক্ষা নেয় তাহলে সকলের জন্যই তা মঙ্গলজনক। ভারতের যা চরিত্র তাতে সে নিজ উদ্যোগে এমনটা করবে তা আশা করা কঠিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ফারাক্কা বাঁধ তুলে নেয়ার আহ্বান নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। একে কাজে লাগাতে হলে এখনই দেশের মানুষকে সরব হতে হবে।
******************
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।